শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাদরাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না

গণকমিশনের আইনি ভিত্তি নেই সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের সমন্বয়ে গঠিত ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত গণকমিশন’ এর আইনি ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের ২৭তম বার্ষিক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণকমিশন কাদের নামে সন্ত্রাসের ও দুর্নীতির দায় দিয়েছেন, এগুলো আমরা কেউই কোনো তদন্ত করিনি। গণকমিশনকে ইস্যু করে কোনো পক্ষ বিশৃঙ্খলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর দেশের মাদরাসাগুলোতে দ্বীনি শিক্ষা দেয়া হয়, সেখানে কোনোদিন জঙ্গি তৈরি হতে পারে না।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এর আগে তারা ‘২০০৩ এ সন্ত্রাস নামে একটি বই প্রকাশ করেছে। বইয়ের ভেতরে কী লিখেছে, তা জানি না। তারা কাদেরকে সন্ত্রাসী বলছে এবং দুর্নীতির দায় কার উপর দিয়েছে এগুলো তদন্ত করিনি। কিন্তু তারা দিয়েছেন। না দেখে বলতে পারব না, ওই বই পড়ে বলতে হবে।
গণকমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে নামার ঘোষণা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ আইন হাতে নিলে আমাদের যা করনীয়, সেটাই করব। এটা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি। অভিযোগের কোনো প্রমাণ না থাকলে সে অভিযোগ আমলে নেয়া হয় না।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্বজয়ী হাফেজদের সংবর্ধনা ও জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা-২০২২ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদরাসাতে দ্বীনি শিক্ষা দেয়া হয়, সেখানে কোনোদিন জঙ্গি তৈরি হতে পারে না। যখন সন্ত্রাসী-জঙ্গি আক্রমণে দেশ স্থবির হয়ে পড়েছিল; তখন আমরা অসংখ্য জঙ্গি ধরেছি। সেখানে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের খুব কম সংখ্যক জঙ্গি পেয়েছি।
মাদরাসা পড়ুয়া দু’একজন ছাত্র বিপথগামী হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মাদরাসাগুলোতে জঙ্গি তৈরি হয় না, এখানে দ্বীনি শিক্ষা দেয়া হয়। আমরা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বের অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ভ্রমণ করেছি। বাংলাদেশের মতো এতো ধর্মপ্রাণ মুসলমান কম দেশে দেখেছি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের মসজিদগুলোতে দিন দিন মুসুল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন যে পরিমাণ মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান আগে এত পরিমাণ মুসুল্লি মসজিদে যেতেন না। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আলেম-ওলামাদের খেদমত আর প্রচার প্রচারণার কারণে।

অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল, বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন, ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আগা খান মিন্টু, হাটহাজারী মাদরাসা মহাপরিচালক আল্লামা ইয়াহইয়া প্রমুখ।

উল্লেখ্য, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গঠন করা হয় ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’। কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্যসচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। গত ১১ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার কাছে তারা শ্বেতপত্র ও ১১৬ আলেমের তালিকা হস্তান্তর করেন। শ্বেতপত্র ও তালিকাটি একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও দেয়া হয়। এতে ইসলামী বক্তা ও আলেমদেরকে ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ আখ্যা দিয়ে ২২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদনের ৭৬০ ও ৭৬১ পৃষ্ঠায় ১১৬ আলেমের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এই নাম প্রকাশের পর সারাদেশে বিতর্ক ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। দেশের আলেম সমাজ এবং সাধারণ মানুষ তথাকথিত ওই গণকমিশনকে ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে অবিহিত করে প্রতিবাদ করছেন।

এদিকে ইসলামিক কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান মমতাজীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে ঘাদানিকের ‘গণকমিশনের’ শ্বেতপত্র বাতিল ও মিথ্যা প্রনয়নকারীদের শাস্তি দাবি করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। মন্ত্রী এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের আশ্বাস দেন।

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন দেওনার পীর সাহেব অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, ফোরামের সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মো. নাজমুল হক, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মুফতি মাসুম আহমাদ, মুফতি ওয়াহিদুল আলম, মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম, মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মাওলানা আবুল কাসেম আশরাফী, আলহাজ্ব সৈয়দ তাসাদ্দেক হোসেন, হাজী ফজলুল হক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মাওলানা মো. নাজমুল হক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন