রাশিয়ার উপরে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই বিপাকে পড়েছে ইউরোপিয় দেশগুলো। একদিকে, যেমন তীব্র জ্বালানি সঙ্কটে দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে রাশিয়ার সাথে সমঝোতা করে ইউক্রেন সঙ্কটের সমাধান করতে চাচ্ছে ইইউয়ের দুই প্রধান শক্তি জার্মানি ও ফ্রান্স।
শনিবার ক্রেমলিন প্রেস সার্ভিস জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তার ফরাসি সমকক্ষ ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সাথে টেলিফোন কথোপকথনে কিয়েভের সাথে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মস্কোর প্রস্তুতি নিশ্চিত করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আলোচনা ট্র্যাকের অবস্থার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়েছিল, যা কিয়েভের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। ভ্লাদিমির পুতিন নিশ্চিত করেছেন যে রাশিয়া সংলাপ পুনরায় শুরু করার জন্য উন্মুক্ত।’
রুশ বিরোধী নিষেধাজ্ঞা এবং পশ্চিমের অন্যান্য ভুলের কারণে খাদ্য সরবরাহের সমস্যা হয়েছে, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট টেলিফোন কথোপকথনে বলেছেন, প্রেস সার্ভিস জানিয়েছে। ‘নির্দিষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করে, ভ্লাদিমির পুতিন খাদ্য সরবরাহের সমস্যাগুলির প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করেছেন, যা পশ্চিমা দেশগুলির বিপথগামী অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতির পাশাপাশি তাদের আরোপিত রাশিয়া বিরোধী নিষেধাজ্ঞার ফলাফল ছিল,’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ক্রেমলিন উল্লেখ করেছে, ‘রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর বন্দর থেকে ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানি সহ শস্যের অবাধ রপ্তানির বিকল্প খুঁজে পেতে সাহায্য করতে প্রস্তুত। রাশিয়ান সার এবং কৃষি পণ্যের ক্রমবর্ধমান সরবরাহ বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে, যার আগে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক নিষেধাজ্ঞাগুলি অপসারণ করতে হবে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এর আগে বলেছিলেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর অনেক আগে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে, যেমন মহামারী এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ভুল হিসাব-নিকাশের কারণে। একই সময়ে, ল্যাভরভ যোগ করেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতি সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে, যা সঙ্কটকে আরও খারাপ করেছে।
পুতিন দুই রাষ্ট্রনেতাকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র পাঠানোর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। সতর্ক করেছে, এতে ইউরোপের স্থিতাবস্থা আরওই বিঘ্নিত হবে। মানব-সঙ্কটও দেখা দিতে পারে। মাখোঁ ও শলৎজ মারিউপোলের আজভস্টল কারখানা থেকে ধৃত ইউক্রেনীয় সেনাদের মুক্তির দাবি জানান। সেখানে কোণঠাসা হয়ে আটকে পড়া ইউক্রেনীয় সেনারা পরে রাশিয়ার হাতে বন্দি হয়। তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ২৫০০।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ডনবাসের পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। মারিউপোল একেবারই চলে গিয়েছে রাশিয়ার হাতে। এমনকি, শুক্রবার লিম্যান শহরও দখল করেছে রাশিয়া। শনিবার সে খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, ‘ইউক্রেনের থেকে লিম্যান সম্পূর্ণ রূপে স্বাধীন হল।’
রাতের সাংবাদিক বৈঠকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়া সর্বশক্তি দিয়ে সব সেনা, অস্ত্র নামিয়ে দিয়েছে পূর্ব ইউক্রেনে। সেভেরোডনেৎস্কও রুশ নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার অপেক্ষায়। দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে ফেলেছে তারা। রাশিয়ার হাতে বন্দি হওয়ার মতো পরিস্থিতি আটকাতে ইতিমধ্যেই ওই শহর থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে কিয়েভ। সূত্র: আইনিউজ, তাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন