বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সাধারণ মানুষের দুর্দশা ঘুচাবে কে?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২২, ১২:৩২ এএম

আগামী মাসের শেষের দিকে বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মাসেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। সেতুটির উদ্বোধন জাঁকজমকপূর্ণ করার জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উদ্বোধন যে আড়ম্বরপূর্ণ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেতুটি এমন এক সময়ে উদ্বোধন করা হচ্ছে, যখন সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নিত্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে তারা খাওয়া-পরার হিসাব মিলাতে পারছে না। সরকারের তরফ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে জনগণকে কৃচ্ছসাধনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বলা বাহুল্য, এ যুদ্ধ লাগার অনেক আগে থেকেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ শুধু কৃচ্ছসাধনই নয়, খাবারের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছে। নিম্ন থেকে মধ্যবিত্তরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সংসার খরচ সমন্বয় করতে অনেক কাটছাঁটের পন্থা অবলম্বন করেছে এবং করছে। অনেকে তিনবেলার খাবার থেকে একবেলা কমিয়েছে। যেসব রিকশাওয়ালা ও শ্রমজীবী মানুষের অনেকে তিনবেলা কলা-রুটি খেত, তারাও এখন একবেলা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অতিমুনাফার লোভে যে অমানবিক কাণ্ড করছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। যুদ্ধের কারণে যতটা না মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তারা তার চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। পণ্যভেদে দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম বাড়িয়েছে। যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় না, দেশেই উৎপাদিত হয়, সেসব পণ্যের দামও বাড়িয়েছে। দামবৃদ্ধির এমন এই অমানবিক প্রতিযোগিতা ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার এক্ষেত্রে কিছুই করতে পারছে না। উল্টো ব্যবসায়ীদের কাছে যেন জিম্মি হয়ে আছে। এতে মনে হতে পারে, সরকারের চেয়েও শক্তিশালী এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সরকার কেন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, এমন স্বাভাবিক প্রশ্ন সাধারণ মানুষ করতেই পারে। তারা মূল্যস্ফীতি, বিশ্ববাজারে দামবৃদ্ধি ইত্যাদি অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ বুঝতে চায় না। তারা চায়, সরকার জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুক। এটা তার দায়িত্ব।

দুই.
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তদেরও এখন ত্রাহিদশা। কবে পণ্যমূল্য তাদের সাধ্যের মধ্যে আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে, আয় বাড়ারও কোনো সুযোগ নেই। ভারাক্রান্ত মন ও সংসার চালানোর দুঃশ্চিন্তা নিয়েই তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে এবং হবে। যতটুকু আয় করতে পারছে, ততটুকু দিয়েই চলার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ চিন্তা উচ্চবিত্তদের নেই। ১০ টাকার পণ্য ১০০ টাকা হয়ে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এমনকি যদি দুর্ভিক্ষও লাগে, তাতেও তাদের কিছু যাবে আসবে না। দেশে দুর্ভিক্ষের আলামত এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিরোধীদলের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বলে থাকেন দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। দুর্ভিক্ষ না হলেও সাধারণ মানুষ যে অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করছে, ক্ষমতাসীন দল ছাড়া তাতে অন্য কারোর সন্দেহ নেই। এই যে একবেলা খাবার বাদ দেয়া কিংবা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়াÑএটা ভালো সংকেত নয়। এমনই এক নিদানকালে অত্যন্ত জৌলুসপূর্ণভাবে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এটা দুর্ভোগে পড়া ক্ষুধার্থ মানুষের কাছে আসমানের চাঁদকে ঝলসানো রুটির মতো মনে হলেও হতে পারে। সরকার পদ্মাসেতুর আলোর ঝলকানি দিয়ে সাধারণ মানুষের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিয়ে সব ভুলিয়ে দিতে চাইবে। সাধারণ মানুষের এসব অভাব-অনটন, টানাপড়েনের জীবন রঙ্গিন চাদর দিয়ে ঢেকে দেবে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরপরই শুরু করবে একটি নতুন সেতুর জন্মের ইতিহাস ও আত্মকথা প্রচারের প্রতিযোগিতা। সেতু নিজে না বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, ক্ষমতাসীন দল ও তার সমর্থক বিজ্ঞজনরা এ সেতুর আত্মকথায় এর জন্মের ইতিহাস তুলে ধরবে। এই সেতু কী সুবিধা দিচ্ছে, অর্থনীতিতে কী পরিমাণ অর্থ যুক্ত হচ্ছে, জিডিপিতে কতটুকু অবদান রাখছে কিংবা অর্থনীতির মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, এসব বিষয় অনবরত তুলে ধরতে থাকবে। সেতুর এই আত্মকথা দিয়ে সাধারণ মানুষের চলমান দুর্ভোগের জীবন আড়াল করে দেবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত যে সেতুর স্তুতি চলতে থাকবে, তা অনেকটা নিশ্চিত। এসব কথা তারাই বলবে, যাদেরকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি স্পর্শ করে না। পণ্যমূল্য আকাশছোঁয়া হলেও তাদের কষ্ট হয় না। সাধারণ মানুষের কষ্টকর জীবনযাপন স্বীকার করে না। উল্টো বলবে, মানুষের আয় বেড়েছে, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। তারা ভালো আছে। লোহার টুকরাকে স্বর্ণের টুকরা বললেও তা মানতে হবে। তাদের এ কথা উড়িয়ে দেয়ার সাধ্য সাধারণ মানুষের ছিল না, থাকবেও না। যারা সমালোচনা করবে, তাদের বলা হবে এরা চোখে ঠুলি পরে আছে কিংবা তাদের চোখে ছানি পড়েছে, সরকারের উন্নয়ন দেখে না। দুর্মুখেরা এসব কথা বলবে। এগুলো আমলে নেয়ার দরকার নেই। জনগণ আমাদের সাথেই আছে। তারা খুবই সুখী। ফেরি করে পান বিক্রি করা রাজধানীর বেগুনবাড়ির চার সন্তানের জননী বিলকিছ বেগমের এ কথা স্বীকার করবে না, ‘আগে ডাল-ভাত খেয়ে দিন পার করতাম। এখন তা-ও জোগাড় করা কঠিন হয়ে গেছে। আগে বাজারে গিয়ে কি কিনতে পারব, কি পারব না, একটা ধারণা থাকত। এখন বাজারে গিয়ে দেখি আজ এটার, তো কাল ওটার দাম বেড়েছে। জীবন চলাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’ নিত্যপণ্যের বাজার এখন এমনই যে, একটি পণ্যের সকালে একদাম থাকে, বিকেলে বেড়ে আরেক দাম হয়ে পড়ে। কেউ যদি ন্যূনতম ১০০ টাকা বাজেট করে সকালে বাজারে যায়, তা দিয়ে বাজার করতে পারে না। প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজেট বেড়ে ১৫০ টাকা হয়ে পড়ে। বাড়তি ৫০ টাকা তার কাছে না থাকায় চিন্তা করে একদিন কষ্টে থেকে নতুন হিসাব মিলিয়ে কাল যাব। কাল গিয়ে দেখে নতুন হিসাবের বাজেটও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে তাকে ১০০ টাকার বাজেটের মধ্যে থেকেই যা পাওয়া যায়, তাই নিয়ে মনখারাপ করে ফিরতে হচ্ছে। সরকার মনে করতে পারে, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। তা নাহলে, শ্রীলঙ্কার মতো মানুষ রাস্তায় নেমে আসত। সমস্যাটা এখানেই। সাধারণ মানুষ ক্ষুধা পেটে বের হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, হেলমেট বাহিনী ও সরকারি বাহিনীর হাতে মার খেতে ও প্রাণ বিসর্জন দিতে চায় না। তার চেয়ে ভালো, কম খেয়ে কোনোরকমে জীবনটা বাঁচাই। সরকার বহু বছর ধরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। যেভাবে রাখি, সেভাবেই থাকতে হবে। আবার এ কথাও সত্য, শ্রীলঙ্কার জনগণ স্বেচ্ছায় সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। সেটি বিরোধীদলের কোনো আন্দোলন ছিল না। বরং সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এ আন্দোলনকে সরকারি বাহিনী থেকে শুরু করে বিরোধীদলের সমর্থন ছিল। অর্থাৎ সরকারের প্রতি জনরোষ ও অসন্তুষ্টি চরম আকার ধারণ করলে তা দমন করা যেমন কঠিন, তেমনি সরকারের বিদায়ও অনিবার্য হয়ে ওঠে। এখন এমন যদি হতো, সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তার সকল বাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষকে দমন করত, তাহলে শ্রীলঙ্কা রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হতো। শ্রীলঙ্কার সরকার পালিয়েছে ঠিকই, তবে এর মধ্যেও তার ব্যর্থতা এবং জনগণের মতামত মেনে নেয়ার মানসিকতা ছিল। আমাদের দেশ শ্রীলঙ্কার মতো হবে, এমন কথা বিরোধীদলগুলো বললেও সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। এখনও শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন যেভাবে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে এবং ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়ছে, তা যদি সরকার এড়িয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি বদলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তিন.
বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার জোর গলায় বলছে, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থনীতির সব সূচক ঊর্ধ্বগামী। মানুষের মাথাপিছু আয় ক্রমাগত বাড়ছে। অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছি। বিভিন্ন সূচকের ডাটা ও পরিসংখ্যান তুলে ধরছে। এতে মনে হতে পারে সরকার ডাটা নির্ভর হয়ে গেছে। ডাটা দিয়ে উন্নয়ন বোঝাতে চায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি সরকার যখন একযুগের অধিক সময় ক্ষমতায় থাকে, তখন এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে না ধরলে তার ক্ষমতায় থাকা জায়েজ হয় না। টানা ক্ষমতায় থাকা যেকোনো সরকারের পক্ষে উন্নয়নের কথা তুলে ধরা স্বাভাবিক। এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, যেকোনো সরকারের আমলে কম-বেশি উন্নয়ন হয়ে থাকে। এ সরকারের আমলেও হয়েছে। মনুমেন্টাল বা স্থাপত্যবিষয়ক উন্নয়ন হয়েছে। বড় বড় মেগাপ্রজেক্ট সেসব উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তার মধ্যে পদ্মাসেতুও একটি। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকৃত উন্নয়ন সেটি, যেটি সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায়। আমরা দেখছি, বিগত এক যুগের অধিক সময়ে দেশের একটি শ্রেণীর আকাশছোঁয়া উন্নতি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের এমন অনেক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা রয়েছে, যারা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণীর এতই উন্নতি হয়েছে যে, তারা দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। বিদেশে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। এ হিসেবে উন্নতি হয়নি, তা বলা যাবে না। উন্নতি হয়েছে বলেই তারা টাকা রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তা নাহলে, এ টাকা আসল কোত্থেকে? তবে এই টাকাগুলো যদি তারা কুক্ষিগত না রাখতেন কিংবা বিদেশে নিয়ে না যেতেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও তার ভাগ পেত। ভাবা যায়, এক পিকে হালদার হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে! বিদেশে তার আলিশান বাড়ি, বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য, কত কি! এমন আরও কত যে পিকে হালদার রয়েছে, তার হিসাব নেই। না থাকলে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হতো কিভাবে? এগুলো তো হাওয়ায় ভেসে বিদেশে চলে যায় না। কেউ না কেউ নিয়ে যাচ্ছে। সরকার তা জানে না, এমন ভাবার কারণ নেই। সরকার কেন তাদের ধরছে না কিংবা ধরতে পারছে না, এ এক বিরাট প্রশ্ন। তাদের ধরলে কি সরকারের কোনো ক্ষতি হবে? তারা কি সরকারের খুঁটি? নিশ্চয়ই তারা খুঁটি হয়ে আছে। তা নাহলে, ধরবে না কেন? দেশের বেশুমার টাকা বানের পানির মতো বিদেশ চলে যাচ্ছে, আর সরকার তাতে বাঁধ সাধবে না, এটা কি হতে পারে? উল্টো এসব পাচারের ক্ষতিপূরণ সাধারণ মানুষের পকেট কেটে করতে হবে কেন? ইতোমধ্যে এ কথা প্রচলিত, অর্থপাচারের সাথে এমন সব ব্যক্তি জড়িত, যাদের ধরলে সরকারের খুঁটির জোর অনেকটা কমে যাবে। এ কারণে সরকার এদের ধরছে না। এটা ন্যায়ভিত্তিক ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী সরকারের কাজ হতে পারে না। যে সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের খুঁটির জোরের চেয়ে গুটিকয় মানুষের খুঁটির জোর বড় হয়ে উঠে, সে সরকারের পক্ষে দেশ ও মানুষের কল্যাণ করা কঠিন। সরকারের লোকজন ইতোমধ্যে চওড়া গলায় বলছে, দুর্নীতির সাথে জড়িত লোকজনকে ধরা হচ্ছে, শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। আপাতদৃষ্টিতে তা সঠিক। তবে যাদের ধরা হচ্ছে বা শাস্তি দেয়া হচ্ছে, তারা দুর্নীতিবাজদের হিমশৈলীর চূড়া মাত্র। হিমশৈলীর পানির নিচের বিশাল আয়তন ঢাকতে উদাহরণ হিসেবে কাউকে শাস্তি দিয়ে তা জায়েজ করার এটা এক ধরনের চালাকি ছাড়া কিছু নয়। বিশাল দুর্নীতিবাজদের আড়াল করার লোকদেখানো প্রক্রিয়া। আড়ালে থাকা এসব দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীর কারণে যে দেশের অর্থনীতি ফোকলা হয়ে যাচ্ছে, সেটা বিবেচনায় নিচ্ছে না। এর খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকার অর্থসংগ্রহের জন্য মানুষের সাথে ব্যবসা করছে বলেও অনেকে মন্তব্য করছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেল কিংবা বিভিন্ন সেবাখাতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। গত কয়েক মাস ধরে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম শতভাগের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এসবের দাম বাড়লে জিনিসপত্রের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা চিন্তাও করা যায় না। সাধারণত কোনো পণ্যের উৎপাদন বেশি হলে তার দাম কমা নিদেনপক্ষে স্থিতিশীল থাকার কথা। অথচ বিদ্যুৎ এখন চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। তাহলে দাম বাড়ানো হচ্ছে কেন? গত সপ্তাহে এফবিসিসিআই বলেছে, জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা ও দায়ভার সাধারণ মানুষের ওপর চাপানো ঠিক হবে না। তার এ বক্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা বিরাজ করছে। এই সমস্যা দূর না করে উল্টো দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা কি কোনো সরকারের কাজ হতে পারে?


চার.
সরকার জনবান্ধব কিনা, এ প্রশ্ন বহুবছর ধরেই উঠছে। অন্যদিকে, বিরোধীদলগুলো বলে আসছে, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ কারণে জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নেই। তার দায়বদ্ধতা প্রশাসনের লোকজন ও একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর প্রতি। তাদের এ কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কোনো সরকার যদি জনগণের ভোটকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতায় থাকে, তখন জনগণের প্রতি তার দরদ কমে যায়। এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে মন্ত্রী-এমপিদের দায়বদ্ধ হতে হয় না। কথা বলার নৈতিক সাহসও থাকে না। থাকলে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের কষ্টের কথা বলতেন। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে যে মানুষ নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছে, এ নিয়ে কথা বলতেন। তাদের আচরণে এটাই প্রতীয়মান হয়, তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থ নয়, নিজেদের স্বার্থই বেশি দেখছেন।

darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
আহমদ ২৭ মে, ২০২২, ৬:১১ এএম says : 0
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের যেভাবে দাম বেড়েছে মনে হয় এ দেশে কোনো সরকার নেই।
Total Reply(0)
আহমদ ২৭ মে, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
দিন যত যাচ্ছে মানুষের মাঝে ক্ষোভ তত বাড়ছে। কাজেই দ্রব্যমূল্যের দাম না কমালে সরকারকে জনরোষের মধ্যে পড়তে হবে।
Total Reply(0)
jack ali ২৭ মে, ২০২২, ৩:৩১ পিএম says : 0
দেশ চালায় মানুষরূপী অমানুষ যখন দেশে আল্লাহর আইন দিয়ে চালানো হবে তখন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে>>আমাদের ট্যাক্সের টাকায় প্রধানমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে এম্পি মিনিস্টার আওয়ামীলীগের চাঁদাবাজ গুন্ডারা এদের কোন অসুবিধা হবে না এরা আমাদের টাকা নিয়ে রাজা রানীর মত বসবাস করে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন