শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যার্তদের পাশে নেই সিলেটের ধনাঢ্যরা

ফয়সাল আমীন সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রাচুর্য্যরে নগ্ন্নতা দেখিয়ে দিলো সিলেটের বন্যা। বন্যার ভয়াবহতা গোটা সিলেটজুড়ে। বোবা কান্না করছে মানুষ। চোখের ভাষা, মুখের ভাষা নিমিষে হারিয়ে গেছে বন্যার পানির অপ্রত্যাশিত আঘাতে। আর কত কষ্ট সহ্য করলে তাকে বলি দুঃখ। সেই দুঃখ এখন সিলেটবাসীর ললাটে। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের প্রথম কথিত ‘স্মার্ট সিটি’ সিলেটের বুক। অথচ এই নগরীকে সাজাতে প্রকল্পের পর প্রকল্প। সৌন্দর্যবর্ধনে কত কিছু। সবই গোল্লায় গেছে বন্যার পানিতে। অসহায়ত্ব কাকে বলে এখন হাড়ে হাড়ে ঢের পাচ্ছে সিলেটের মাটি ্ও মানুষ।

অপরদিকে এই শহরে বিলিয়নারের অভাব নেই। দেশে বিদেশজুড়ে তাদের ব্যবসা। সিআইপ-ভিআইপিদের রাজত্ব। শিল্পপতি ধনকুবের অস্যংখ্য এই নগরীতে। সেই সাথে ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যে সিলেটি ধনিকদের ডামাডোল। অর্থ সম্পদের প্রচাচুর্য্যতা দেখাতে এই শহরের গড়েছেন আলিশান প্রাসাদ। শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে রাজপ্রাসাদের রূপ দিতে একটু কাপর্ন্য করেননি তারা। সেই প্রাসাদে দর্শনার্থীদের স্রোত দেখা যায় হরহামেশা। এতে তৃপ্তি হাসি তাদের মুখে। সেই ধনিকদের বিনিয়োগ রয়েছে সিলেটের বিভিন্ন খাতে। কথিত সেবা ও বিনোদন খাতে রয়েছে অর্থের ছড়াছড়ি। এমনকি রাজনীতিক উচ্চবিলাশী নেতাদের পেছেনে ঢালেন অর্থ। নিরবে বিনিয়োগ করে যান সুবিধা প্রাপ্তির নানা স্বপ্নে। এতে সিলেটে রাজনীতিক কোটিপতিদের সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না।

কিন্তু মানুষের দূযোর্গে-সঙ্কটে দেখা মিলছে না তাদের। বন্যার অপ্রত্যাশিত কষ্টে বলতে গেলে কাছে নেই জনপ্রতিনিধিরা। কেবল অপেক্ষা সরকারি বরাদ্দের। অথচ টপ-টু- বটম কোন জনপ্রতিনিধিই বিত্তহীন নয় সিলেটের। টাকার বস্তা রয়েছে একেকজনের। সেই সাথে মুখের শক্তি তাদের অফুরন্ত। তাদের কথায় মধ্যস্বত্বভোগী বিত্তবানরা টাকা ঢালতে দৌড়ে থাকেন। জনপ্রতিনিধিরা একটু উদ্যোগ নিলে দূর্বিষহ জীবনে পড়তে হতো না সিলেটের বন্যার্তদের। অন্ন নেই, পানি নেই, ত্রাণের হাহাকার থাকতো না কারো মনে। কিন্তু না তারা নেই। কেন নেই বিলিয়ন ডলারের এ প্রশ্ন আজ জনমনে। অথচ তারা জনসেবক। অসহায় মানুষের কষ্টে তাদের মন কাঁদে না, ‘তেলা মাথায় তেল দিয়ে’ খুঁশি হন তারা। অসহায়দের খুশিতে তাদের যেন কিছু যায় আসে না। ক্ষণিকের জীবনে ত্যাগের মহিমার সৌন্দর্য তাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় না। ভোগের মধ্যে পড়ে থাকতে যেন মনযোগ।

সিলেটের প্রথিতযশা সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী বলেন, এই শহরে বিলিয়নাদের অভাব নেই। দামী গাড়ি দামী বাড়ি উচ্চমহলে সম্পর্ক সবই তারা ফোকাস করেন। কিন্তু বন্যার্তদের পাশে তারা কেন নামছেন না, এটাই ভাবার বিষয়। হয়তো মন মেজাজে সবকিছুতেই নগদ লাভ খুঁজেন তারা। মানুষের কষ্টে তারা লাভ দেখছেন না, কারণ এই মানুষ অসহায় তাদের কিছু দিতে পারবে না। তারা সেখানেই যেতে চান দিতে চান যেখান থেকে তারা দেয়ার চেয়ে বেশি কিছু পাবেন। তাহলে মানবিক শব্দটির যথার্থতা কি হারিয়ে যাবে। যদি হারিয়ে যায় তাহলে কঠিন পরিবেশ প্রতিবেশ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

তিনি আফসোস করে বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের দ্রুত এগিয়ে আসার দরকার অন্তত সিলেটের বন্যার্ত মানুষের পাশে। অপরদিকে, একটা সময় বিভিন্ন রাজনিতিক সংগঠনের সঙ্কটকালীন উদ্যোগ অসহায় মানুষদের সাহস যুগাতো। চলমান রাজনীতিক পরিস্থিতি তারা নিজেরাই অস্তিত্ব সঙ্কটে। নিজে বাঁচলে বাপের না, পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে ঠেকেছে। নিজে বাচাই দায় যেন তাদের। উদ্যোগের শক্তিও যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে তাদের। তাই বলে ইতিবাচক মানসিকতার অভাব নেই। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যদি পাছে কিছুু ঘটে। শাসক দলের নেতাকর্মীরা ভয়হীন নির্ভার। কিন্তু তারা নিজেদের তহবিলের চেয়ে সরকারের বরাদ্দে পোদ্দারীতে মনোযোগী। এমতাবস্থায় নেতৃত্বশীল পর্যায়ের অবস্থা সহজে অনুমেয়। তারপর বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় নেতাদের গোপনদানের খবরে কিছুটা স্বস্তি মিলছে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মধ্যে। তারা প্রকাশ্যে না এসে গোপন দান নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন দুঃখি মানুষের দোরগোড়ায়।

সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লতিফী হ্যান্ড, ফুলতলী ফাউন্ডেশনসহ পীর সাহেব ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলি নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন বন্যার্তদের মধ্যে। একই সাথে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে সমন্বয় করছেন সঙ্কট মোকাবিলায়। এছাড়া মানুষ-মানুষের জন্য, সেই আপ্তবাক্যের দায়বোধের দ্যুতি যদি ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে বিপদগ্রস্থ মানুষের দুঃখ কষ্ট লাগব হবে কিঞ্চিৎ হলে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মকসুদ হোসেন বলেন, বন্যার ভয়াবহতার মধ্যে সঙ্কটাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখন। সেই কাজে সবচেয়ে বেশি ভূমিকার রাখতে পারে সিলেটর ধর্নাঢ্যরা। তাদের এত বিশাল অবস্থা যে এই বিশাল বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দেয়া সম্ভব হতো তাদের ইতিবাচক পদক্ষেপে। কিন্ত এখন পর্দার আড়ালে তারা। কেন এমন হচ্ছে, হয়তো নৈতিকতার শেষটুকু এখন হারিয়ে যাচ্ছে বিবেকের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন