অমর গানের রচয়িতা, কিংবদন্তি লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গফ্ফার চৌধুরী ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক। তাঁর মতো লেখক ও কলামিস্ট যে কোনো দেশ ও জাতির জন্যে অমূল্য সম্পদ। তিনি তাঁর বেগমান লেখনির মাধ্যমে একটি ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা ও সহিংসতা নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বারবার। তাঁর লেখায় দুর্নীতিদমন করার কথা বা দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার কথা বলেছেন।
তাঁর চিন্তা চেতনা ও লেখায় সাম্যবাদের গন্ধ পাওয়া যেতো, অনেকে মনে করতেন তিনি বাম আদর্শের একজন। গফ্ফার চৌধরীর প্রতিটি লেখাই ছিলো তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। তিনি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী লেখা উপস্থাপনায় মুনশিয়ানা উপলব্ধি করতে পারতেন।
তাঁর কলাম পড়ে গিয়ে শেষ না করে পারা যায় না। তিনি পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মত টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। আমি যতদূর জানি তিনি নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে কাগজে কলমে লিখতে বসতেন।
তিনি বিদেশে থাকতেন। কিন্তু এ দেশের আলো, মাটি, পানি তাঁকে খুব টানতেন। দেশের কথা তিনি কখনো ভুলেন নি। দেশকে নিয়ে সব সময় ভাবতেন যা তাঁর লেখা পড়লেই বুঝা যেতো। দেশের প্রতিটি বিষয়ে তিনি প্রাণবন্ত লেখা উপহার দিতেন। তিনি কোনো দল বা মতের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তবে স্বাধীনতার পক্ষে ও আওয়ামী লীগের পক্ষে লিখতেন। সব শেষে পরিমনিকে নিয়ে কবিতা লিখে আরো বেশি মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। ভাষা সৈনিক ও এ সব্যসাচী লেখক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরে লন্ডন চলে যান এবং এই হত্যাকান্ডের মূল বেনিফিশিয়ারি জেনারেল জিয়া যখন আকার ইঙ্গিতে বঙ্গবন্ধুর নাম লিখতে মানা করেন, তখন তিনি লন্ডন থেকে জিয়ার বিরুদ্ধে কলম ধরেন ও নিয়মিত সমালোচনা করেন। জীবনে নানা ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি তাঁর নামকে নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল করতে পেরেছিলেন। তবে তিনি কখনে হতাশ হননি। বাংলাদেশকে নিয়ে সব সময় সুন্দর স্বপ্ন দেখতেন। রাষ্ট্রকে সব সময় সঠিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিতেন। তাঁর প্রয়াণে জাতি একজন পথপ্রদর্শকে হারালো। আমরা তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন