মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিলাসী পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করল পাকিস্তান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২২, ১০:৩৬ পিএম

মহামারি আর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেখা দেওয়া গভীর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তানের সরকার ‘জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা’র আওতায় ৩৮টি অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বৃহস্পতিবার দেশটির তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই ঘোষণা দিয়েছেন।

ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন। এর কিছুক্ষণ পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ টুইটারে এক বার্তায় বলেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাবে।

তিনি বলেন, আমরা মিতব্যয়িতার চর্চা করবো এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিদের এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে, যাতে আমাদের মধ্যে কম সুবিধাপ্রাপ্তদের পিটিআই সরকারের চাপিয়ে দেওয়া এই বোঝা বহন করতে না হয়। আমরা সমাধান এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবো।

ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ঐতিহাসিক পতনের দিনে বৃহস্পতিবার দেশটির সরকার অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ডলারের বিপরীতে রুপির মান ছিল ১৯৮ দশমিক ৩৯; কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই মান ২০০ ছাড়িয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে দেশটির তথ্যমন্ত্রী জাতিকে আশ্বস্ত করে বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে দিনরাত কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আওরঙ্গজেব বলেন, নতুন পরিকল্পনার আওতায় সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্য-সামগ্রী আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেসব পণ্যের
১. গাড়ি ২. মোবাইল ফোন ৩. গৃহস্থলি আসবাবপত্র ৪. ফলমূল এবং শুকনো ফল (আফগানিস্তান ব্যতীত) ৫. ক্রোকারি ৬. ব্যক্তিগত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ৭. জুতা ৮. ঝাড়বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাল্ব ৯. হেডফোন ও লাউডস্পিকার ১০. সস ১১. দরজা জানালার ফ্রেম ১২. ভ্রমণের ব্যাগ এবং স্যুটকেস ১৩. প্রসাধন সামগ্রী ১৪. মাছ ১৫. কার্পেট ১৬. তাজা ফল ১৭. টিস্যু পেপার ১৮. ফার্নিচার ১৯. শ্যাম্পু ২০. মিষ্টান্ন ২১. বিলাসবহুল তোষক ও স্লিপিং ব্যাগ ২২. জ্যাম ও জেলি ২৩. কর্নফ্লেক্স ২৪. টয়লেট সামগ্রী ২৫. হিটার, ব্লোয়ার ২৬. সানগ্লাস ২৭. রান্নাঘরের জিনিসপত্র ২৮. সোডা পানি ২৯. হিমায়িত মাংস ৩০. জুস ৩১. পাস্তা ৩২. আইসক্রিম ৩৩. সিগারেট ৩৪. শেভিং পণ্য ৩৫. বিলাসবহুল চামড়ার পোশাক ৩৬. বাদ্যযন্ত্র ৩৭. সেলুনের পণ্যসামগ্রী। যেমন হেয়ার ড্রায়ার ইত্যাদি ৩৮. চকোলেট।

তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন, দেশে বর্তমানে অত্যন্ত জরুরি পরিস্থিতি চলছে। পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মেনে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে।

তিনি বলেন, আমদানির বিপরীতে ইতোমধ্যে যেসব ঋণপত্র উন্মুক্ত অথবা মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে, সেগুলো আমদানি করা যাবে। তবে নতুন করে আর কোনও আমদানি আদেশ নেওয়া যাবে না।

পাকিস্তানের এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। সরকার এখন রপ্তানির দিকে মনোনিবেশ করছে। সরকারের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আওতায় স্থানীয় শিল্পের উন্নতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, নতুন এই পদক্ষেপ চলমান নগদ ঘাটতির ওপর প্রভাব ফেলবে। এই পদক্ষেপ জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভোক্তাদের ওপর জ্বালানির দামের প্রভাব কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে আজ আরও পরের দিকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ডলারের বিপরীতে ঐতিহাসিক পতন ঘটেছে পাকিস্তানি রুপির। দেশটির মুদ্রাবাজারে ১ ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ২০০ রুপি। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ডলারের বিপরীতে রুপির মান ছিল ১৯৮ দশমিক ৩৯। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই মান ২০০ ছাড়িয়ে যায়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে নিজেদের মুদ্রার এই পরিমাণ পতন দেখেনি পাকিস্তান। চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ৬০০ কোটি ডলারের তহবিলের জন্য যখন পাকিস্তানের সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে তদবির করছে, সে সময়েই ঘটল মুদ্রার এই দরপতন।

২০১৮ সাল থেকেই অর্থনৈতিক সংকট চলছে পাকিস্তানে। করোনা মহামারিতে তা আরও তীব্র হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র দেড় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলার মজুত আছে। সূত্র: ডন, জিও নিউজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২০ মে, ২০২২, ১০:৫৫ এএম says : 0
Allah didn't create human being to immerse in consumerism, consumerism destroy human society because in order to indulge consumerism people become absolutely corrupt in order to acquire money in unlawful way. Consumerism also destroy the whole world because the industry pollute the enviroment.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন