শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বুঝে-শুনে উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের ভৌগলিক বৈচিত্রের কথা মাথায় রেখে বুঝে-শুনে উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশটাকে চিনতে হবে, জানতে হবে। দেশের কিন্তু একেক এলাকা একেক রকম, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই আপনাদের কাজ করতে হবে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের ভৌগলিক বৈচিত্রের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা ব্রিজটা যখন হয় আমি কিন্তু ব্রিজকে ছোট হতে দেইনি। নদী যতটা ওই জায়গায় চওড়া সেটা মাথায় রেখে তারপর বাফার জোন রেখেই কিন্তু আমরা সেটা করেছি। যেজন্য ব্রিজটা সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে। যমুনা ব্রিজটা (বঙ্গবন্ধু সেতু) কিন্তু এটাকে চার কিলোমিটারে কমিয়ে আনা হয়। আমি মনে করি, এটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু ডিজাইন প্ল্যান আগেই হয়ে গিয়েছিল যেটা আমাদের বেশি কিছু করার ছিল না। আমি শুধু রেললাইনটা সংযোজন করতে পেরেছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমাদের যে নদীর গতি এবং প্রতি বর্ষার পর নদীর তলদেশে মাটির চরিত্রটা কিন্তু বদলে যায়। যমুনাতে একেবারে চুলের বেণী যেভাবে ওইভাবে হয় এবং প্রতিবারেই বদলায়। ঠিক তেমন হয় আমাদের পদ্মা নদীতেও। কাজেই এগুলো মাথায় রেখেই আমাদের প্ল্যান করতে হবে। আমাদের দেশের অবস্থাটা কিন্তু একটু ভিন্ন। তাই এই ভিন্নতা মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা নেওয়া এবং সেভাবে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন জাপান সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তারপরে জাপান একটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি দল পাঠায়। সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ১৯৭৪ সালে শুরু হয়েছিল।

সুতরাং, যমুনা নদীর উপর বাংলাদেশের একটি সুনির্দিষ্ট সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন রয়েছে, তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তার সরকার পদ্মা নদীর উপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালিয়েছিল। সরকার প্রধান বলেন, যে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনে সেতু প্রকল্প সাইটের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী পদ্মা নদীর গভীরতার পার্থক্য পাওয়ায় তিনি সেতুর নকশা নতুন করে প্রণয়ন করান।

তিনি বলেন, নতুন ভাবে আমি নকশা করিয়েছি। আমি এখানে কোন গোঁজামিল দিতে দেইনি। যদিও এটি সময় নিয়েছে, তারপরেও নকশা পাল্টে যেখানে যতটুকু ওজন নিতে পারবে সেভাবেই নকশা করেই এটা করা।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে যমুনা ও পদ্মাসহ নদীর প্রবাহ ও তলদেশের মাটির চরিত্র পরিবর্তন হয়। যেহেতু এখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের মতো নয়, তাই এই পার্থক্য মাথায় রেখে সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি যে, ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের সভা থেকে একটা ভালো, যেসব এজেন্ডাগুলো আছে তার বিষয়ে ভালো একটা সুপারিশমালা যাবে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নটা কীভাবে আমরা করতে পারি সেটা ত্বরান্বিত হবে এবং বাস্তবমুখী পদক্ষেপ কীভাবে নেব সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। সেইভাবে আমাদের এগোতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা প্ল্যানটা যদি আমরা ভালোভাবে একটা গাইডলাইন তৈরি করে বাস্তবায়ন করতে পারি, আর যেহেতু এটা ২১০০ সাল পর্যন্ত, তাই সময়ের সঙ্গে এটা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন করতে হবে। সেইভাবেই কিন্তু আমাদের সব প্ল্যান হাতে নিতে হবে, নিয়ে আমরা কাজ করতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা সবচেয়ে বড় কথা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা মাথায় রেখে আমরা কাজ করবো।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের অর্জিত বিশাল সমুদ্র এলাকা ডেল্টা প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মৎস্য ও খনিজ সম্পদসহ সমুদ্রে থাকা সব সম্পদ কাজে লাগাতে সমুদ্র গবেষণা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সম্পদ আমরা হেলায় হারাতে পারি না। এটা অর্থনৈতিক অঙ্গনে কীভাবে কাজে লাগাবো এটা আমাদের দেখা দরকার। আমি মনে করি আমাদের ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে আজকের যে বিশাল সমুদ্ররাশি আমরা পেয়েছি, এই সম্পদটা আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ব্লু ইকোনমি ঘোষণা দিয়েছি। অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতি, সমুদ্রসম্পদকে আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো। সেখানে আমরা কতটুকু কী কী করতে পারি। সেখানে আমরা তেল-গ্যাস উত্তোলন অর্থাৎ সামুদ্রিক যে সম্পদ, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে, খাদ্য নিরাপত্তায় কাজে লাগতে পারে বিভিন্ন ভাবে, বিশাল মৎস্য ভান্ডার এখানে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু কাজ কিন্তু শুরু হয়েছে খুব সীমিত আকারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি বিষয় হলো বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে গুরুত্বটা হলো যে আদিকাল থেকে এখান দিয়ে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। দুই পাশে দুটো মহাসাগর। এক মহাসাগর থেকে আরেকটায় যেতে গেলে এই বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়েই কিন্তু চলাচল হয়। সেদিক থেকে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। কাজেই এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আমরা কীভাবে আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারি সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।

বঙ্গোপসাগরকে দূষণ মুক্ত রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দূষণ তো সব দেশেই। সাউথ সি-তে এমন অবস্থা যে সেখানে পানি পাওয়া যায় না। শুধু তেলের ফ্যানা, আমি নিজে সেখানে গিয়ে দেখে এসেছি। হাতে তুলেও নিয়েছিলাম। নেদারল্যান্ডসে থাকতে আমি গিয়েছিলাম। কাজেই আমাদের উপমহাদেশে যেন আমাদের বঙ্গোপোসাগর যেন সে রকম দূষণ না হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এটা যেমন পলিউশন মুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি এই সম্পদটা আমরা কীভাবে কাজে লাগাবো সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, প্রধান সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ায় লেবার পার্টি নেতাকে অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় লেবার পার্টি নেতা অ্যান্থনি নরম্যান আলবানিজকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি গতকাল তাকে এ অভিনন্দন জানিয়ে স্বচ্ছ্ব জ্বালানী, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সমুদ্র শাসন এবং ব্লু ইকোনমি বিষয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন পত্রে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ এবং ব্যাক্তিগত ভাবে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় লেবার পার্টির নেতা অ্যান্থনি নরম্যান আলবানিজকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Abdul Barek Bari ২৩ মে, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
Urgent industry need development this is permanent development
Total Reply(0)
S M Mizanur Siddique ২৩ মে, ২০২২, ৮:০২ এএম says : 0
অর্থ পাচারে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের দ্বিতীয় নাম্বারে, বছরে পাচার ৭৮হাজার কোটি টাকা। -গ্লোবাল ফিন্যান্স।
Total Reply(0)
Mst Salma Akter ২৩ মে, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
ম্যাডাম আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি,পিকে হালদারের মত এদেশে যেগুলো ডাকাত আছে প্লিজ এগুলোকে প্রতিরোধ করুন।
Total Reply(0)
Saiful Islam Farhad ২৩ মে, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
যাক এতদিন পর বুঝলাম যে,উন্নয়ন যা হয়েছে তা টেকসই উন্নয়ন হয়নি। এবার থেকে আমরা টেকসই উন্নয়ন এর গল্প শুনবো। উন্নয়ন করে দেশের যা অবস্থা,টেকসই উন্নয়ন করলে দেশের জনগণ আর দেশে থাকতে পারবে না
Total Reply(0)
Moharaz Muhin ২৩ মে, ২০২২, ৮:০২ এএম says : 0
যেই যেই জেলার মধ্যে বিএনপি নেতা কর্মী আছে সেইখানে কোনো উন্নয়ন কাজ করা যাবে না
Total Reply(0)
Maola Maola ২৩ মে, ২০২২, ৮:০২ এএম says : 0
রাইট বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
Total Reply(0)
Maola Maola ২৩ মে, ২০২২, ৮:০২ এএম says : 0
রাইট বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
Total Reply(0)
S M Sharifuzzaman ২৩ মে, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
এই সিধান্তটি ভালো লাগলো!! সাথে এটাও মনিটরিং করতে হবে যে যেই হোক বাজার থেকে বেশী পরিমান খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করতে পারবে না। পিয়াজ এক কেজি,তৈল এক কেজি, চাউল এক বস্তা।নিত্য প্রয়োজনিয় সব কিছু এক সাথে বেশী পরিমান ক্রয় করবে না।।
Total Reply(0)
Ferdousi Hasan ২৩ মে, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
ঠিক বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,এখন থেকেই সাবধান না হলে আমরাও বিপদে পরতে পারি ।তবে সরকারের রাস্তাঘাট তৈরির জন্য প্লান অনুযায়ী একবারে কাজ করতে হবে বার বার এক কাজ দুই তিন বার তৈরিতে বেশীই খরচ হয় সেই দিকে ।যারা কন্ট্রাক নেয় তাদের বুঝতে হবে ।বিশ্বে এখন সংকটে আছে ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন