মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অন্তরের যথার্থতা ও সঠিকতাই হলো মূল বিষয়-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২২, ১২:০৫ এএম

সূরা মুনাফিকুনের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, যাদের দেহাবয়ব ও পোশাক পরিচ্ছদ এবং বহিরাবরণ প্রীতিকর ও আনন্দ দায়ক মনে হয় এবং তাদের কথা বার্তা ও মুখনিঃসৃত বাণী সাগ্রহে শ্রবণ করার মতো আকর্ষণীয়। কিন্তু তাদের অন্তর কলুষতায় ভরপুর কপটতা ও বিশ্বাসহীনতার অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন। তারা এতই ভীত শঙ্কিত যে, যেকোনো আওয়াজ, যেকোনো উচ্চস্বর ও শোরগোল তাদের ওপর আপতিত বলেই মনে করে। সুতরাং তাদের ধ্বংস হওয়া অবধারিত হয়ে আছে। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ পাক তাদেরকে ধ্বংস করবেনই। দিক ভ্রান্ত হয়ে তারা যেদিকে চলেছে, সেখানে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
কারণ এরাই হলো সে সমস্ত জাতি, শ্রেণি ও গোষ্ঠীর লোক যারা দৃশ্যত: সুন্দর, মনোহর ও আকর্ষণীয়। কিন্তু তাদের কথায় প্রতারণা ও ফাঁকিবাজির খৈ ফুটে উঠে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাদেরকে দেয়ালে ঠেকানো মরা কাঠের সাথে তুলনা করেছেন। যে কাঠের মধ্যে কোনো উপকারিতা ও প্রাণবন্ত রূপ নেই। দৃশ্যত: সুন্দর দেখালেও তার অভ্যন্তর অন্তসার শূন্য ও মূল্যহীন। তারা এমন সব অপরাধ অপকর্ম ও হীন চক্রান্তের জাল বুনে বলেছে যা বাহির থেকে অনুভব ও উপলব্ধি করা যায় না।

তাদের মধ্যে এমন সব নিকৃষ্ট অবস্থা বিরাজমান, যা কোনো ঈমানদার নিজের জন্য পছন্দ করতে পারেন না। নিজেকে তাদের সংস্পর্শে সোপর্দও করতে পারেন না। কারণ এই কপটাচারীদের আভ্যন্তরীণ বিষয়াবলি ও অন্তরের মধ্যে না আছে কোনো পবিত্রতা এবং না আছে কোনো সুবাস। তাই তাদের অপবিত্রতা মিশ্রিত অন্তরে ঈমান ও বিশ্বাসের নূর বিকশিত হতে পারে না। আভ্যন্তরীণ বিষয়াবলি ও অন্তর নষ্ট, কুৎসিৎ ও নোংরা। এজন্য তার বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চাকচিক্য এবং জৌলুস তাদের কোনো উপকার সাধন করতে পারে না। আর পারে না বলেই এ সকল বহিরাবরণ তাদের কোনো উপকারেই আসবে না। এর দ্বারা তাদের কোনো ফায়দা হাসিল হবে না।

বস্তুত: তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য ও বহিরাবরণের উন্নয়ন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল, ধোঁকায় নিপতিত করেছিল। তারা আখেরাতের অবিনশ্বর উত্তম পরিণতির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। সুতরাং তাদের ধ্বংস হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই, উপায় নেই।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়াল আল্ কোরআনে এই শ্রেণির জাতি, গোষ্ঠীর লোকদেরকে পূর্বাহ্নেই অবহিত করেছেন যে, ‘তাদের পূর্বে আমি বহু মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি যারা তাদের অপেক্ষা মাল সম্পদ ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও শক্তিশালী ছিল। (সূরা মারয়াম : আয়াত-৭৪)।’

কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় নজর বুলালে দেখা যায় যে, সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তায়ালা এমন অনেক জাতিকে পূর্বে ধ্বংস করেছেন যারা আকৃতিতে উত্তম এবং অর্থ বিত্তে অধিক প্রাচুর্যশালী এবং দেহাবয়বে সুন্দর ও মনোহর ছিল। কিন্তু তারা যে সম্পদ ও সমৃদ্ধি দ্বারা সুসজ্জিত ছিল তা’ তাদের কোনো উপকারেই আসেনি। ধ্বংসের করাল গ্রাসে তারা চিরতরে হারিয়ে গেছে।

পৃথিবীবাসীদেরকে সতর্ক করে আল্লাহ পাক আরো ঘোষণা করেছেন : ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না ও দেখে না তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল? দুনিয়াতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করত তা তাদের কোনো কাজে আসেনি।’ (সূরা গাফির/মুমিন : আয়াত-৮২। অতএব, মানুষের আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য এবং অন্তরের যথার্থতা ও সঠিকতাই হলো মূল বিষয়, যার ওপর নির্ভর করছে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি ও নিষ্কৃতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
কামাল ২৪ মে, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিনের নাজাতকে অন্তরের সঠিকতা, সততা এবং পরিচ্ছন্নতার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ " যে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। সে দিন উপকৃত হবে শুধু সে, যে আল্লাহ তা'আলার নিকট আসবে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে।" -( সূরা শুআ'রা- ২৬ঃ৮৮-৮৯)।
Total Reply(0)
Mohamed Saleh ২৪ মে, ২০২২, ৬:৫৪ এএম says : 0
অন্তর হলো পরিচয়ের স্হান, তাই এই অন্তর দিয়েই বান্দাহ তার প্রতিপালক ও মনিবের পরিচয় লাভ করে থাকে।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ২৪ মে, ২০২২, ৬:৫৪ এএম says : 0
আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য এবং অন্তরের যথার্থতা ও সঠিকতাই হলো মূল বিষয় এবং যার উপর নির্ভর করবে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি।
Total Reply(0)
Bazlur Rashid ২৪ মে, ২০২২, ৬:৫৪ এএম says : 0
মানুষ বাহ্যিক বিষয়ে উন্নয়ন, সুন্দর ও সজ্জিতকরণে অধিক যত্নবান ও মনোযোগী। কিন্তু আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সজ্জিতকরণে ও তার শুদ্ধি এবং সংশোধনে সম্পূর্ণ ভাবে গাফিল বা অন্যমনষ্ক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন