বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ যেন সরকার নির্বাচিত করতে পারে

নির্বাচনের ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ : ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার আলোচনা অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বা যেকোনো স্থানের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হলো- আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে দেশের জনগণকে তাদের সরকার বেছে নেয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে। জনগণ যেন তাদের সরকার নির্বাচিত করতে পারে। মুক্ত গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকরা এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের অসন্ন নির্বাচনে গণমাধ্যমের আরও বেশি সংবাদ প্রত্যাশা করেন তিনি।

গত মঙ্গলবার বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে মার্কিন দূতাবাস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো মাওকি, যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ পাটেল এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত মুখপত্র ব্রায়ান শিলার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, একটি আইনসম্মত ও অবাধ গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি সাংবাদিকরা যাতে কোনোরকম ভয়ভীতি, হয়রানি বা সেন্সরশিপ ছাড়া সত্য প্রকাশ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও কক্সবাজারে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। তারপরও প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন।

একটি অবাধ ও মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম শক্তিশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তাই তারা যাতে অবাধে কাজ করতে পারেন এবং সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, আমরা এ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। ডিজিটাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওটিটি নীতিমালা, ড্যাটা সুরক্ষাবিধি এবং গণমাধ্যমকর্মী আইনের বিষয়েও আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এগুলো এখনো পাস হয়নি। তবে আমাদের ভয়, এগুলোতে এমন কিছু বিধান রয়েছে যা সাংবাদিক এবং অন্যদের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ভয়ভীতি দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।

মাার্কিন দূত নিজের দেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, অবাধ গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে ঠিক পথে আছে তা কিন্তু নয়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ১৮২টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪২তম। অর্থাৎ শীর্ষ তালিকার কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্র নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিরও উন্নতি প্রয়োজন। ওই সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২ তম। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে। অবাধ গণমাধ্যমের সূচকে বাংলাদেশের নিম্নমুখিতার অন্যতম কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)। ওই প্রতিবেদনে ডিএসএকে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি অন্যতম মধ্যযুগীয় আইন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বৃটেনের ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ভোটাররা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে আরও বেশি তথ্য পেতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ ওই নির্বাচনের ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তার দেশের উদ্বেগের কথা জানিয়ে জাভেদ প্যাটেল বলেন, প্রবল চাপ ও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সাধুবাদ জানাই। প্রতিদিন যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তারা হয়ে থাকেন তা নিয়ে আমরা অব্যাহতভাবে বলে যাব। বৃটিশ দূত বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে অবাধ গণমাধ্যম। বিশেষ করে সঠিক তথ্য পাওয়া এবং নির্বাচনীয় প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্য রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ডিএসএ নিয়ে আমাদের যে উদ্বেগ তা সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে উৎসাহ যুগিয়ে যাব।

কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, ভুয়া তথ্য যাতে না ছড়ায় সেদিকে সাংবাদিকদের নজর দিতে হবে। তবে কোনো অজুহাতেই সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা উচিত নয়।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান তার দীর্ঘ বক্তব্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নানামুখী চ্যালেঞ্জের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু গণমাধ্যমের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তেমন বদলায় না। এ সময় বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন মিডিয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধের কথা জানান। ক্ষমতা অদল-বদল হলেও গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে গুণগত পরিবর্তন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করা আর কুমিরভর্তি পুকুরে সাঁতার কাটা একই বিষয়। অবস্থা এমন যে সাঁতার কাটতে হবে, কিন্তু আপনি কুমিড়ের লেজ ছুঁতে পারবেন না, মুখেও পড়তে পারবেন না!

বাকস্বাধীনতায় বড় প্রতিবন্ধকতা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন ডিএসএ’র অধীনে সাংবাদিকদের অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাহলে কি আমরা মনে করবো যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী চলবে?

অনুষ্ঠানে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সিনিয়র সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক মিনু, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, বিএফইউজের অপর অংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস, সাধারণ সম্পাদক একে এম মঈন উদ্দিনসহ পেশাদার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mizanur Rahman ২৬ মে, ২০২২, ৪:৩৮ এএম says : 0
জনগণের ভোট সরকারের কাছে গচ্ছিত। সরকার যদি আগের মত ইচ্ছে করে নিয়ে যায় জনগণের কি করার আছে? তবে দেশ তলা নিতে যাবে।
Total Reply(0)
এস আই রাজিব ২৬ মে, ২০২২, ৪:৩৮ এএম says : 0
সামনের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চাই।
Total Reply(0)
Harunur Rashid ২৬ মে, ২০২২, ৪:৪৫ এএম says : 0
Hoh. Ambassador, please keep max pressure on the unelected regime. People of Bangladesh deserve an elected government to rule them. They are sick and tired of clans and tyrants. Peace. Thanks.
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৬ মে, ২০২২, ৪:৩৮ এএম says : 0
জনগনের আর সেই সুযোগ নেই যে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করতে পারবে। কেয়ারটেকার সরকার দ্বার জাতীয় নির্বাচন করা গেলে জনগনের ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার আশা করা যায়।
Total Reply(0)
মোঃ হাফিজুর রহমান ২৬ মে, ২০২২, ৬:৩৮ এএম says : 0
দেশটা নয়তো কারো বাপের ভিটা করবে মন চাহিলে যখন যেটা এদেশে আল্লাহু আকবারের সুরে সূর্য উঠে এদেশে আল্লাহু আকবারের সুরে সূর্য উঠে
Total Reply(0)
Mohmmed Dolilur ২৬ মে, ২০২২, ৩:৩৪ এএম says : 0
রাস্তা (1) তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচন,যারা সরকার গঠন করতে সক্ষম করবেন,সংসদীয় পদ্ধতি রাখেন থাকবে আর যদি তাই না করেন,রাস্তা (2) রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি করেন যার নসীবে থাকবে সেই রাষ্ট্রপতি হবেন,মন্ত্রী পরিষদ গঠন করবেন,রাষ্ট্র পরিচালনা করেন,অযথা এই আইন সেই আইন এই সমস্ত করিবেন না,জনগণের রায় ছাড়া আইন করার বিধান নেই,এবং বিনা ভোটের এম পি দিয়ে যে সমস্ত আইন গুলি পার্লামেন্টে পাশ করা হয়েছে,এটি আইন সংগত নয়,যেমন একটি পার্লামেন্টে 150জন এম পি অবহিত,এরা নির্বাচিত নয়,সেটি জেনে শুনেও কি জন্য জোরপূর্বক আইন করেছেন,এই আইনগুলি আইন সংগত নয়,অযথা দেশের জনগণ কে কষ্ট দিবেন কি জন্য,জনগণের অধিকার দিতে হবে,ক্ষমতা হস্তান্তর করেন কি সমস্যা আপনারা ভালো কাজ করে থাকলে ভালো ফল পাবেন,অযথা ক্ষমতা ধরে মারা মারি কাটা কাটি করার কি পয়োজন আছে,আর ই ভি এমের মাধ্যমে নির্বাচন বাতিল করুন পয়োজনে এক এক বিভাগে এক এক দিন ভোট করেন,সমস্যা কোথায়,একদিনে ভোট পুরা দেশে করতে হবে কি জন্য,এত তাড়াহুড়ার দরকার কি,দেশ কি কোথায় চলে যাচ্ছে না কি,এই সমস্ত রাজনীতি আমাকে শিক্ষা দিতে হবে না,দরকার হয় আমার হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেখুন নির্বাচন এবং নির্বাচিত কি ভাবে করে শিক্ষা দিয়ে দিমু ,যত সব পাগলামি আপনার সব বুঝেন আমরা বুঝি না এই সমস্ত ফাজলামি ছেড়ে দিন,দুইটি কাজের একটি সিদ্ধান্ত নিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন