শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে শাসকরা

ইমরান খানের অভিযোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া আমদানি সরকার’ উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত তার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রোববার বলেছেন, শাসকরা দেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকিস্বরূপ। তিনি অভিযোগ করেন যে, বর্তমান শাসকদের ‘ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার’ এবং কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সাথে আপস করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

‘দাস ও লুটেরাদের আমদানি করা সরকার’ তিনি কখনই মেনে নেবেন না দাবি করে জনাব খান চরসাদ্দায় দলীয় কর্মী সম্মেলনে বলেন, শাসকরা আমেরিকার নির্দেশে সবকিছু করতে প্রস্তুত, কিন্তু জনগণ তার পক্ষে আছে, কারণ তারা সচেতন। ‘প্রকৃত নেতারা’ পাকিস্তানকে বিদেশী শক্তির দাসত্ব থেকে রক্ষা করবে। জনাব খান ইসরাইলের স্বীকৃতির সুস্পষ্ট উল্লেখসহ এসব অভিযোগ ছুড়েছেন, ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ সম্প্রতি মরক্কো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী পাকিস্তানি প্রবাসীদের একটি প্রতিনিধিদলকে রিসিভ করেছেন বলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে তার বিশেষ ভাষণে মুসলিম বিশ্বের সাথে ইসরাইলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘মহান পরিবর্তন’ সম্পর্কে কথা বলার কয়েকদিন পর।

হারজোগ ডন ডটকমকে ২৫ মে ডাভোসে বলেছে বলে উদ্ধৃত করেছে, ‘এবং আমি অবশ্যই বলতে চাই যে, এটি একটি আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা ছিল। ইসরাইলে এমন সুযোগে আমাদের কোনো পাকিস্তানি নেতা নেই এবং যেসব আব্রাহাম অ্যাকর্ডস থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ ইহুদি এবং মুসলমানরা এ অঞ্চলে একসাথে বসবাস করতে পারে’।

চরসাদ্দা জলসায় জনাব খান বলেন, পিটিআই সরকার রাশিয়ার সাথে ৩০ শতাংশ কম দামে পেট্রোল আমদানির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল, কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের ভয়ে ‘আমদানি সরকার সেই চুক্তি বাতিল করেছে’ এবং পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে।

তিনি ২৫ মে পিটিআই কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপের নিন্দা করার সময় বলেন, পরবর্তী আজাদি মার্চের জন্য, পুলিশের ‘বর্বরতা’ মোকাবেলার জন্য তার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি থাকবে।
‘পিটিআই পরাশক্তির খপ্পর থেকে প্রকৃত মুক্তির জন্য জিহাদ চালাচ্ছে এবং এ কারণে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফেডারেল রাজধানীতে তাদের পদযাত্রা বন্ধ করার জন্য রাস্তায় কন্টেইনার স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু ‘পিটিআই বাঘ’ সরিয়ে দিয়েছে সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে বিক্ষোভস্থলে পৌঁছান।

তিনি বলেন, জনগণ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, বরং ‘প্রকৃত স্বাধীনতার পবিত্র উদ্দেশ্যের জন্য’ তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, এ সংগ্রামে তার দলের নেতাকর্মীরা শহীদ ও আহত হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, মেয়াদ উত্তীর্ণ টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়া হয় এবং বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করা হয়।

ইমরান খান অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ নারী ও শিশুসহ শান্তিপূর্ণ, নিরপরাধ বিক্ষোভকারীদের উপর নৃশংসতা চালিয়েছে এবং বলেছেন যে, ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া আমদানি করা সরকারকে উৎখাত না করা পর্যন্ত’ তার সংগ্রাম চলবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হামজা শাহবাজ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহকে সতর্ক করেন যে, পিটিআই কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপের জন্য জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। কেপির মুখ্যমন্ত্রী মাহমুদ খান, প্রাক্তন ফেডারেল মন্ত্রী মুরাদ সাইদ, দলের নেতা ফজল মোহাম্মদ খানও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

এদিকে, পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধি ইসরাইল সফরের ধারণাকে ‘স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে পররাষ্ট্র দফতর। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দেয়ার সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, পাকিস্তানে অবস্থিত নয় এমন একটি বিদেশী এনজিও কথিত সফরটি আয়োজন করেছিল।

“ফিলিস্তিন ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন। আমাদের নীতিতে এমন কোনো পরিবর্তন নেই যার ওপর সম্পূর্ণ জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে। পাকিস্তান ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অবিচ্ছেদ্য অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। প্রাসঙ্গিক জাতিসংঘ এবং ওআইসি রেজল্যুশন অনুসারে, ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমানা এবং আল-কুদস আল-শরীফকে রাজধানী হিসাবে একটি স্বাধীন, কার্যকর এবং সংলগ্ন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এ অঞ্চলে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির জন্য অপরিহার্য। এফও মুখপাত্র ব্যাখ্যা করেন।

এদিকে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ নিশ্চিত করেছেন যে, দুই সপ্তাহ আগে দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল ইসরাইলে তার সাথে দেখা করেছে এবং প্রতিনিধি দলে দুজন পাকিস্তানি আমেরিকান নাগরিকও ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার মতে, দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে আলোচনার সময় ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও প্রতিনিধি দলের সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ করেননি। হারজোগ বলেন, দুই পাকিস্তানি নাগরিক স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন কিন্তু তারা ‘গর্বিত পাকিস্তানি’ ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকটি ‘অত্যন্ত আন্তরিক’ এবং তিনি আনন্দিতভাবে বিস্মিত হয়েছিলেন, কারণ এর আগে কোনো পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল ইসরাইল সফর করেনি।

এর আগে, পাকিস্তানি-আমেরিকান আনিলা আহমেদ ১২ মে ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের সাথে তার সাক্ষাতের একটি ছবি টুইটারে শেয়ার করেছিলেন। ছবিতে তিনি তাহরিকে পাকিস্তান এবং কায়েদে আজম-এর ওপর তার বাবা কুতুবুদ্দিন আহমেদের লেখা একটি বই প্রেসিডেন্টের কাছে উপস্থাপন করেন। আনিলা আহমেদ একজন রাজনীতিবিদ, লেখক এবং শিক্ষক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার সামাজিক কাজের জন্য বিখ্যাত। তার টুইট ইঙ্গিত করে যে, তিনি ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা প্রতিনিধিদলের অংশ ছিলেন।

পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের অংশ কে ছিলেন তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার না হলেও সাবেক মানবাধিকারমন্ত্রী শিরীন মাজারি পাকিস্তান টেলিভিশনের (পিটিভি) উপস্থাপক ওয়াকার কোরেশিকে প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করার সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, তিনি যেভাবে কাজ করছেন তাকে দেখতে ‘দুঃখজনক’ ছিল। তিনি ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে’ ‘সংবেদনশীল প্রকৃতির’ কাজে যুক্ত রয়েছেন। সূত্র : ডন অনলাইন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন