শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

জার্মানিতে নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ কমছে কেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২২, ১২:৩১ এএম

জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়া। গত ১৫ই মে রাজ্যের নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৫.৫ ভাগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাজ্যটিতে এই প্রথম কোনো নির্বাচনে ভোটের হার এত কম হলো। ডুইসবুর্গ আসনে আবার ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৩৮.১ ভাগ ভোট পড়েছে এবার। ভোটের এই নিম্নহারে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেখছেন অনেকে। কারো কারো প্রশ্ন- গণতন্ত্রের প্রতিই কি নিস্পৃহ বা বিরক্ত হয়ে পড়ছেন ভোটাররা? জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়ায় এত কম ভোট পড়ার কারণ জানতে স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। দেখা গেল ভোট না দেয়া এবং ভোট দিতে অনিচ্ছুকদের নির্বাচনে অনিহার কারণ আসলে অনেক।
রাজনীতিবিদরা মিথ্যেবাদী : ডুইসবুর্গ সিটি সেন্টারের এক কফি শপে কফির কাপে চুমুক দিয়ে হেলগা নিকেলসেন বললেন, ‘রাজনীতিবিদরা মিথ্যেবাদী। তারা অঙ্গীকার করে এবং সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। ৭৬ বছর বয়সি হেলগা মনে করেন, তার মতো কর্মজীবন থেকে অবসর নেয়া মানুষদের ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবা অনেক আগেই বাদ দিয়েছেন রাজনীতিবিদরা, তাই তাদের ভোট দিতে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।
ভোটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল : অনেকে জানালেন ভোটের দিনে তারা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। একজন বললেন, ‘সেদিন আমরা বাচ্চাদের নিয়ে অ্যামিউজমেন্ট পার্কে গিয়েছিলাম’। আরেকজন দেখালেন কাজের অজুহাত, ‘আমার তো সেদিন কাজ ছিল’! আবার কেউ কেউ নির্বিকারভাবে জানালেন সেদিন যে কোনো নির্বাচন ছিল তা-ই জানা ছিল না। তবে ভোট না দেয়ার কারণ ভিন্ন হলেও একটি বিষয়ে অনেকেরই খুবই মিল। ভোট দিতে না যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
দ্রব্যের অগ্নিমূল্য এবং আরো কারণ... : নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়ার কয়েকটি অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এবার ভোট কম পড়েছে। সেসব এলাকার অনেক অভিবাসীই জার্মান ভাষা শেখেননি। বিশেষায়িত কাজে প্রশিক্ষণ নেননি বলে অনেকের আয় যৎসামান্য। অনেকের জীবন আবার সরকারের সমাজ কল্যাণ ভাতার ওপর নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে যারা ভোটার তারা জার্মানির সমাজের সঙ্গে নিজেকে এখনো মানিয়ে নিতে পারেননি বলেই নির্বাচনের বিষয়ে অনাগ্রহী রয়ে গেছেন বলে অনেকের ধারণা। আবার ২৪ বছর বয়সি ইয়োনাস জিচি মনে করেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে দ্রব্যমূল্য এত বেড়েছে যে মানুষ দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে। তুর্কি বংশোদ্ভ‚ত তরুণ স্পষ্ট ভাষায় জানালেন এ কারণে নিজের বাড়ির রাস্তার বিপরীত দিকে ভোট কেন্দ্র জেনেও ১৫ মে তিনি ভোট দিতে যাননি।
রাজনীতিবিদদের হতাশা : এবার নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য নির্বাচনে সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসপিডি)-র ভরাডুবি হয়েছে। তবে এসপিডির নেতা ফ্রাঙ্ক ব্যোর্নার ২০১২ সাল থেকে জয়ের যে ধারা শুরু করেছিলেন তা বজায় রেখেছেন। কিন্তু দল হেরে যাওয়ায় এবং নিজের এলাকায় ভোটের হার এত কম হওয়ায় নিজের জয়টা তিনি উদযাপন করতে পারছেন না। তিনি মনে করেন অনেক ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাননি বলেই মাত্র ২৬.৭ ভাগ ভোট পেয়েছে তার দল।
নির্বাচনে আগ্রহ বাড়ানোর উপায় কী? : রবার্ট ফেরকাম্প অবশ্য জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়ায় ভোটের হার কমতে দেখে মোটেই হননি। তিনি মনে করেন, সা¤প্রতিক সময়ে জার্মানি আরো কয়েকটি রাজ্যে ভোটারদের মাঝে নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ‘ট্রেন্ড’ লক্ষ্য করা গেছে, সুতরাং নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়াতেও এমন হতেই পারে। তবে অধ্যাপক এবং নির্বাচন বিশ্লেষক ফেরকাম্পের মতে, ভোটারদের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনা গণতন্ত্রের স্বার্থেই জরুরি।
ভ্রাম্যমান ভোটকেন্দ্র : ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চারটি উপায় ভেবে বের করেছেন রবার্ট ফেরকাম্প। তার প্রথম প্রস্তাব- ভোটার যদি ভোটকেন্দ্রে আসতে না চায় তাহলে তার কাছেই চলে যেতে পারে ভোটকেন্দ্র, অর্থাৎ ভ্রাম্যমান ভোটকেন্দ্র চালু করা যেতে পারে যার মাধ্যমে ভোটারের বাড়ি বা কর্মস্থলে গিয়েও ভোট গ্রহণ করা সম্ভব।
ভোটার হওয়ার বয়স ১৬ করা : ফেরকাম্প মনে করেন, ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করে দিলেও নির্বাচনে ভোটের হার বাড়বে। তার এই ভাবনা মোটেই বাস্তবতাবর্জিত নয়, কারণ, জার্মানির চারটি রাজ্য ইতিমধ্যে ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ করেছে।
জোড়া নির্বাচন : দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচন আর আঞ্চলিক নির্বাচন একসঙ্গে হলে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ে। তাই সব রাজ্যে ‘বান্ডেল ইলেকশন’, অর্থাৎ একই দিনে জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টিও নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখতে বলেছেন ফেরকাম্প।
পোস্টাল ও ডিজিটাল ভোট : ফেরকাম্পের চতুর্থ প্রস্তাব ভোট কেন্দ্র, রাজ্য এমনকি দেশের বাইরে থাকা ভোটারও যাতে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে পোস্টাল এবং ডিজিটাল ভোটের ব্যবস্থা করা। ফ্রাঙ্ক ব্যোরনার মনে করেন ফেরকাম্পের প্রতিটি প্রস্তাবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত, কারণ, ‘‘ডেমোক্রেসির ডেমোক্র্যাটদের খুব দরকার। জনগণের জন্যই তো নির্বাচন, সুতরাং ভোটগ্রহণ যত বেশি ভোটারবান্ধব হবে, ততই ভালো। সূত্র : ডয়চে ভেলে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন