‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অবিলম্বে আসামীদের গ্রেফতারের পর সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। গতকাল শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে চুয়েট ১৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীসহ প্রকৌশলী সমাজ আয়োজিত মানবন্ধনে এসব কথা বলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিহত প্রকৌশলী সুব্রত সাহার স্ত্রী নূপুর সাহা। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের সংসার ছিল সুখের সংসার। কখনও কোনও দিন কোনও বিষয় নিয়ে মনমালিন্য হয়নি। সে আত্মহত্যা করতে পারেনা। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পরেন। বলেন, অপরাধীরা যতবড় ক্ষমতাশালী হউক না কেন তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানাই। এসময় পাশেই ছিলেন সুব্রত সাহার মেয়ে নবম শ্রেনীর ছাত্রী সুদিপ্তা সাহা ও ভাতিজি বর্ণি সাহা।
গত ২৫ মে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সুব্রত সাহা (৫২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথম থেকেই স্বজন ও সহকর্মীরা অভিযোগ করে আসছেন এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। রমনা থানায় হত্যার অভিযোগে মামলাও হয়। মামলার আসামী করা হয় সুব্রত সাহার দুই সিনিয়র প্রকৌশলী ও হত্যা মামলার আসামী চিফ অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং আশরাফুর রহমান ও ম্যানেজার প্ল্যানিং ও ইঞ্জিনিয়ারিং আজিজার রহমানকে। অজ্ঞাত কারণে এই দুই প্রকৌশলীকে গত ১০ দিনেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
মানববন্ধনে বাবা হারানো সুদিপ্তা বলেন, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই। এসময় সুদিপ্তার চোখে বাবা হারানো শোক দেখে সুব্রত সাহার সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। একই দাবি জানান সুব্রত সাহার ভাতিজি বর্ণি সাহা এবং শ্যালক বিশ^জিৎ সাহা।
নিহত সুব্রত সাহার ভাই ও মামলার বাদী স্বপন সাহা বলেন, আমার ভাই দীর্ঘ ২২ বছর সেখানে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উর্ধ্বতনরা ভাইকে বিভিন্ন চাপে রাখতেন। যারা আমার ভাইকে চাপে রেখেছেন, যারা কাজ আদায় করতে পারেননি, তারাই হত্যা করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে।
প্রকৌশলী নাসিম হাসান বলেন, সুব্রত সাহার লাশ উদ্ধারের ৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও হোটেল কর্তৃপক্ষ পরিবারকে জানাননি। কেন জানানো হয়নি, তার জবাব চাই। তিনি বলেন, হোটেল থেকে জানানো হয়, ছাদ থেকে পড়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তিনি ছাদ থেকে পড়লে তার মুখমণ্ডল ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। মাথা থেতলে যেত। অথচ মুখমণ্ডলে কোনও আঘাতের চিহ্নই নেই। লাশ স্বাভাবিকই রয়েছে। তিনি বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সুব্রত মানসিক রোগী ছিলেন। অথচ কখনই তিনি মানসিক রোগী ছিলেন না। পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর মিথ্যা-বানোয়াট বলে নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলায় উল্লেখিত আসামীদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানাই।
প্রকৌশলী শামসুল জানান, সুব্রতর পরিবারের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক ছিল। তিনি একজন অভিভাবক এবং ভাল বাবা।তিনি বলেন, পুলিশের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হোক।
প্রকৌশলী সালেহ উদ্দীন বলেন, গত ২০ বছর ধরে সুব্রতর সঙ্গে সম্পর্ক। আমার মেয়ে ও সুব্রতর মেয়ে সুদিপ্তা একই সঙ্গে লেখাপড়া করেন। সুব্রত স্বাস্থ্যসচেতনতা ছিল। এট নিশ্চিত উচ্চ মহলের চক্রান্তে সুব্রত সাহাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
প্রকৌশলী শংকু বলেন, সুব্রত সাহা যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি নিজের স্বাস্থ্যেও প্রতিও সচেতন ছিলেন। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন না। সুব্রত সাহার বন্ধু সবুজ বলেন, মৃত্যুর আগের দিন সন্ধ্যায় আমরা এক সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্যান্টিনে চা খেয়িছি। গল্প করেছি। কিন্তু তাকে হতাশ মনে হয়নি। কি এমন হলো যে তিনি ছাদে গিয়ে আত্মহত্যা করবেন ? তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, ইটারকন্টিনেন্টালের সবখানেই সিসি ক্যামেরা থাকার কথা। তিনি কার ডাকেব উপরে গেলেন। সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও নেই। তাহলে হোটেল কর্তপক্ষ কিভাবে বুঝলেন সুব্রত আত্মহত্যা করেছেন। এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন