শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

১০ দিনব্যাপী সারা দেশে কর্মসূচি : এবারও অনুপস্থিত থাকছেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

আজ ৩০ মে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সেই থেকেই তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দিবসটিকে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিবছরই দিবসটি উপলক্ষে তাঁর মাজারে পুষ্পার্ঘ অর্পন, ফাতেহা পাঠ, দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, থাকে কয়েকদিন ব্যাপী কর্মসূচি। এবারও দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ২৯ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সারাদেশে কর্মসূচি পালন করছে।

জিয়াউর রহমান তার ঘটনাবহুল কর্মময় জীবনের কারণেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের দৃঢ়তাসহ প্রভৃতি গুণাবলী এদেশের গণমানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মনসুর রহমান কলকাতায় একজন কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। শৈশব ও কৈশোরের একটি সময় গ্রামে কাটিয়ে জিয়া পিতার সঙ্গে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাবুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সবচেয়ে অধিক খেতাব লাভ করে। সৈনিকজীবনে তিনি যেমন চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন ঠিক জাতীয় সকল সঙ্কটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যখন নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিএনপির দাবি জিয়াউর রহমানই তখন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীরোত্তম খেতাব লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহতের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যূত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয়। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আধিপত্যবাদের শ্যেন দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিল সারা জাতি। এমসয় সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াকে মুক্ত করা হয় এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন তিনি।

গভীর দেশপ্রেমের গুণাবলি দিয়ে জিয়াউর রহমান জাতির মধ্যে নতুন করে জাগরণের সৃষ্টি করেন। দেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান। দেশে ঐক্যের রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একদিকে যেমন চরম বামপন্থীরা স্থান পায় তেমনি চরম ডানপন্থীরাও জায়গা করে নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। মাত্র ছয় বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে ৫৪ বছরের জিয়া বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুঁড়ির অপবাদ থেকে দেশ-জাতিকে মুক্ত করেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জোগান। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার স্মরণকালের নামাজে জানাজায় প্রমাণিত তিনি কত জনপ্রিয় ছিলেন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। প্রতিবছর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শহীদ প্রেসিডেন্টের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও নগরীর পথে পথে দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করতেন কিন্তু ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার পর থেকেই তিনি এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না। যদিও ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে তার বাসভবন ফিরোজাতে থাকলেও শর্ত সাপেক্ষে জামিন থাকায় তিনি এই কর্মসূচিতে থাকতে পারছেন না।

কর্মসূচি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১০দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুয়ায়ি, গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।

আজ শাহাদাতবার্ষিকীর দিনে ভোর ৬টায় দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। সকাল ১১টায় দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মাজারে পুস্পার্ঘ অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবেন। সারাদেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা ও পৌরসহ সকল ইউনিটে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলণ এবং আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে খাবার/বস্ত্র বিতরণ করবে নেতাকর্মীরা।

ঢাকা মহানগরীর ২৭টি স্থানে ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সগযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অসহায়-দুঃস্থ মানুষের খাদ্য দ্রব্য/বস্ত্র বিতরণ করা হবে। এছাড়া শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ ও কালো ব্যাজ ধারণ। সংবাদপত্র এবং অনলাইন পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও পোস্টার প্রকাশ করেছে দলটি।

এছাড়া ১ জুন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ও কৃষক দলের আলোচনা সভা, ৪ জুন তাঁতী দল, ৫ জুন ছাত্রদল, ৬ জুন স্বেচ্ছাসেবক দল ও ৭ জুন মৎস্যজীবী দল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন