শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বন্যা মোকাবেলায় আগাম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

দেশে আগাম বন্যা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে প্রতি বছর হাওর অঞ্চলে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ফসলাদি তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এ বছর সিলেট ও হাওর অঞ্চলে অস্বাভাবিক বন্যা দেখা দেয়। সিলেট শহরের অনেক এলাকা তলিয়ে যায়, যা ছিল অকল্পনীয়। অসময়ে এ বন্যায় কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। এ বন্যা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের বন্যা হওয়ার পূর্বাভাসে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলেছেন, লা নিনা ও হিমালয়ের হিমবাহ গলার কারণে এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বন্যা হবে। পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তারা বলেছেন, ১৯৮৮, ১৯৯৮ এবং ২০১৬ সালে বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল লা নিনা শক্তিশালী থাকার কারণে। চলতি বছর মাঝারি মানের লা নিনা’র বছর। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে স্বাভাবিক এবং তার চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হতে পারে। এটাই বন্যার কারণ হয়ে উঠবে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগাম প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন।

আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে সাগর-মহাসগর, বায়ুপ্রবাহ, তাপমাত্রা হৃাস-বৃদ্ধিসহ আবহাওয়ার সার্বিক গতি-প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে ঝড়-ঝঞ্ঝা, খরা, বৃষ্টি ও বন্যার আগাম ধারণা করা যায়। বিশ্বের কোন অঞ্চল এবং কোন দেশ এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে, তা বলে দেয়া যায়। এজন্য উন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো একে অপরের সাথে আবহাওয়ার তথ্য নিয়মিত বিনিময় করে থাকে। পার্শ্ববর্তী ভারতের সাথে আবহাওয়া সর্ম্পকিত তথ্য বিনিময়ের সমঝোতা আমাদের রয়েছে। অথচ খুব কম তথ্যই ভারত থেকে পাওয়া যায়। ভারতের অনীহা এ জন্য দায়ী। অন্যদিকে আমাদের আবহাওয়া অফিস যথেষ্ট সচেতন নয় বলে প্রতীয়মান হয়। যেহেতু আমাদের দেশ ভাটিতে, তাই উজানে থাকা ভারতের বন্যা ও ঢল এদিকেই আসবে। এক্ষেত্রে আবহাওয়া অফিসকে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত তথ্য জানানো জরুরি। ভারত থেকে নেমে আসা ঢল সম্পর্কিত আগাম তথ্য থাকলে হয়তো অসময়ের বন্যা থেকে ফসলাদি ও সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করা যেত। এ তথ্য না থাকায় আগাম ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন ও মাসিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। তবে তা খুবই সংক্ষিপ্ত। এতে বিস্তারিত কিছু থাকে না। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও বৃষ্টি সর্ম্পকিত আগাম বিস্তারিত বিবরণ এবং সতর্কবার্তা দেয়া ও গুরুত্বের সাথে তা প্রচার করা উচিৎ। এতে সাধারণ মানুষের পক্ষে আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হতে পারে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এ বছর লা নিনা’র বছর হওয়ায় এখন থেকেই অতি বর্ষণ ও বন্যার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। ফসলাদি, গবাদি পশু, বসত বাড়ি রক্ষায় যাতে আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণকারী যেসব বাঁধ রয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো রয়েছে কিনা, নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা আছে কিনা, তা এখন থেকেই মনিটর করতে হবে। বরাবরই দেখা গেছে, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার শুরুতেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ভাঙনপ্রবণ এলাকায় ব্যাপক ধস নামে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষ ফসলাদি ও ঘরবাড়ি রক্ষার্থে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বানের পানি ঠেকাতে বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়ে। অথচ এসব বাঁধ সংরক্ষণ, সংস্কার এবং টেকসই রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয়টি প্রতিবছরই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। শত শত কোটি টাকায় নির্মিত বাঁধ মাঝারি মানের বন্যায় ভেসে ব্যাপক অঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না।

বিশ্বে এখন খাদ্যসংকট প্রকট হয়ে উঠছে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা আগাম সতর্ক বার্তা দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের কোনো এলাকায় দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। আফ্রিকা অঞ্চলে দুইশ’ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের হুমকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও হু হু করে বাড়ছে। এ প্রেক্ষিতে, আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করা ছাড়া বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি সহসা পূরণ করা সম্ভব নয়। তার উপর আগাম বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সামনে আমন ধান রোপনের মৌসুম। এ অবস্থায় বড় ধরনের বন্যা দেখা দিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এ প্রেক্ষিতে, বন্যাপ্রবণ এলাকায় এখন থেকেই প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাঁধ সংস্কার থেকে শুরু করে নদীভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আবহাওয়া অফিসকে আরও সতর্ক হয়ে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। যেহেতু বন্যার শুরু হয় ভারত থেকে, তাই দেশটির আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত তথ্য বিনিময় করার ব্যবস্থা নিতে হবে। খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় উৎপাদনের ওপর যেমন জোর দিতে হবে, তেমনি বন্যা-বৃষ্টি থেকে ফসল, মৎস্য খামার, গবাদিপশু, বাড়িঘর রক্ষার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন