শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বৈশ্বিক সংহতির ডাক

শান্তি ও খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ৪ দফা প্রস্তাব ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে স্বল্পোন্নত ও ঝুঁকিপূর্

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্বের সব দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের প্রতি অবিলম্বে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে বৈশ্বিক রসদ স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান। গত শুক্রবার (২০ মে) রাতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি জাতিসংঘ আয়োজিত ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ অন ফুড, এনার্জি অ্যান্ড ফাইন্যান্স (জিসিআরজি)’ এর প্রথম পর্যায়ের বৈঠকে তিনি আহ্বান জানান। জাতিসংঘ ও প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতি ৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবিলম্বে বৈশ্বিক রসদ এবং সারাবিশ্বের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। এটি করতে পারলে দেশে দেশে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং রফতানি আয় পুনরুজ্জীবিত করতে, বিশেষ করে বিশ্বের স্বল্পোন্নত এবং অন্যান্য দুর্বল দেশগুলোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরো সহজলভ্য অর্থায়নে উন্নত অর্থনীতির দেশ এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতাবাদে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে বাংলাদেশ সব সময় জাতিসংঘের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এই গ্রুপটিকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুত সেই প্রত্যয় থেকে এসেছে। জিসিআরজিকে এগিয়ে নিতে সবার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।

শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংহতি জোরদার এবং একটি সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জি-৭, জি-২০, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কোন্ডঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। জিসিআরজি স্টেয়ারিং কমিটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটি সব বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। এটা দেখে আমি খুশি। সঙ্কট মোকাবিলায় কার্যকরী সুপারিশ তৈরিতে তাদের প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের পূর্ণ সমর্থন দেব। কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতে প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। ইউক্রেন যুদ্ধ এমন সময় আসল যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করছে। করোনা মহামারিতের ভঙ্গুর বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর ইউক্রেন যুদ্ধ মারাত্বক চাপ সৃষ্টি করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের দেশে দেশে কিভাবে দ্রব্যমূল্যে প্রভাব ফেলছে তা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং নিশ্চিত করেছে জ্বালানি নিরাপত্তা। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সরবরাহ ঘাটতি এবং খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। এই সঙ্কট কাটাতে বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ রাখা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ রাখা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, এক কোটি পরিবারকে বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা, এক কোটির বেশি মানুষকে খাদ্য ও নগদ সহায়তার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক বাড়ানো, বৈধপথে আসা রেমিট্যান্সের সঙ্গে ২.৫ শতাংশ নগদ সহায়তাসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে অনেক অব্যবহৃত ব্যবসার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
৪৮টি সদস্য রাষ্ট্রের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক দ্বীপ রাষ্ট্র এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেসব দেশে কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে। সবার কল্যাণে জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্জিত জ্ঞান, বোঝাপড়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে হবে।

জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন দেশে মারাত্মক চাপে থাকা এগ্রো-ফুড সিস্টেমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেকগুলো উদ্ভাবনী কর্মসূচি পরিচালনা করছে।

বৈশ্বিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চার প্রস্তাব রেখে বলেন, প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সু-সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত: অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবিলা, পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্য ও রফতানি আয় পুনরুজ্জীবিত করতে উন্নত অর্থনীতি এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। শুল্ক-মুক্ত-কোটা-মুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং সহজলভ্য অর্থায়ন প্রদান করতে হবে। তৃতীয়ত: কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। আমরা বিদ্যমান উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ট্রায়াংগুলোর সহযোগিতার সুবিধা নিতে পারি। চতুর্থত: এসআইডি এবং নিন্মাঞ্চলীয় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে থাকা থেকে উত্তোরণ ঘটাতে পারি।

চলতি বছরের ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিক করণীয় সমন্বয়ে খাদ্য, শক্তি এবং অর্থ সংক্রান্ত একটি গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। গত ১৩ এপ্রিল জিসিআরজিতে যুক্ত হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তৃতা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Shariful Islam Pinu ২২ মে, ২০২২, ১২:২৪ এএম says : 0
Positive Bangladesh. Mujibio Shuvecsha O Shuvo kamona Honorable Prime Minister Sheikh Hasina
Total Reply(0)
Suruzzaman Munshi ২২ মে, ২০২২, ১২:২৪ এএম says : 0
আল্লাহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে হেফাজত কর নেক হায়াত দান কর আললাহ সূস্হ রাখ আললাহ
Total Reply(0)
Md Shahinur Rahman ২২ মে, ২০২২, ১২:২৪ এএম says : 0
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা
Total Reply(0)
Tahasin Xusrat ২২ মে, ২০২২, ১২:২৪ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশ ধন্য???? মাননীয় নেত্রীর হাত ধরে বাংলাদেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ ???? পাশে আছি সবসময়
Total Reply(0)
আব্দুল্লাহ আল সায়েম ২২ মে, ২০২২, ১২:২৫ এএম says : 0
আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণ ব্যক্তি। উনি বাংলাদেশকে যত্ন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
Total Reply(0)
S M Shafiqul Islam ২২ মে, ২০২২, ১২:২৫ এএম says : 0
যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
Total Reply(0)
MD Year Ali Sikder ২২ মে, ২০২২, ১২:২৬ এএম says : 0
স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা জয়তু বাঙালি জাতির স্বপ্নসারথি মাননীয় মানবিক প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘাতক দল জামাতি বিএনপি সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ঐতিহাসিক অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অর্জন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরণে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল ইনশাআল্লাহ জয় বাংলা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন