বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পাল্টে গেছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পরিবেশ

পরিচালক বি.জে. নাসির উদ্দিনের প্রচেষ্টা

মো. শামসুল আলম খান : | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রায় এক বছর আগে নাকে রুমাল দিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ। ওই সময় হাসপাতালের গাইনী বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে পা ফেলতেই নাকে এসে লাগতো দুর্গন্ধ। কিন্তু এখন পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের তৎপরতায় আঁশটে গন্ধের মাত্রাও কমে এসেছে।
বছর খানেক আগেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ভাগ্যে জুটতো না মানসম্মত খাবার। খাবার সরবরাহে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের পকেটে চলে যেতো বরাদ্দকৃত টাকার বেশিরভাগ অংশ। কিন্তু এখন আর ডালের সঙ্গে বেশি পানি মিশানো হয় না। এক টুকরো মাংসকেও কয়েক টুকরো করা হয় না। তিন বেলাই ভর্তিকৃত রোগীদের দেয়া হচ্ছে ভাল খাবার।
দুর্নীতিবাজ চক্র সিন্ডিকেট করে হাসপাতালের ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করে দিতো। আর এখন হাসপাতালের প্রতিটি দেয়ালে ওষুধ সরবরাহের কথা জানান দেয়া হয়েছে। অপারেশনের জন্য এখন আর বাইরে থেকে হাজার হাজার টাকার ওষুধ কিনে আনতে হয় না। হাসপাতালে এখন ওষুধের নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে।
পরিবর্তনের এসব খ- খ- চিত্র ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের। হাসপাতালের ঘাটে ঘাটে সিন্ডিকেটের দৌরাতেœ অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল এ হাসপাতাল। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। রোগী বান্ধব হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন এসব পরিবর্তনের কারিগর।
যোগদানের প্রায় এক বছরের মাথায় তার নেতৃত্বে তলানিতে গিয়ে ঠেকা এ হাসপাতালের ইমেজ পুনরুদ্ধার হচ্ছে। অহংকারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে ৫৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতাল। সমস্যা আর অনিয়মকেই সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন তিনি।
সুবিধাভোগী বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও ব্যক্তিগত দৃঢ়তা, সাহস ও মূল্যবোধ দিয়ে এ হাসপাতালের রন্ধে রন্ধে থাকা অনিয়মের শেকল ভাঙার চেষ্টা করছেন। তার কড়া নজরদারি, কঠোর তদারকির ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও ফিরে এসেছে।
হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রামের চম্পা বেগম জানান, প্রায় দু’বছর আগেও একবার ভর্তি ছিলেন একই ওয়ার্ডে। সে সময় এ ওয়ার্ডে গন্ধে টেকা যেতো না।
আঁশটে গন্ধ আর রক্ত ভরে থাকতো ওয়ার্ডে। এখন ওয়ার্ডে অনেকটাই পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরে এসেছে। তবে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা না বাড়ার কারণে বেশিরভাগ রোগীকে এখনো মেঝেতেই গাদাগাদি করে থাকতে হয় বলে জানান তিনি।
বছরখানেক আগে হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে যোগদান করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন অনিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম চালু করেন। তার সময়েই হাসপাতালে প্রথমবারের মতো নিউরোসার্জারী ওয়ার্ড চালু হয়েছে। এখান থেকে এ পর্যন্ত ৫৫ জন রোগীর মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে।
দালালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন হাসপাতালের রোগীরা। এখন দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাতœ কমেছে, জানান হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর স্বজনেরা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালে অবাঞ্ছিত লোকজন ও বহিরাগতদের ঠেকাতে এটেনডেন্স ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এক্সরে বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং ৩৬ লাখ টাকা খরচ করে দু’টি অত্যাধুনিক আলট্রাসাউন্ড মেশিন কেনা হয়েছে।
জরুরি বিভাগ সূত্র জানায়, হাসপাতালে আগে প্রতিদিন ১ হাজার ৭’শ থেকে ১ হাজার ৮’শ রোগী ভর্তি থাকতো। এখন সেবার মান বাড়ার ফলে গড়ে ২ হাজার ৪’শ রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।
সততা, দক্ষতা ও আন্তরিক কর্মপ্রয়াস দিয়ে গোটা হাসপাতালে একটি শক্তিশালী টিম ওয়ার্ক স্থাপনেরও চেষ্টা করছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন। এসব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার একার পক্ষে সব পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
এখনো হাসপাতালে ক্যাথল্যাব, ডায়ালাইসিস মেশিন নেই। এম আর মেশিন ও সিটি স্ক্যান মেশিন ১০ বছরের পুরানো। রেডিও থেরাপি মেশিন নিয়ে লাল ফিতার খেলা চলছেই।
তিনি বলেন, এ হাসপাতালকে একটি সম্পূর্ণ সেবা বান্ধব হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব। যদি না পারি উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়ে সেনাবাহিনীতে ফিরে যাব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন