ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগত বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত বলেছেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত আমাদের হিসাবে বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। গতকাল রোববার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট পেশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেন তিনি। যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ গুন বড়। অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে কালো টাকা উদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণের কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এই বিকল্প বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও ব্যাংক ঋণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আবুল বারকাত বলেন, টাকা পয়সাকে মূল লক্ষ্যবস্তু ধরে নিয়ে সরকারের বাজেট শুরু হয়। সমাজ নির্মাণে এ পদ্ধতির শুরুটাই ভ্রান্ত। কারণ, টাকাপয়সা কখনো মূল লক্ষ্য হতে পারে না, তা লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম হতে পারে মাত্র। আমরা বাজেট ব্যালেন্সের পক্ষে নই। আমরা অর্থনীতি ব্যালেন্সেরও পক্ষে নই। আমরা সোশ্যাল ব্যালেন্সের পক্ষে।
বাজেট প্রস্তাবনায় ৩৩৮টি সুপারিশ করা হয়। তিনি বলেন, বৈষম্য-অসমতা-দারিদ্র্য দূর করতে শুধু আসন্ন বাজেটে নয়, আগামী অন্তত পাঁচ বছর সমাজ থেকে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবৈষম্য ক্রমাগত কমিয়ে একসময় নির্মূল করার লক্ষ্যে যেতে হবে।
বাজেটে আয়-ব্যয়ের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন হতে হবে মন্তব্য করে ড. আবুল বারকাত বলেন, বাজেটে অর্থায়নের উৎস নির্ধারণে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন, প্রান্তিক, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর কোনো ধরনের কর দাসত্ব আরোপ করা যাবে না।
ড. আবুল বারকাত বলেন, করোনা অতিমারির আগে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় আসার যোগ্য ছিল ২ কোটি মানুষ। যাদের ৭৫ শতাংশ এ সুবিধা পেত না। এই সংখ্যা কোভিডকালে বেড়ে কমপক্ষে সাড়ে ৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। অনানুষ্ঠানিক খাত নিঃস্ব হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। অবস্থা একই রকম থাকলে সামাজিক সুরক্ষা প্রাপ্তিযোগ্য মানুষের দ্বিগুণ বাড়বে এবং বেড়েছে। এসব বিবেচনায় আমাদের প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক বাজেটে এটি হলো সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্তিযোগ্য খাত। এই খাতে সরকারি যা বরাদ্দ করে থাকে, তা যৌক্তিক নয়। যে কারণে আমরা নতুন ৮টি খাত অন্তর্ভুক্ত করেছি।
তিনি বলেন, বার্ষিক প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি ৫-৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। সরকার যে মূল্যস্ফীতির কথা বলে, সেটি প্রকৃত মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক কম। শর্ত হচ্ছে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যস্ফীতি এমন কোনো পর্যায়ে নেয়া যাবে না, যা অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতির ঘূর্ণনচক্রের মধ্যে ফেলবে। এছাড়া খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনো অবস্থায়ই বাড়ানো যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থা মূলত ব্যাংকনির্ভর। বেল আউট কর্মকাণ্ডে বৃহৎ ঋণগ্রহীতাদের নির্বিচার নগদ অর্থ প্রদান কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।
উল্লেখ্য, আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে। এতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন