শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পরিকল্পনা সঠিক

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২২, ১২:০৬ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে আগামী বাজেটে নির্ধারিত হারে কর দিয়ে এ ধরনের সম্পদ প্রদর্শনের সুযোগ দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর আওতায় বিদেশে স্থায়ী সম্পদ বা নগদ অর্থ আছে অথচ আয়কর ফাইলে প্রদর্শন করা হয়নি, এমন সম্পদ ও অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেয়া হবে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনা, দেশের নাগরিকদের বিদেশে থাকা সম্পদ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ ও বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে এমনটা ভাবা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যেসব টাকা বিভিন্ন সময়ে দেশ থেকে চলে গেছে, সেসব টাকা ফেরত আসবে বলে আশা করি। বিভিন্ন দেশ এ ধরনের সুযোগ দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া এ সুযোগ দেয়ায় দেশটিতে পাচার হওয়া অনেক টাকা ফেরত এসেছিল। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত গ্লোবাল ফিন্যান্স ইন্টিগ্রিটি’র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দশ বছরে ৮১.৭৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। অন্যান্য হিসাব মতে, বিগত দশ বছরে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ কিভাবে ফেরত আনা যায়, এমন প্রক্রিয়ার কথা গত বেশ কিছুদিন ধরে অর্থনীতিবিদরা বলছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় অর্থমন্ত্রী আগামী বাজেটে নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ রাখার পরিকল্পনা করেছেন।

কি পরিমান অর্থ প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া মুশকিল। তবে অর্থপাচারের হার যে দিন দিন বাড়ছে, তাতে সন্দেহ নেই। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অর্থপাচার রোধ ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এতে যে পরিমান অর্থ ফেরত আসুক না কেন, তা দেশের অর্থনীতির জন্যই কল্যাণকর হবে। বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সুযোগ রাখার পরিকল্পনা করায় আমরা অর্থমন্ত্রী অ হ ম মুস্তফা কামালকে ধন্যবাদ জানাই। যদিও অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পরিকল্পনাকে অনৈতিক বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন। তবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, এ সময় দেশে অর্থ থাকা অত্যন্ত জরুরি। অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মানুষের আয় ও খাবার গ্রহণ কমে গেছে। অসংখ্য মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে। অর্থনীতির এ দুরবস্থা সামাল দিতে এবং ডলার সংকট কাটাতে সরকার অপ্রয়োজনীয় বিলাসী পণ্য আমদানি ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য এক রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে ৫ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো কাগজপত্র দেখাতে হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত নেয়ায় কিছুটা হলেও ডলার সংকট মোকাবেলা এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফল আশা করা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, সুযোগ দিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পরিকল্পনা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা কাটাতে তা সহায়ক হবে। অর্থনৈতিক টানাপড়েনের এই পরিস্থিতির মধ্যে ‘ইতি-নেতি’ বিষয় নিয়ে ভাবার সময় নেই। আগে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যদি তা না করা হয়, তবে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হলে সে সময় আরও বেশি অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হবে। অর্থনীতিতে অরাজকতা দেখা দেবে। তাই যেকোনো উপায়ে অর্থনীতি সচল রাখতে হবে। অর্থনীতি যদি সচল অবস্থার মধ্যে থাকে, তখন নেতিবাচক দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা যাবে। অর্থনীতির ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ নেয়াই বাঞ্চনীয়।

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সবপথ অনুসন্ধান করাই এখন মুখ্য বিষয়। সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী যে পরিকল্পনা করেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে দেশের উপকার হবে। এতে বিনিয়োগ বাড়বে, অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষের কাছে কিছুটা হলেও অর্থ যাবে। তাদের দুর্ভোগ কমাতে সহায়ক হবে। এ সময় পাচারকৃত অর্থ কম-বেশি দেশে আসলে তা কাজে লাগবে। গত অর্থবছরের বাজেটে সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। এতে কেউ কেউ নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছে। এ অর্থ অর্থনীতিতে কাজে লেগেছে। একইভাবে পাচারকৃত বিপুল অর্থের যদি অংশবিশেষও দেশে ফিরে আসে, তা অবশ্যই কাজে লাগবে। অন্যদিকে, এটা অর্থ পাচারের হার কামাতেও সহায়ক হবে। আমরা মনে করি, অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে যে পরিকল্পনা করেছেন তা সঠিক ও সময়োপযোগী। এ পরিকল্পনা যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়, দেশের অর্থনীতির জন্য ততই মঙ্গল।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
নাসির ২৮ মে, ২০২২, ১১:০৪ এএম says : 0
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। অথচ এর কোনো সুরাহা হয়নি।
Total Reply(0)
নাসির ২৮ মে, ২০২২, ১১:০৫ এএম says : 0
যারা অর্থ বিদেশে প্রাচার করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলে দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়তো না
Total Reply(0)
নাসির ২৮ মে, ২০২২, ১১:০৭ এএম says : 0
সরকার কতুটুক অর্থ বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে তাও বলা বাহুবল্য। তবে সরকারের উদ্যোগ ভালো
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন