বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফেরির চেয়ে খরচ বেশি

পদ্মা সেতুতে যানবাহনের টোল কমানোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

পদ্মা সেতু চলতি বছরের জুনেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এখন উদ্বোধনের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজও চলছে। এরই মধ্যে সেতু পারাপারে পরিবহনের টোল হার নির্ধারণ হয়েছে। পদ্মা সেতুর টোল আদায়কারী ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ করেছে সেতু বিভাগ। এ কাজ পেয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। তবে এরই মধ্যে সেতু পারাপারে পরিবহনের টোল হার নির্ধারণ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোল হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নানা জল্পনা-কল্পনার পরে পরিবহন পারাপারে দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় নৌরুটে যাতায়াতকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কিছু পরিবহন চালক এতে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও নৌপথের দুর্ভোগ এড়াতে দ্রুত যাতায়াত হিসেবে এই টোলকে ইতিবাচক হিসেবেও দেখছেন অনেকে। তবে টোলের মূল্য আরও একটু কম হওয়ার দাবি সচেতন মহলের। এতে দেখা গেছে, ফেরির চেয়ে সেতুতে গুনতে হবে বেশি টাকা ।

পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য সরকার ঘোষিত যানবাহনের টোল কমানোর দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপে নির্মিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণের প্রহর গুনছে, তখন সেতু পারাপারে নির্ধারিত অস্বাভাবিক টোলের হার জাতিকে হতাশ করেছে। সাধারণ জনগণের আর্থিক সঙ্গতির কথা বিবেচনায় নিয়ে টোল হার নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় বিবৃতিতে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে নির্ধারিত টোল হারকে অসহনীয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িসহ যাত্রী এবং পণ্যবাহী সব ধরনের যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত টোল সাধারণ মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেবে। সেতু বিভাগের এই সিদ্ধান্তের কারণে জনগণের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠবে।

নদ-নদী, নৌ-যোগাযোগ, গণপরিবহন, পরিবেশ ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, উচ্চহারের এই টোল পদ্মা সেতু ব্যবহারকারী যাত্রীদের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে; যার খেসারত দিতে হবে সারাদেশের সব শ্রেণির মানুষকে। আগামী মাসে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেই টোলের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণ করে সরকার সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় বিবৃতিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, মোটরসাইকেল প্রতি ভাড়া নিই ৭০ টাকা সেখানে সেতুতে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৫০০ টাকা সেখানে সেতুতে ৭৫০ টাকা, পিকআপে ৮০০ টাকা তা সেতুতে ১২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ৯৮০ টাকা সেখানে সেতুতে ১৩০০ টাকা, ছোট বাসে ৮৬০ টাকা সেখানে সেতুতে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ১২০০ টাকা সেখানে সেতুতে ২০০০ টাকা, বড় বাসে ১৭১০ টাকা, সেখানে সেতুতে ২ হাজার ৪০০ টাকা, ছোট ট্রাকে (৫ টন) ১৪০০ টাকা সেখানে সেতুতে ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫-৮ টন) ১৮৫০ টাকা সেখানে সেতুতে ২১০০ টাকা, বড় ট্রাকে (৩-৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৫৬০০ টাকা, সেখানে সেতুতে ৬০০০ টাকা নেয়া হয়। এতে ফেরির তুলনায় সেতুতে একটু বেশি খরচ পড়বে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে প্রায়ই ঘাটে এসে যানজটে পড়ে থাকতে হয়। এ যানজট দেখা যায় কোন কোন সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা নয় দিনের পর দিনও থাকতে হয়। ফলে সময় ও অর্থ দুইই ক্ষতি হয়। এ সেতু চালু হলে যাতায়াত করতে পারবো দ্রুত। তবে যাত্রীদের ভাড়ার পরিমাণ একটু বেড়ে যাবে। ফেরির সঙ্গে সেতুর টোল মূল্য মিল রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু ফেরির চেয়ে প্রতিটি যানবাহনে মূল্য ধরা হয়েছে বেশি। বিষয়টি ঠিক হয়নি। সেতুর জন্য নির্ধারিত টোলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করবে সেতু ও সড়ক বিভাগ। এমনটাই আশা করেন তারা।

এ রুটে নিয়মিত যাত্রীরা বলেন, ফেরির চেয়ে সেতুতে টোল বাড়ানো ঠিক হয়নি। পদ্মা সেতু হয়েছে এটা খুবই ভালো দিক তবে টোলের যে হার এতে আগামীতে চলাচল নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিবে দ্বিগুণ। আমাদের যাতায়ত ব্যয়ও বেড়ে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন