শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

ডলারের বিপরীতে আবারও টাকার মান কমলো

মে মাসে তিন দফায় ১ টাকা ৪৫ পয়সা, এক বছরে ৪ টাকা ১০ পয়সা কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

ক্রমবর্ধমান আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় আবারো ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। সর্বশেষ গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার প্রতি মার্কিন ডলার ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ দশমিক ৯০ টাকা নির্ধারণ করে। এনিয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬ বার টাকার অবমূল্যায়ন করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে চলতি মে মাসেই তৃতীয়বারের মতো কমানো হলো এই মান। এক মাসে তিন দফায় ডলারের দাম বাড়ল ১ টাকা ৪৫ পয়সা। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২ টাকা ১০ পয়সা কমেছে। আর ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত গত ১ বছরে কমেছে ৪ টাকা ১০ পয়সা। গত বছরের এপ্রিলে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এখন থেকে ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলস ফর কালেকশন (বিসি) সেলিং রেটের হার প্রতি ডলার শূন্য দশমিক ৪০ টাকা বাড়িয়ে ৮৮ টাকা করেছে এবং আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করার সময় ব্যাংকগুলিকে এই হার অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যদিও ব্যাংকগুলো এখনও আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতি মার্কিন ডলারের জন্য ৯৫ টাকার বেশি চার্জ করছে। ব্যাংকাররা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থায় চলমান অস্থিরতার জন্য ক্রমবর্ধমান আমদানিতে ব্যয়কেই এজন্য দায়ী করছেন।
এদিকে ডলারের ঘাটতি ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি করেছে, যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের মাধ্যমে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
এটি অবশ্য কেবল বাংলাদেশের চিত্র নয়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য ক্রমেই বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে দেশে দেশে। ডলারের টান পড়ায় দেশে দেশেই মুদ্রার মান কমছে। যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মুদ্রার মান বরং কমেছে সবচেয়ে কম হারে। ভারতের মুদ্রার মান কমেছে বাংলাদেশের দ্বিগুণ হারে। আর পাকিস্তানে কমেছে বাংলাদেশের প্রায় ১০ গুণ হারে। মিয়ানমারে কমেছে পাঁচ গুণ হারে।
গত জানুয়ারির শুরুতে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ মার্চ তা আবার ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। গত ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় আরও ২৫ পয়সা। তখন ১ ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ৯ মে ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এরপর গত ১৬ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দিনে সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন করা হয় টাকার। সেদিন টাকার মান ৮০ পয়সা কমিয়ে ডলারের বিপরীতে করা হয় ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
অবশ্য খোলা বাজারে ডলার কিনতে গেলে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি তা ইতিহাসের রেকর্ড ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। টাকার মান আরও কমবে- এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ার পর ১০২ টাকাতেও ডলারে কেনার ঘটনাও প্রকাশ পায়।
তবে মুনাফা করার আশায় গুড়েবালি হয়েছে। বিদেশযাত্রায় সরকার লাগাম পরানোর পর খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা কিছুটা কমায় দামও কমে ৯০-এর ঘরে চলে এসেছে। মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার কিনতে গতকাল ৯৮ দশমিক ২০ টাকা গুনতে হয়েছে ক্রেতাদের। এর আগে গত ১৭ মে খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০২ টাকায় উঠেছিল। দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রিও করেছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৫৫০ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে তারা। ডলারের দাম আরও বাড়ায় রফতানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে। আর আমদানি খরচ বাড়া মানে ভোক্তাদের একই পণ্যের জন্য আরও বেশি খরচ করা।
ডলার নিয়ে এই অস্থিরতার মধ্যে ব্যয় সংকোচন এবং ডলারের ওপর চাপ কমাতে অতি জরুরি প্রকল্প ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে অর্থায়নে সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণও সীমিত করা হয়েছে। এছাড়া বিলাসপণ্যের পেছনে খরচ কমিয়ে আনতে আমদানিতে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়, যা পরবর্তীকালে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে বড় ধাক্কা দেয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন সেই সঙ্কটকে আরও গভীর করেছে। বাংলাদেশ সরকারও বিশ্ব মন্দার আশঙ্কাও করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
সাড়ে ১০ মাসে ডলার বিক্রি ৫৫০ কোটি ডলার
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯ মে পর্যন্ত) ৫৫০ কোটি (৫ দশমিক ৫০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৪৮ হাজার ১২৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা) বেশি তুলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর। দুর্বল হচ্ছে টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন