শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উত্তপ্ত ঢাবি ক্যাম্পাস

ফের ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২২, ১২:৩১ এএম

ছাত্রদল-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গত মঙ্গলবার ছাত্রদলের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর বুধবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসজুড়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার উভয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর, কার্জন হল ও হাইকোর্ট এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত: ২৫-২৫ জন আহত হয়েছে। তবে ছাত্রদলের দাবি তাদের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

জানা যায়, ছাত্রদলের দাবি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে গতকাল হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জড়ো হয় ছাত্রদল। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাত্রা করলে সামনে থেকে রড, হকিস্টিক, চাপাতি ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে তাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অন্যদিকে পূর্বের ন্যায় ছাত্রলীগ বলছে এ হামলা প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে মিছিল বের করে ছাত্রদল। এতে সংগঠনের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের কাছাকাছি আসতেই সেখানে আগে থেকেই লাঠি-সোটা নিয়ে অবস্থানকারী ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। ছাত্রদলের আসার খবর পেয়ে সেখানে আগে থেকেই আশপাশের বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে অবস্থান নিয়েছিল। এ সময় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পিছু হটে ছাত্রদল।

এসময় ছাত্রলীগ-ছাত্রদল উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতেই হকিস্টিক, স্টাম্প, ইট পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। মাথায় হেলমেট পরা ছাত্রলীগ কর্মীদের বেপরোয়াভাবে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হামলা করতে দেখা যায়। তাদের কারো হাতে রড, কারো হাতে হকিস্টিক ও কারো হাতে দেশীয় অস্ত্রও দেখা যায়।

হামলার এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ও হাইকোর্টের ভিতর আশ্রয় নেয় ছাত্রদল। কিছু সময় পর ফের ঘুরে দাঁড়ায় তারা। শুরু হয় দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ছাত্রলীগের পাল্টা ধাওয়ার আগে শটগান হাতে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আশেপাশের অন্যান্য ইউনিট থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হাইকোর্ট চত্বরে ঢুকতে দেখা যায়। এসময় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে বেধড়ক পিটুনি দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে এবার সংঘর্ষ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ানোয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেয়। সেখানে পিছু পিছু ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের চাপাতি দিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে ছাত্রলীগ। দুপুর বারোটার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে প্রবেশ করে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে এলোপাতাড়ি কোপায় তারা। এ ঘটনায় দুইজন আইনজীবী এগিয়ে গেলে তারাও এলোপাতাড়ি কোপের শিকার হয়। তাৎক্ষণিক মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস। এদিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিক আবির আহমেদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এ সময় তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষের খবর সরাসরি স¤প্রচার করার সময় তার উপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আবির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা আমি লাইভ দিচ্ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ওপর হামলা করেন। তাঁরা আমার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সাংবাদিক আবিরকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করার সময় মাহফুজ কোভিদ নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহŸায়ক আক্তার হোসেন ইনকিলাবকে জানান, তারা নিয়মিত রাজনৈতিক চর্চার অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে আগে থেকেই দোয়েল চত্বরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অপেক্ষমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম আহŸায়ক আরিফ, জিয়া হলের সভাপতি তারেক হাসান মামুন, এসএম হলের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, বিজয় একাত্তর হলের সহ সভাপতি তানভীর আজাদী ও ঢাকা মহানগর পূর্বের নেতা শাহাবুদ্দিন সিহাবসহ ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহত ছাত্রনেতারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের পর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক মো. মাসুদ রানাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে মেরে আটকে রেখেছে ছাত্রলীগ।

এদিকে হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ছাত্রদল তার পুরনো ইতিহাসের মতো ফের ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করতে চাইছে। যেভাবে তারা অতীতে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালিয়েছে। এখনো তারা সেটাই করছে। এরই অংশ হিসেবে মিছিলের নামে মহড়া দিচ্ছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসকে শান্তিপূর্ণ রাখতে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি আমরা ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতের মত তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম, খুন ও হত্যা হতে দিতে পারি না আমরা। বিগত বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মেধাবীর প্রাণ ঝড়েনি, কেন না সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়া হয়নি। আমরা চাই না এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতের মত সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ যাক মেধাবী শিক্ষার্থীদের। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও চায় না। আর এ কারণেই এই প্রতিরোধ।

আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, অছাত্রদের নিয়ে গড়া ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। অছাত্রদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাঁশ হাতে নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন চাচ্চু এসে যদি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা ছাড় দেবে না এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ আন্দোলনে তাদের পাশে অতীতে যেভাবে ছাত্রলীগ ছিল, এখনো সেভাবেই আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্টে যারা তৎপর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিম তৎপর। আমরা দু’পক্ষকেই দেখেছি লাঠিসোঁটা হাতে ক্যাম্পাসে আসতে। মঙ্গলবারের ঘটনায় ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ থেকে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান প্রক্টর।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আহমদ ২৭ মে, ২০২২, ৬:০০ এএম says : 0
ছাত্রদল-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এটা শিক্ষর্থীদের করা উচিত হয়নি
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন