বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ই-জুডিশিয়ারি কত দূর?

সাত মাসেও দাখিল হয়নি প্রতিবেদন : লাঘব হবে দুর্ভোগ-কমবে খরচ

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

রুম থেকে প্রায়ই ‘গায়েব’ হয়ে যায় রেকর্ড। কুষ্টিয়ার মামলার নথি ‘উদ্ধার’ হয় কুমিল্লার সেলফ থেকে। রেকর্ডরুমে থরে থরে নথি সাজানো রয়েছে। অথচ শুনানির মুহূর্তে নথি আদালতে আসে না। পিছিয়ে যায় মামলার শুনানি। শুনানির জন্য তারিখের পর তারিখ পড়ে। প্রতি তারিখে ‘হাজিরা’ বাবদ আইনজীবী বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে আদায় করেন ‘ফি’। মামলাটি কোন পর্যায়ে আছে, পরবর্তী তারিখ কবে, আদালত কী আদেশ দিয়েছেন-ইত্যাদি বিষয়ে বিচারপ্রার্থী থাকেন অন্ধকারে। রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেতে লাগে বহু সময়। আদেশের কপি কোর্টের ডেসপাচ হয়ে সংশ্লিষ্টদের হাতে কবে নাগাদ পৌঁছবেÑ তার নেই নির্দিষ্ট সময়সীমা। আদালত অঙ্গনের জটিল আবর্তে প্রতিনিয়তই নীরব সর্বনাশের শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থী। দুর্ভোগের তো কোনো ইয়ত্তাই নেই। বিচারাঙ্গন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যুগ যুগ ধরে দেশের আদালত অঙ্গনে চলমান নৈরাজ্যকর এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারে ‘ই-জুডিশিয়ারি’। তাদের প্রশ্নÑ বহুল প্রত্যাশিত ‘ই-জুডিশিয়ারি’ কবে প্রতিষ্ঠা হবে?
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ উপমহাদেশে বিচার-ব্যবস্থার ইতিহাস ৫ হাজার বছরের। এ ব্যবস্থায় হিন্দু-মুসলিম ও ব্রিটিশ শাসনামলের ধারাবাহিকতা রয়েছে। এক সময় ভারতে বিচার কার্যক্রম চলত হিন্দু শাস্ত্রনির্ভর। ১১ শতকে উপ-মহাদেশে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয়। সুলতানী এবং মুঘল আমলে শরীয়া অনুযায়ী বিচারকার্যক্রম চলত। বিচার চলত ইসলামী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম এবং কাজীর আদালতে। সম্রাটের আদালত ছিল আজকের ‘সুপ্রিম কোর্ট’। মুঘল শাসন শেষে শুরু হয় ব্রিটিশ শাসন।
১৬শ’ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ব্যবসায়িক বিস্তার, ভারত উপ-মহাদেশ শাসনে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং বিচারকার্য পরিচালনার একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়। ১৬১৬ সালে সুরাট বন্দরে নোঙ্গরকৃত একটি জাহাজে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম ফৌজদারি বিচার কাজ শুরু করে। এক ইংরেজ নাগরিককে খুনের দায়ে গ্রেগরি লেলিন্টন নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ওই বিচারে। ১৬৬১ সালে রাজা দ্বিতীয় চার্লস কোম্পানির আওতাধীন এলাকায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বৃটিশ আইন প্রয়োগের এখতিয়ার দেন। ১৭২৬ সালে রাজা প্রথম জর্জ কোম্পানি কর্তৃক বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্রিটিশ আইনের প্রয়োগ বাধ্যতামূলক করেন। ১৭২৮ সালে কোলকাতা, মাদ্রাজ এবং বোম্বেতে মেয়র’স কোর্ট এবং ‘কোর্ট অব অয়ার’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৭৫৭ সালে পলাশীতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন হয়। এতে ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলা, বিহারের এবং উড়িষ্যা দেওয়ানি লাভ করে। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ সালে ‘বেঙ্গল রেগুলেশন-২ এর মাধ্যমে বর্তমান আদালত ব্যবস্থা চালু করেন। রেগুলেটিং অ্যাক্ট-১৭৭৩ অনুসারে ১৭৭৪ সালের ২৬শে’ মার্চ কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে সুপ্রিম কোর্ট অব জুডিকেচার প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৫৭ সালে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে। শুরু হয় ব্রিটিশ রাজের শাসন। ১৮৬১ সালে ইন্ডিয়ান হাইকোর্টস অ্যাক্ট এর আওতায় ১৮৬২ সালের ১ জুলাই কোলকাতা হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৬০ থেকে পরবর্তী ৫০ বছরে উপমহাদেশে এখন অবধি প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো (দণ্ডবিধি, সাক্ষ্য আইন, ফৌজদারি কার্যবিধি, চুক্তি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, দেওয়ানি কার্যবিধি ও তামাদি আইন) প্রণয়ন হয়। ১৯৩৫ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে সীমিত এখতিয়ারসম্পন্ন ফেডারেল কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। ভারত ও পাকিস্তান-দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৪৭ সালের হাইকোর্ট অব বেঙ্গল অর্ডার অনুযায়ী ঢাকা হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ উত্তরাধিকারসূত্রে যে বিচার-ব্যবস্থা পেয়েছে সেই ব্যবস্থা এবং সেই আদলের ব্যবস্থাপনা দিয়ে চলছে এখনকার বিচার বিভাগ।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির মনে করেন, শত শত বছর ধরে চলে আসা এ বিচারব্যবস্থা তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে বিকল প্রায়। বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, বিদ্যমান অ্যানালগ ব্যবস্থা ন্যায়বিচারের পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে ঝুলে আছে অন্তত ৩৯ লাখ মামলা। অপচয় হচ্ছে কর্মঘণ্টা। বিচারপ্রার্থীকে গুণতে হচ্ছে অপরিমেয় অর্থ। মামলার রায়-আদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে পৌঁছতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং এমনকি মাসও লেগে যায়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশে হয় অপ্রত্যাশিত বিলম্ব। রায় ঘোষণার ৩ বছর পর ‘গুলশান ক্লাব মামলা’র রায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৬ মাস পর ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। রেকর্ড রুমে অ্যানালগ ব্যবস্থাপনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ নথি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নথি গায়েব হওয়া এখন প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন একজন দণ্ডিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৫ বছর আপিল করতে পারেনি। অধিকন্তু, আদালতে দুরবর্তী সাক্ষী/আসামি/অন্যান্য পক্ষের শারীরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে ভুক্তভোগী বিচারপ্রার্থীদের মামলার চূড়ান্ত ফলাফল/ডিক্রি পেতে অপেক্ষা করতে হয় যুগের পর যুগ। বিচারাঙ্গনের দীর্ঘসূত্রিতা থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় সামগ্রিক বিচার কার্যক্রমকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা। সহজ কথায়-‘ই-জুডিশিয়ারি’ প্রতিষ্ঠা করা।
আলোচিত এই আইনজীবীর মতে, সকল যোগাযোগ, ফাইলিং, সাক্ষ্য-প্রমাণ রেকর্ডিং ও সংরক্ষণ, মামলার নথি সংরক্ষণ, আদেশ-রায় প্রেরণ ও প্রদর্শন ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। ক্ষেত্রবিশেষে পক্ষদ্বয় অডিও-ভিডিও’র মাধ্যমে শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। মামলার নথি, আদেশ, রায়সহ অনান্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহৃত হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বার বার ই-জুডিশিয়ারির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।
তথ্য মতে, প্রতিবেশী ভারতের ‘ই-জুডিশিয়ারি’ পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং সিঙ্গাপুর ই-জুডিশিয়ারিতে পদার্পণ করেছে এক দশক আগে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ২০০১ সাল থেকে মামলার রেকর্ড, আদেশ, রায় অনলাইনে মিলছে। মামলার যুক্তিতর্কের অডিও ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিচার ব্যবস্থায় ই-কোর্ট ব্যবস্থাপনায় চলছে।
এ বাস্তবতায় দেশের বিচারাঙ্গনে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ প্রবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ফরহাদউদ্দিন আহমেদ ভুইয়া একটি রিট করেন। শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি আদালতে ই-জুডিশিয়ারি ও ই-কোর্ট রুম দ্রুত স্থাপনে কেন নির্দেশ দেয়া হবে নাÑ এই মর্মে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই সঙ্গে ৯০ দিনের মধ্যে ই-জুডিশিয়ারি স্থাপনের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেন। এ ধারাবাহিকতায় গতবছর ২১ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ ই-জুডিশিয়ারি ও ই-কোর্ট রুম দ্রুত স্থাপনে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে ওই বছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। ওই নির্দেশনার ৭ মাস অতিক্রান্ত হলেও এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল হয়নি।
অ্যাডভোকেট ফরহাদউদ্দিন আহমেদ ভুইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠা হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন বিচারপ্রার্থীরা। তারা অনর্থক হয়রানি এবং অর্থ ব্যয় থেকে রেহাই পেতেন। বিচারক, আইনজীবী এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই এ থেকে উপকৃত হবেন। ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠা হলে এটি হবে দেশের বিচার বিভাগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তিনি বলেন, এখন তো নিম্ন-আদালতে আসামিদের সশরীরে হাজিরা দিতে হয়। ই-জুডিশিয়ারি হলে কারাগার থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দিতে পারবেন। হাজিরার সময় বিচারকের নিয়ন্ত্রণে এভিডেন্স ক্যামেরা থাকবে। বিচারককে কোনো নোট নিতে হবে না। ৩/৪টি কম্পিউটার মনিটর থেকে বিচারক, আসামি, আইনজীবী, প্রসিকিউশন সবাই স্ক্রিনে কার্যক্রম দেখতে পারবেন। রেকর্ড রুম থেকে প্রায়ই নথি গায়েব হয়ে যায়। এই অবস্থার অবসান ঘটবে। নকল তুলতে অনেক ভোগান্তি হয়। ই-জুডিশিয়ারিতে রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিচারপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্টরা আদেশে পেয়ে যাবেন। মামলা ফাইল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অটোমেশন পদদ্ধিতে বিচারপ্রার্থীর মোবাইলে মামলার স্মারক নম্বর চলে যাবে।
ই-জুডিশিয়ারি রিটের অগ্রগতি প্রতিবেদন সম্পর্কে ফরহাদউদ্দিন আহমেদ ভুইয়া বলেন, অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল হলে নিশ্চয়ই আমিও একটি কপি পেতাম। এখন পর্যন্ত কোনো কপি পাইনি। শিঘ্রই বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনব।
এদিকে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ই-জুডিশিয়ারি আকস্মিকভাবেই চালু করা সম্ভব নয়। আমরা এরই মধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। এখন উচ্চ আদালতের উভয় বিভাগের মামলার তথ্যাদি, দৈনন্দিন কার্যতালিকা সুপ্রিম কোর্টে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা সম্ভব। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে জামিন আদেশ যাচাই করা যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়, আদেশ প্রদর্শিত হয়। ২০১৫ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট অনলাইন বুলেটিন প্রকাশিত হচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলার আদেশ, নির্দেশনা অনলাইন নোটিশ বোর্ডে পাওয়া যায়। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়। জুডিশিয়াল পোর্টালে দেশের বিভিন্ন মহানগর এবং জেলায় আদালতসমূহে কর্মরত জুডিশিয়াল অফিসারদের তথ্যও মিলছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের অনলাইন নোটিশ বোর্ডে উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ এবং নিম্ন আদালতে জুডিশিয়াল অফিসার নিয়োগ, বদলি, ছুটিসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ আদেশ অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ‘ই-জুডিশিয়ারি’র সবগুলো বৈশিষ্ট্যই বাস্তবে রূপ দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন