বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফের ভয়াবহ পানিবদ্ধতার আশঙ্কা

ভবদহবাসীর কান্না থামছে না

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

গত বছরের পানিবদ্ধতার ক্ষত এখনও ম্লান হয়নি। অনেকের উঠানে এখনও পানি, স্কুল-কলেজের মাঠগুলো ব্যবহার অনুপযোগি, সড়কসমূহ চলাচলের অযোগ্য, বিলগুলোতে অদ্যবধি কোমর পর্যন্ত পানি। একের পর এক আন্দোলন, প্রতিশ্রুতি আর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ভবদহবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের ফুলঝুরি। সবই যেন বজ্র আটুনি ফস্কা গোরো। এর মাঝে ফের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। মাস পেরোলেই বর্ষাকাল। দিন পার হলেই যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহ অধ্যুষিত লাখ লাখ মানুষের উৎকন্ঠা বেড়েই চলেছে। এবার তাদের দূর্গতি আরও ভয়াবহ হবে এমনটাই দাবি করেছেন তারা। এক যুগের অধিক সময় পানিবদ্ধতায় নিমজ্জিত এ অঞ্চলের হাজার হাজার বিঘার কয়েকটি বিলে ফসল ফলাতে ব্যর্থ তারা। ফলে সব হারানো এ বৃহৎ অঞ্চলের মানুষের কান্নার যেন শেষ নেই।
তারা জানান, আমাদেরকে নিয়ে বড় বড় নেতা, মন্ত্রী, এমপি এবং পাউবো রীতিমত ব্যবসা খুলে বসিছে। বছরের পর বছর ধরে আমরা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বাস্তবায়নের দাবি জানায়ে আসতিছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনা। তারা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরাতি ব্যস্ত। গত বছর সেচ প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা খরচ হলিও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবারও শুনিছি প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাস করাতি পাউবো উঠে পড়ে লাগিছে। কিন্তু সেচ প্রকল্পে কিছুই হবেনা। পকেট ভারী হবে পাউবোর কর্মকর্তা আর কয়েকজন নেতার। আমরা যেন খেলার পুতুল হয়ে গেছি। এবারও আমাগে পানিতে ডুবে মরতি হবে।
ভুক্তভোগীসহ ভবদহ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় গঠিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মতে, নদীতে টিআরএম বাস্তবায়ন করতে পারলে ভবদহের লাখ লাখ লোক পানিবদ্ধতার হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতো। এ দাবিতে যুগ যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছে বেশকিছু সংগঠন ও পানিবদ্ধতার শিকার ভুক্তভোগী লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু অদ্যবধি টিআরএম বাস্তবায়ন হয়নি। উপরোন্ত টিআরএম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্বার্থান্বেষী একটি প্রভাবশালী মহলের হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাউবো কর্মকর্তারা। তারপর থেকেই টিআরএম বাস্তবায়নে পাউবো কর্তাদের অনীহা দেখা দিয়েছে। গতানুগতিক সেচযন্ত্রের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান দেখছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। আর এ কারণে দীর্ঘ দেড় যুগেও টিআরএম বাস্তবায়নের পথে বাঁধাগুলো চিহ্নিত করে প্রকাশ করা হয়নি বা কারণ অনুসন্ধান করা হয়নি। ফলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে পাউবোর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, টিআরএম এর মাধ্যমে পরিকল্পিত উপায়ে নদীগুলোতে জোয়ার-ভাটা চালু হয়। জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নির্দিষ্ট বিলে পড়ে। ফলে বিল উঁচু হয়। পাশাপাশি ভাটায় স্বচ্ছ পানির স্রোতে নাব্যতা ফিরে পায় নদীগুলো। এছাড়া দর্শনায় মাথাভাঙ্গা-পদ্মার সাথে ভৈরব নদের সংযোগ পুণঃস্থাপিত করে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার করতে পারলে নদীগুলো প্রবাহ ফিরে পাবে। নিরসন হবে পানিবদ্ধতার।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, পানিবদ্ধতায় অতিষ্ঠ হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে টিআরএম চালু করেন। নদী সংলগ্ন বাঁধের নির্দিষ্ট এলাকা কেটে বিলে পানি ও পলি ঢুকতে দেয়ার ব্যবস্থা করেন তারা। এরফলে বিলের মধ্যে পলি পড়ে বিল উঁচু হয় এবং নদীগুলো নাব্যতা ফিরে পায় ও পানিবদ্ধতাও দূর হয়। এরপর একাধিকবার টিআরএম এর ব্যবস্থা করে পাউবো। সর্বশেষ ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টিআরএম চালু ছিলো। তখন এমন তীব্র পানিবদ্ধতা দেখা যায়নি।
পাউবোর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ২০ টি সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ চলছে। প্রতিটি সেচযন্ত্রের ক্ষমতা ৫ কিউসেক। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচ সফল হয়েছে। হরিনদে দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত নাব্যতা বেড়েছে। বড় পরিসরে সেচের কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য ৪৫ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন