শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খোলাবাজারে ডলারের ‘সেঞ্চুরি’

একদিনেই ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি দেশের ইতিহাসে প্রথম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২২, ১২:০৪ এএম

খোলাবাজারে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। এবার সব রেকর্ড ভেঙ্গে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। খোলা মুদ্রাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম প্রথমবারের মতো ১০০ টাকা ছাড়াল। একদিকে দাম বাড়লেও বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার পাওয়া যাচ্ছে নাএ গতকাল মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ডলারের দর উঠেছে ১০২ থেকে ১০৩ টাকায়। অথচ গত সোমবারও খোলাবাজারে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়। একদিনের মধ্যেই ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি দেশের ইতিহাসে প্রথম। রাজধানীর অন্যতম বড় একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল থেকে ১০২ টাকা দরে ডলার কিনছি এবং ১০৩ দশমিক ৫৯ টাকা দরে বিক্রি করছি। অধিকাংশ কার্ব মার্কেট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০২ টাকা দিতে হয়েছে। এর আগে কখনো ডলারের দর ১০০ টাকা অতিক্রম করেনি। বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলারের চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় এবং সরবরাহে সঙ্কট হওয়ায় এভাবে বাড়ছে ডলারের দাম। অথচ আগের দিন সোমবারও ৯৭-৯৮ টাকা দরে ডলার কেনাবেচা হচ্ছিল। দাম বাড়লেও এদিন বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মানি এক্সচেঞ্জ কর্মীরা। এদিকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেই চলছে। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবারও ৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১২ মে পর্যন্ত) ৫১০ কোটি (৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৪৪ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না।

ডলার নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সমাধানে হাত দেয়নি সময়মতো। তাই আগেভাগে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ডলারের দামের বিষয়ে পল্টনের ক্যাপিটাল এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ১০০ দশমিক ৫০-১০১ টাকা করে ডলার কিনেছেন। বিপরীতে বিক্রি করেছেন ১০১ দশমিক ৮০ থেকে ১০২ টাকা। আগের দিন ৯৭-৯৮ টাকা করে ডলার কেনাবেচা করেছি। তিনি বলেন, দাম বাড়লেও বাজারে ডলার খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। অল্প কিছু ডলার কেনাবেচা হচ্ছে। এবার ডলারের দাম কোথায় গিয়ে থামবে এবং কতদিন এ পরিস্থিতি থাকবে তা আমরাও বুঝতে পারছি না।

আবুল বাশার নামে মানি এক্সচেঞ্জের এক মালিক বলেন, ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু। হজকে কেন্দ্র করে ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে ডলারের যোগান অনেক কম। ডলারের দাম বাড়ার জন্য এটা একটা বড় কারণ। এ পরিস্থিতি থাকলে সামনে ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, ডলার এখন ১০২ টাকা দিয়ে পাচ্ছি। আগামীকাল এই দামে না পেতে পারেন। ডলারের বাজার পরিস্থিতি ভালো না। হুটহাট দাম বাড়ছে। যা শুরু হয়েছে, তাতে ডলারের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল।

সূত্র মতে, আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স কমাসহ বিভিন্ন কারণে ডলারের ব্যাপক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ এখন ৪১ বিলিয়র ডলারের ঘরে নেমেছে। আমদানি দায় মেটাতে এখন ৯৭ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনতে হচ্ছে, যার প্রভাবে পণ্যমূল্য ব্যাপক বাড়তে পারে। অথচ গত ১২ মে পর্যন্ত ডলারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তবে আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রায় ১৭ শতাংশ কমে যাওয়া এবং উচ্চ আমদানি প্রবৃদ্ধির কারণে ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।

গত সোমবার ৯৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছিল। এদিন দেশের ইতিহাসে টাকার মান নেমে গেছে রেকর্ড পরিমাণে। একদিনে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে ৮০ পয়সা। যদিও আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা, ২৩ মার্চ আরও ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়।

ব্যাংকে ডলার লেনদেন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা মঙ্গলবার ৯২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকও ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছে। যদিও ব্যাংকে গেলেই বলা হচ্ছে ডলার নেই।

এদিকে ডলারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম এক হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৬৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৭০৮ টাকা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৩৯৯ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৫ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৬৩ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি, এ কারণে ডলারের উপর চাপ পড়েছে। বাজার বিবেচনা করে ডলারের রেট ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, রফতানি বাড়ছে, ঈদের সময় রেমিট্যান্স ২০০ মিলিয়ন এসেছে। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। তবে আশার কথা আমাদের রফতানি বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের আমদানিতে গড় মার্জিনসহ আমরা বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Harunur Rashid ১৮ মে, ২০২২, ৮:৩২ এএম says : 0
Looks like soon it will become like Pakistan. I hope and pray that it does not happen.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন