দেশবিরোধী ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী গণকমিশন দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। কথিত গণকমিশনের সাথে জড়িত কুলাঙ্গারদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশবিরোধী কথিত গণকমিশন কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই দেশের খ্যাতিমান আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তিহীন অভিযোগ দুদকে পেশ করেছে। অবিলম্বে এসব দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কথিত গণকমিশন আলেম ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে দুদকে কাল্পনিক, মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ গতকালও সমাবেশ, সভা ও বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, দেশের খ্যাতিমান ওলামায়ে কেরামদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ী বলে গালি-গালাজ করে দেশবিরোধী ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী গণকমিশন দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। ওলামায়ে কেরাম জাতির জাগ্রত বিবেক। ওলামায়ে কেরাম ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের পথনির্দেশ করেন। সমাজের সকল অনাচার, অন্যায় এবং ভুল থেকে ফিরিয়ে মানুষকে সৎপথে ও কল্যাণের পথে চলতে উদ্ধুদ্ধ করেন। ইসলামী আলোচকগণ ধর্মের বিশুদ্ধ বার্তা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়ার জন্য বহুমুখী ত্যাগ তিতিক্ষা করে থাকেন। এ সংস্কৃতি ধ্বংস করতে যারা কাজ করছে তারা আর যাই হোক, দেশপ্রেমিক হতে পারে না। তিনি বলেন, দুর্নীতি করে যারা নিজেদের কলাগাছ নয়, বটগাছে পরিণত করেছে এবং দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে, বিদেশে পাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। এতে সহজেই অনুমেয় যারা আলেম ও মাদরাসার বিরুদ্ধে কাজ করছে, তারা ইসলাম, দেশ ও মানবতার শত্রু। এদের বয়কট করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রামের রায়গঞ্জ হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, জাতির সূর্য সন্তান ওলামায়ে কেরামদের ধর্মব্যবসায়ী বলে নাস্তিক মুরতাদ গোষ্ঠী ওলামাদের অসম্মান করতে চায়। দেশবিরোধী ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, যাদের চরিত্রের ঠিক নেই, যারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছে, তারা ওলামাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে। তিনি ঐ সকল কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ওলামায়ে কেরাম এদেশে ভেসে আসেনি। ওলামাদের সাথে সম্পর্ক মাটি ও মানুষের। কাজেই সস্তা তালিকা করে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নামে অপমান অপদস্ত সহ্য করা হবে না। দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতা প্রয়োজনে জীবন ও রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ঘাদানিকের উদ্যোগে গঠিত গণকমিশন দেশের ১ হাজার মাদরাসা ও ১১৬ জন ইসলামী আলোচকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়েরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেছেন, গণকমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ দেশের আলেমদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করে দেশের মসজিদ মাদরাসা বন্ধ করে দিতে চায়। তাদের এই তালিকা মিথ্যা, বানোয়াট ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উলামায়ে কেরাম কখনোই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়।
তিনি বলেন, এ চক্রটি বরাবরই ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে সর্বমহলে খ্যাতি লাভ করেছে। সরকার এদের কথা বিশ্বাস করলে দেশে নতুন করে অশান্তির আগুন জ্বলবে। এরা সরকার ও আলেম সমাজের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করতে চায়। দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে আলেমসমাজ মাঠে নামলে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা পালাবার পথ খোঁজে পাবে না। আলেম সমাজ ছিল, আছেন এবং স্বসম্মানে থাকবেন ইনশাআল্লাহ। এদেশের ৯৫ মুসলমানদের ভালোবাসার পাত্র আলেম বিদ্বেষী ও ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, তথাকথিত কমিশনের তদন্তকে মূল্যায়ন করে কি করে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্বেতপত্রের মোড়ক উন্মোচন করা হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। উল্লেখিত তালিকা বাতিল করে আলেমদের স্বাধীনভাবে মসজিদ মাদরাসা পরিচালনা ও কোরআন সুন্নাহর বাণী প্রচার করার পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন
তথাকথিত গণকমিশন দেশের ১১৬ জন ওলামা মাশায়েখ ও ১ হাজার মাদরাসার বিরুদ্ধে দূরবিসন্ধিমূলক রিপোর্ট তৈরির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মজলিসে শূরার অধিবেশনে নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন, এটা দেশ, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। কাদের ইন্ধনে এবং কোনো ক্ষমতা বলে এ কমিশন গঠন করল জাতি জানতে চায়। আমরা মনে করি, এটা স্পষ্টত অনধিকার চর্চা এবং দেশের প্রচলিত আইনের লঙ্গন। অনতিবিলম্বে বিতর্কিত এ কমিশনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় দেশের ওলামা মাশায়েখ সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন।
শূরার অধিবেশনে নেতৃবৃন্দ, দেশ পরিচালনায় প্রায় সর্বক্ষত্রে সরকারের ব্যর্থতা, সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের সংস্কৃতির মোকাবিলায় ইসলামী গণবিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে আসার জন্য তৌহিদী জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল রোববার ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদ উল্যাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মজলিশে শূরার অধিবেশনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ শওকাত হোসেন, মওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমীন, ড. মাওলানা মুহাম্মদ এনামুল হক আজাদ, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কাজী আবু বকর সিদ্দীক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এ এম এম কামাল উদ্দীন ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।
জাতীয় তাফসীর পরিষদ
জাতীয় তাফসীর পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা মাকসুদুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব প্রিন্সিপাল মুফতী বাকিবিল্লাহ, মুফতী ওমর ফারুক যুক্তিবাদী ও হাফেজ মাওলানা নাযীর আহমাদ শিবলী গতকাল একযুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, ওলামায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে যে কোনো চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র দেশের ঈমানদার জনতা সহ্য করবে না। ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার তালিকা করে আলেমদের সমাজে অসম্মান করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। যারা তালিকা তৈরি করেছে, তারা নিজেরাই বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী ও তিরস্কৃত। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তুরিন আফরোজ বহিষ্কার হয়েছে। লজ্জা থাকলে আলেম ও মাদরাসার বিরুদ্ধে কথা বলত না। দেশে আইন আদালত থাকতে গণকমিশন গঠন কীভাবে হয়, গণকমিশন দেশের সংবিধানবিরোধী। দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে তথাকথিত গণকমিশন গণধৃকিত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, তুরিন ও মানিকদের কৃত অপরাধের বিচার আগে করতে হবে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী দেশের আইন আদালতের মাধ্যমে ওলামায়ে কেরামে কোনো অপরাধ থাকলে সেটা হবে। কিন্তু গণকমিশন গঠনের এখতিয়ার তাদের কে দিয়েছে? সেটা স্পষ্ট করতে হবে। মানিক ও তুরিনদের বিচার না করলে দেশে যে কোনো বিখৃঙ্খলার জন্য গণকমিশন দায়ী থাকবে।
জৈনপুরী পীরসাহেব
মাদরাসা ও দেশবরেণ্য আলেমদের বিরুদ্ধে গণকমিশনের দুদকে দাখিলকৃত মিথ্যা অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করে জৈনপুরী পীরসাহেব বলেছেন, বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম ইসলামের চির দুষমন, নাস্তিক, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণকমিশন দেশবরেণ্য ১১৬ জন ওলামা-মাশায়েখ ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন অভিযোগ (শ্বেতপত্র) দুদকে দাখিল করেছে। আমি জানতে চাই এরা কারা? এই গণকমিশন কোথা থেকে আসল? এদের পৃষ্ঠপোষক কে? আমি তথা সারা দেশবাসী এদের সম্পর্কে জানতে উদগ্রীব।
বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৯৩ জন ব্যক্তি মুসলিম এবং এরা সকলেই আলেম ওলামাদের ভক্ত। যে সকল আলেমদের ওয়াজ নসিহত শুনে দেশবাসী হেদায়াতের আলো পাচ্ছেন এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ তুলে দ্বীন প্রচারের কাজে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে এবং দ্বীনি প্রতিষ্ঠান, নবীজির ঘর মাদরাসার ক্ষতি সাধনে মেতে উঠেছে এক দল কট্টর মোনাফেক, নামে মাত্র মুসলমান। এই কমিশনের সদস্যদের নাম জনগণ প্রকাশ্যভাবে জানতে চায়। যদি আপনাদের ক্ষমতা থাকে, এই মিথ্যা অপবাদ প্রত্যাহার করে সত্যের মোকাবিলা করুন। অন্যথায় আপনাদের জনগণ ক্ষমা করবে না। যে দেশে সংবিধান ও আইন রয়েছে সেখানে এই তদন্তের অধিকার আপনাদের কে দিল? যা দেশ ও সরকারের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। যেই জৈনপুরী দরবারের বার্ষিক মাহফিলে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম শেখ হাফেজ আব্দুল্লাহ, কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান তশরিফ এনেছিলেন, এমনকি অত্র প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য স্থানীয় এমপি সাদেক খানসহ অনেকেই অত্র দরবারের শুভাকাক্সক্ষী রয়েছেন সেই জৈনপুরী দরবারের বিরুদ্ধেও কি করে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
এই ব্যক্তিরা জৈনপুরী পীর মাওলানা কারামত আলী সাহেবের উত্তরসূরিকে এ তালিকাভুক্ত করেছে যা কখনো কল্পনাও করা যায় না। যিনি সারা জীবন কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না বা নেই, যিনি সারা জীবনের হালাল রুজি দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অগণিত এতিম, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এবং আপামর জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন এমন একজন মহান সমাজ ও মানবসেবককে জঙ্গি সংগঠনের সহায়ক বা দেশবিরোধী কোনো কাজে জড়িত আছেন বলে আখ্যায়িত করার প্রয়াস যারা পেয়েছেন তাদের তওবা করে এ কাজ থেকে বিরত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। আল্লাহকে ভয় করুন নতুবা ভয়াবহ পরিণামের অপেক্ষায় থাকুন।
দেশ ও ইসলামপ্রেমিক জনগণ তাদের এই হীন ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতে দ্বিধা বোধ করবে না। স্মরণ রাখা উচিৎ যে, তসবির দানার মত এ দেশের ওলামায়ে কেরামগণ যেকোনো দুর্যোগে বা ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ রুখে দিতে একতাবদ্ধ ও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। অতএব, ইসলামবিদ্বেষীদের ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা নিশ্চিহ্ন ও ধূলিস্যাত করে দিতে আলেম ও ইসলাম দরদীরা বদ্ধপরিকর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন