শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

টেক্সাসে স্কুলে গুলি : সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ই এ জন্য দায়ী

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২২, ১২:৩২ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উভালদে শহরের রব এলিমেন্টারি স্কুলে ১৮ বছর বয়েসী এক বন্দুকধারীর গুলিতে স্কুলের ১৯ শিক্ষার্থী এবং একজন শিক্ষকসহ মোট ২১জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো অনেকে । পুলিশের গুলিতে হামলাকারী সালভাদর রামোসও ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে । নিউ ইয়র্কের বাফেলোর একটি সুপার মার্কেটে ম্যাস শুটিংয়ে ১০জন নিহত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় টেক্সাসের এই নির্মম ঘটনাটি সংঘটিত হল। এলিমেন্টারি স্কুলের ৫ থেকে ১০ বছর বয়েসী শিশুদের এই হত্যাকান্ড পুরো মার্কিন সমাজকে আবারো বড় ধরণের নাড়া দিল। শুধুমাত্র চলতি বছরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৭টি স্কুল শুটিংয়ের ঘটনার কথা প্রকাশ করেছে এনপিআর অনলাইন মিডিয়া। তবে সব মিলিয়ে চলতি বছরের এ সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাস শুটিংয়ের সংখ্যা অন্তত ২১২টি বলে জানা যায়। প্রতি বছর শত শত ম্যাস শুটিংয়ের ঘটনা ঘটছে এবং তা বেড়েই চলেছে। বিশেষত স্কুল শুটিংয়ের ঘটনাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গনে একটি আতঙ্কজনক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে মার্কিন সমাজ ও প্রশাসনে নতুনভাবে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন চলছে। বন্দুক আইন পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে।

টেক্সাসের রব এলিমেন্টারি স্কুলের শুটিংয়ে হতাহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, একের পর এক এ ধরণের ঘটনায় তিনি অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। বন্দুক নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়ণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তিনি মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন ম্যাস শুটিংয়ের ঘটনায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও বন্দুক আইনের প্রশ্নে মার্কিন আইন প্রণেতাদের মধ্যে মতানৈক্য ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। তবে শুধুমাত্র বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ ধরণের ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব না হলেও অনেকটা কমিয়ে আনা হয়তো সম্ভব। কিছুদিন পর স্কুলের ভেতর শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা বহিরাগত বন্দুকধারীদের এমন বেপরোয়া বন্দুকবাজির ঘটনা থেকে মার্কিন যুব সমাজের অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। এর পেছনে সেখানকার রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন এবং অস্থিরতা ও মাদকের প্রভাব সুস্পষ্ট। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিকভাবে বর্ণবাদী বৈষম্যনীতি এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ও যুদ্ধবাদী পররাষ্ট্রনীতি আঁকড়ে থাকার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক মনস্তত্বে সন্ত্রাসবাদী নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে এ ধরণের সন্ত্রাসী বন্দুকবাজির ঘটনা বেড়েছে। ইরাক-আফগানিস্তান যুদ্ধ ফেরত মার্কিন সৈনিকদের মধ্যে যে ট্রমা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সে সম্পর্কেও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের নতুনভাবে ভাবতে হবে।

মার্কিন সৈনিক হিসেবে ইরাকযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে নিজের একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে দেড়যুগ আগে শিন্ডি শিহান নামের এক নারী টেক্সাসে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের বাগান বাড়ীর সামনে অভিনব প্রতিবাদ অবস্থান গ্রহণের খবর বিশ্বসংবাদে পরিনত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি ও সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গত দুই দশকে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনে লাখ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কোনো শক্তিই সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার স্পর্ধা না পারলেও খোদ মার্কিন সমাজের ভেতরেই যুদ্ধবাদী ও বর্ণবাদী নীতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এখন শুধুমাত্র গান কন্ট্রোল আইন করেই এ ধরণের নাশকতা ও হেইট অ্যাটাক বন্ধ করা সম্ভব হবে না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মাদকের ব্যবহার, নগ্নতা-অশ্লীলতার মত বিষয়গুলোও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। মার্কিন সমাজে বর্ণবাদী দ্বন্দ কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে ওয়ার অন টেররিজম শুরুর পর থেকে স্কুল শুটিং ও ম্যাস শুটিংয়ের হার এবং বিভীষিকা বেড়ে গেছে। ২০০৭ সালে ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক শিক্ষার্থীর গুলিতে ৩২জন নিহত এবং অন্তত ২৩জন আহত হয়েছিল। এর ৫ বছর পর ২০১২ সালে কানেক্টিকাটের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে এক বন্দুকধারির গুলিতে ২০ শিশু এবং স্কুল পরিচালকদের ৬জনসহ মোট ২৬জন নিহত হয়েছিল। সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হলে আগে মার্কিন সমাজপতি ও রাজনৈতিক নেতাদের বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করতে হবে। হোয়াইট সুপ্রীমেসি, ইসলামোফোবিয়ার মত সামাজিক-রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। টেক্সাসে নিহতদের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এ ধরণের হামলার পুনরাবৃত্তি বন্ধে অবশ্যই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
আহমদ ২৭ মে, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
টেক্সাসে স্কুলে গুলি, এটা আবার কেমন সন্ত্রাস যে স্কুলের বাচ্চাদের মারতে চায়। তারা কোনো সভ্য জাতির নয়। এসব সন্ত্রাসীরা বিশ্বকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়।
Total Reply(0)
আহমদ ২৭ মে, ২০২২, ৬:০৮ এএম says : 0
আমরা আশা করি মার্কিন সরকার এ সন্ত্রাসীদরে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনবেন
Total Reply(0)
আহমদ ২৭ মে, ২০২২, ৬:০৯ এএম says : 0
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশে এমন সন্ত্রাসী কাণ্ড। এটা খুব খারাপ বার্তা দেয় বিশ্বকে। কাজেই তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তি ব্যবস্থা করা দরকার। তারা বিশ্বের শান্তি চায় না।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন