শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিক্ষাসফর শেষেই সচিবের বিদায়

যাদের প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা, তারা নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গত ২২ মে ছিল তার শেষ কর্মদিবস। সেদিন তিনি চলে যান পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি)। অথচ এর ঠিক আগের দিন সরকারি খরচে নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে শিক্ষাসফর শেষে দেশে ফেরেন। তার আগে ১৮ মে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তার আগে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করেছে সরকার। একজন আমলা অবসরের আগমুহূর্তে যাওয়া এ শিক্ষাসফর সরকারের কী কাজে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার ১০ দিনের এ সফরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করা হয়েছে সরকারি তিনটি প্রকল্পের তহবিল থেকে। অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা আমলাদের শিক্ষাসফরকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, তার এ সফর অনৈতিক ছিল। তিনি এটা করতে পারেন না। তার তো শিক্ষাসফরের দরকার নেই। এটা নতুন কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজন, যাতে তারা সেই শিক্ষা নিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারেন।

মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, হেলালুদ্দীন আহমদ গত ১১ থেকে ২০ মে নেদারল্যান্ডসে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং স্পেনে গ্লোবাল ওয়াটার সামিটে অংশ নেন। এ শিক্ষাসফরে যাওয়া অপর ছয়জনের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তবে সরকারি বিধিবিধান মোতাবেক মন্ত্রী যেতে পারেন= দেখতে। সেই করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। কিন্তু একজন সচিব হিসেবে তা করতে পারেন না বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, অনেক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত করার পেছনে অর্থাৎ দিনের ভোট রাতে নেওয়ার যে পরিকল্পনায় তার অন্যতম কারিগর তিনি।

নেদারল্যান্ডস সফরটি ২৬-২৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ ছিল। এ সফরে যাওয়া ব্যক্তিদের খরচ বহন করা হয় সরকারের তিনটি প্রকল্প থেকে। সেগুলো হলো স্থানীয় সরকার বিভাগের ঢাকার খাদ্য ব্যবস্থা (ডিএফএস) প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্প (ইএমসিআরপি) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিটি গভর্নেন্স প্রকল্প। ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডিএফএস প্রকল্পের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে অনুদান দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া অর্থে বাস্তবায়নাধীন ইএমসিআরপি প্রকল্পের লক্ষ্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মৌলিক সেবা ও সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করা। আর জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের লক্ষ্য নগর অবকাঠামো উন্নয়ন।

এ বিষয়ে কথা বলতে হেলালুদ্দীন আহমদের যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেনি। হেলালুদ্দীন আহমদ ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন। গত ২০১৯ সালের ৩০ মে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমাবয় মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ে যোগদান করেন সচিব জনাব হেলালুদ্দীন আহমদ। গত ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৭ সালে ৩০ জুলাই তারিখে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যোগদান করেন। গত ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত ছিলেন ৩০ মে ২০১৯ পর্যন্ত। তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে ২০০৯ সালের মার্চ হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলায় কাজ করেছেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ বিভাগীয় কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার পদে প্রায় ২ বছর এবং ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার পদে এক বছরের অধিককাল দায়িত্বরত ছিলেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ সফর নৈতিকতার ঘাটতি ও দায়িত্বহীনতার পরিচয়। যে প্রকল্পগুলো থেকে ব্যয় বহন করা হয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে সফরের উদ্দেশ্যের সামঞ্জস্য নেই। এ ব্যয় প্রকল্পের তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় প্রশ্ন তৈরি করবে। তিনি বলেন, অবসরের আগে হেলালুদ্দীন আহমদকে এ সফরটি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যারা এ সফর অনুমোদন দিয়েছেন, তারাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন