বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নৌ যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ২৪ হাজার কিলোমিটার

হাওরের নদী খনন প্রকল্পে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

স্থলপথের পাশাপাশি নৌপথেও যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সারাবছর নৌযান চলাচল, বন্যার প্রবণতা হ্রাস, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষি ও সেচ কাজে সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে হাওর অঞ্চলে নৌপথগুলো ড্রেজিং করতে নতুন প্রকল্প নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

প্রকল্পটি চলতি ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। হাওরের নদী খনন প্রকল্পে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশে মোট ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৬৩ সাল থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার ছিল। যা বাংলাদেশ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। ১৯৮৯ সালে নসালটিং ফর্ম যখন ডিএইচভি ব্যাপক জরিপ করে, তখন নৌপথের নাব্য হ্রাস পেয়ে ৬ হাজার কিলোমিটার হয়। সারাদেশের নদীগুলো দ্বারা প্রতিবছর বন্যায় ৫ দশমিক কিউসেক পানি এবং ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন পলি পরিবাহিত হয়, যা সারা বিশ্বের পরিবাহিত পলির ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এর ফলে নদীগুলো ক্রমান্বয়ে মৃত হয়ে পড়েছে এবং নাব্য নৌপথের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশের নদীগুলোর নাব্য হারাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে পানিপ্রবাহ হ্রাস, ক্রস বাউন্ডারী প্রবাহ হ্রাস, পলি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং জোয়ারের প্রবাহ কমে যাচ্ছে।
অপর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে নৌপথের নাব্যতার পরিমাণ বর্ষাকালে ৬ হাজার কিলোমিটার এবং শুকনো মৌসুমে ৩ হাজার ৪ শত কিলোমিটার। দেশে স্বাধীরতার আগে ছিল বর্ষকালে ৮ হাজার ৪ শত কিলোমিটার এবং শুকনো মৌসুমে ছিল ২ হাজার ৩ শত কিলোমিটার। ২০১০- ১১ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৩ শত কিলোমিটার নৌ-পথ পুনরুদ্ধার করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এবার হাওরের নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো খননের উদ্যোগ নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে একইসঙ্গে হাওর এলাকায় বন্যার প্রবণতা কমবে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে, মাছ উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষি জমিতে সেচ কাজে তা সহায়ক হবে এবং রাজধানীর সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বাড়বে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এবিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পটি গত ১০ মে একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম উপজেলার জনসাধারণ নৌপথে ভৈরব হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। এ অঞ্চলটি হাওর বেষ্টিত হওয়ায় নৌপথেই প্রতিদিন যাত্রীবাহী লঞ্চসহ মালামালবাহী অসংখ্য কার্গো জাগাজ চলাচল করে থাকে। এছাড়া স্থলপথে যোগাযোগ সীমিত হওয়ায় নৌপথই এলাকার অন্যতম যোগাযোগমাধ্যম। নদী খননের ফলে হাওরের সঙ্গে নৌপথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে। আমাদের ড্রেজিং বিভাগ বাস্তবায়ন করবেন।
বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদী, নামাকুড়া নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর অংশ বিশেষের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩৫১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে অনুমোদন দিয়েছে। তার এর আগে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) এবং বিআইডব্লিউটিএর জরিপ শাখা ও প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত আন্তঃসংস্থা কারিগরি কমিটির সুপারিশের আলোকে হাওরের নদী খননের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শেখ মো.শরীফ উদ্দিন এনডিসি (পরিকল্পনা) ইনকিলাবকে বলেন, দেশে যেভাবে রেল ও সড়কপথের উন্নয়ন হয়েছে সেইভাবে নৌপথের উন্নয়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নৌপথ উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় হাওরের নদীগুলো খনন করা হবে। ফলে হাওরের সঙ্গে ঢাকার নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে কিছু নদী খনন করা হবে। এর মধেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাস হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে হাওরের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বাড়বে। হাওরে এটা দরকার। প্রকল্পে সার সংক্ষেপে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদী, নামাকুড়া নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর অংশ বিশেষের খননের মাধ্যমে নৌপথ উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩০ লাখ ঘনমিটার মাটির ডাইক, ২৫টি নেভিগেশনাল এইডস সংগ্রহ, একটি জিপ, একটি ডাবল পিকআপ কেনা হবে। জরিপ কাজ, ফসলের ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে। ১০৭ লাখ ঘনমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩৬ লাখ ঘনমিটার সরকারি ড্রেজার ব্যবহার করা হবে বাকি কাজে বেসরকারি ড্রেজার ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও ৯১ লাখ ঘনমিটার মেইনটেইন্সে ড্রেজিং করা হবে। নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কিছু নদী খনন করা হবে।
বোলাই নদী খনন প্রকল্পে বলা হয়, মিঠামইন উপজেলার বাউলাই নদীর স্থানীয় নাম বোলাই। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির প্রবাহ অনেকাংশে কমে যায় এবং নদীর তলদেশে পলি জমার কারণে চারিগ্রাম থেকে বরকান্দা অংশ পর্যন্ত প্রতি বছর শুকিয়ে যায়। নদীতে শুকনো মৌসুমে পানি না থাকার কারণে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য চাষ এবং কৃষি কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীর গড় প্রশস্ততা ১২০ মিটার।
শ্রীগাং নদী খনন প্রকল্পে বলা হয়, মিঠামইন উপজেলার শ্রীগাং নদীর স্থানীয় নাম শিংগুড়ি। পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমে এটি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। নদীর গতিপথ অধিকাংশই হাওর এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্ষাকালে পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে দুই পাশ প্লাবিত হয়ে যায়, তখন হাওর ও নদীর মধ্যে কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না। নদীর গড় প্রশস্ততা ৬০ মিটার।
ধনু নদী খননের প্রস্তবানায় বলা হয়, মিঠামইন উপজেলার ধনু নদীর স্থানীয় নাম ঘাড়াউতরা। বর্ষা মৌসুমে তীব্র স্রোতের কারণে মিঠামইন উপজেলার ভাঙন সৃষ্টি হয়। নদীটির খিদিরপুর মৌজা অংশের ঢাকা অংশে খননের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ লম্বালম্বিভাবে প্রবাহিত করা হলে মিঠামইন উপজেলার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। এই নদীর প্রবাহ ইটনা উপজেলার চৌগাংগা থেকে কুর্শি পর্যন্ত। পলি জমে ভরাট হওয়ার ফলে নদীর প্রশস্ততা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।
লামাখাড়া নদী খনন: ইটনা উপজেলার লামাখাড়া নদীর স্থানীয় নাম নামাকূড়া। নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ থাকে না। নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ চলাচল ব্যহত হচ্ছে।
ধলেশ্বরী নদী খনন: নদীর অবস্থান অষ্টগ্রাম উপজেলায়। ধলেশ্বরী নদীতে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমে নৌ চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দেওগড় ইউনিয়নের আলীনগর বাজার হতে বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নে মেঘনা নদীর মুখ পর্যন্ত অংশে পলি জমার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন