বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল কিতাব ও আল হিকমাত : এতদপ্রসঙ্গে কিছু কথা-৩

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ১৭ মে, ২০২২

সূরা নিসা-এর ১১৩ নং আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আল কিতাব (আল কুরআন) এবং আল হিকমাত বা বিশেষ শ্রেণির প্রজ্ঞা ও জ্ঞানবত্তা নাজিল করেছেন বলে ঘোষণা প্রদান করেছেন। এ পর্যায়ে অবশ্যই অনুধাবন করা দরকার যে, হিকমাত বা বিশেষ প্রজ্ঞা বলতে কি বোঝানো হয়েছে। আসুন, এবার সে দিকে লক্ষ করা যাক। তবে, উল্লিখিত বিষয়টি সহজতর করে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে একে কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত করে আলোচনা করা দরকার। যথাÑ প্রথম স্তর: সূরা নিসা-এর ১১৩ নং আয়াতে হাবীবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, মহান রাববুল আলামীনের অনুগ্রহ ও কৃপা আপনার সঙ্গী না হলে কূটচক্রী অবিশ্বাসীর দল আপনাকে বিভ্রান্ত ও দিশেহারা করার পাঁয়তারা করত।

অথচ মহান রাব্বুল আলামীন ওহীর (আল কিতাব) মাধ্যমে আপনাকে সত্য ঘটনা বলে দিয়েছেন, মূল সত্যের পর্দা উন্মোচন করেছেন। তা এ জন্য যে, আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ ও কৃপা আপনার চির সাথী চির সঙ্গী। তাই কখনো অবিশ্বাসী চক্রান্তকারীরা আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এবং আপনাকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হবে না। বরং নিজেরাই পথভ্রষ্টতার অথই সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এমনকি তারা এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যে, সে অন্ধকার থেকে বের হওয়ার কোনো পথই খুঁজে পাবে না। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনার প্রতি ঐশী গ্রন্থ (আল কিতাব) এবং হিকমাত (প্রজ্ঞা ও জ্ঞানগর্ভ বিষয়াদি) নাজিল করেছেন, যা সম্পর্কে আপনি ইতঃপূর্বে অবগত ছিলেন না।

দ্বিতীয় স্তর : সূরা নিসা-এর ১১৩ নং আয়াতে আল কিতাব এবং আল হিকমাত শব্দদ্বয় উল্লেখ করে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল কিতাব হচ্ছে আল কুরআন, যা ওহী এবং যা আল্লাহ পাকের তরফ হতে প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি নাজিল করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হিকমাত বা প্রজ্ঞা ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ (জীবন দর্শন) ও আল্লাহ পাকেরই অবতারিত ও নাজিলকৃত।

তবে পার্থক্য এই যে, আল কিতাবের শব্দাবলি আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে সরাসরি ঘোষিত হয়েছে। আর হিকমাত বা সুন্নাহর (হাদিসের) শব্দাবলি আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে নয়, বরং তা বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়েছে। এ কারণেই হিকমাত, সুন্নাহ বা হাদিসের শব্দাবলি আল কুরআনের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে অবশ্যই আল কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ হাদিসের ভাব এবং তথ্যসমূহ আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকেই আগত এবং উভয়টির বাস্তবায়নই ওয়াজিব বা অপরিহার্য।

তৃতীত স্তর : স্মরণ রাখা দরকার যে, আল কিতাব ও আল হিকমাত উভয়টিই ওহী। আরবি ওহী শব্দটির অর্থ প্রেরণ করা, প্রত্যাদেশ করা বা ইঙ্গিত করা। হযরত জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে যুগে যুগে, কালে কালে বিভিন্ন নবী ও রাসূলগণের কাছে মানুষের জন্য উপযোগী উপদেশ সম্বলিত আল্লাহ পাকের অবতারিত ভাষণকেই ওহী বলে। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর যে সকল ওহী নাজিল করেছেন তা দু’প্রকার। যথা :

(ক) ওহীয়ে মাতলু অর্থাৎ পঠিত প্রত্যাদেশ। আরবি মাতুলু শব্দটির অর্থ যা তিলাওয়াত করা হয়েছে। এর দ্বারা কুরআনুল কারীম উদ্দেশ্য। এ প্রকার ওহী আল্লাহপাকের বাণী বাহক ফিরিশতা হযরত জিব্রাঈল (আ.) নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যার অর্থ ও শব্দাবলি উভয়টিই আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে অবতারিত। এক্ষেত্রে যে যে শব্দ ও বাক্যে ওহী নাজিল হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ (সা.) হুবহু বহাল রেখেছেন। সালাত বা নামাযে কেবল এ প্রকার ওহী-ই-তিলাওয়াত করা হয়।

(খ) ওহীয়ে গায়রে মাতলু বা অপঠিত প্রত্যাদেশ। এ প্রকার ওহী হিকমাত অর্থাৎ সুন্নাহ তথা হাদিস। এর শব্দাবলি রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে কিন্তু এর ভাব ও মর্ম মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে। এ ধরনের ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত মূল বক্তব্যকে বা ভাবকে নিজ ভাষায় প্রকাশ ও উপস্থাপন করার অধিকার আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রদান করেছিলেন। এটিই হলো ওহীয়ে গায়রে মাতলু বা অপঠিত ওহী। এ ধরনের ওহী নামাযে তিলাওয়াত করা যায় না।

ওহীর বিশেষত্বকে আল কুরআনে এভাবে বিবৃত করা হয়েছে : ‘এটি (ওহী) সৃষ্টিকুলের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত। যদি সে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার নামে কোনো মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিণ্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না। আর এটি তো মুত্তাকীদের জন্য এক নিশ্চিত উপদেশ। (সূরা হাক্কাহ : ৪৩-৪৮)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
রফিক নেওয়াজ খান ১৭ মে, ২০২২, ৫:৫৩ এএম says : 0
হিকমাত শব্দটি যদি সুন্নাহ বুঝায়, তবে তা নবিজী মারা যাওয়ার ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পর কেন লিখা হইলো? কেন তাঁর জীবিত অবস্তায় লিখা হয়নি?২৫০ - ৩০০ বছর পর সংগ্রহ কতটুকু মূল সত্য ধারণ করবে?
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ১৭ মে, ২০২২, ৫:৫৩ এএম says : 0
যাবতীয় বিষয় বস্তুকে সঠিক জ্ঞান দ্বারা জানাকে হিকমাত বলে। সংক্ষেপে প্রজ্ঞা, মনীষা, বুদ্ধিমত্তা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, অন্বেষা, বহু দর্শিতা, সু²দৃষ্টি ইত্যাদিকেও হিকমাতের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরে নেয়া যায়। মহান রাব্বুল আলামীন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা. কে হিকমাতের ষোলআনা গুণে বিভ‚ষিত করেছিলেন। যার সঠিক চিত্র তিনি আল কোরআনে এভাবে তুলে ধরেছেন।
Total Reply(0)
Km Faruk ১৭ মে, ২০২২, ৫:৫৩ এএম says : 0
মহান রাব্বুল আলামীন কোরআনুল কারীমে ‘হিকমাত শব্দটি বারটি সূরায় সর্বমোট ২০ বার উল্লেখ করেছেন। এই শব্দটির অর্থ ও মর্ম এত বিশাল ও বিস্তৃত যে, সে মহাসাগরে ডুব দিয়ে তা হতে মণি-মুক্তা ও হীরা জহরত আহরণ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। তারপরও আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে সে পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করব। কেননা তিনি আর রাহমানুর রাহিমিন।
Total Reply(0)
M H Miru Bd ১৭ মে, ২০২২, ৫:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহ তো শুধুমাত্র কোরআন নাজিল করেন নাই সাথে হিকমাহও নাজিল করেছেন। মূলত আল্লাহ দুটো জিনিস নাজিল করেছেন। ১. কিতাব ও ২. হিকমাহ। যার প্রমাণ আপনি পাবেন সূরা নিসার-৪/১১৩ নং আয়াতে। সূরা নিসা-৪/ ১১৩> وَ اَنۡزَلَ اللّٰہُ عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি কিতাব এবং হিকমাহ
Total Reply(0)
Ariyan Khan Sohel ১৭ মে, ২০২২, ৫:৫৪ এএম says : 0
আল্লাহ কুরআনের পাশাপাশি হিকমত নাজিল করেছেন আর হিকমত যে রাসূল সাঃএর হাদিস তাতে কারও কোন সন্দেহ নেই। কুরআনের বর্ণিত আয়াতগুল সরাসরি জিব্রাঈল আঃএর মাধ্যমে এসেছে,কিন্তু হিকমাত হল রাসূল সাঃএর প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা ইলহাম। যা আল্লাহ কোন ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া নাযিল করেছেন।
Total Reply(0)
Taslim Khandaker ১৭ মে, ২০২২, ৮:৫৫ এএম says : 0
Nice
Total Reply(0)
Taslim Khandaker ১৭ মে, ২০২২, ৮:৫৫ এএম says : 0
good Write
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন