শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আফ্রিকায় শান্তিরক্ষার মিশনে সামরিক পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২২, ৪:৫০ পিএম

আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলো চীনের ‘সুদূর সমুদ্র অভিযানের’ জন্য একটি পরীক্ষা স্থল হয়ে উঠেছে। বেইজিং এ অবস্থায় নিজেদের ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত করতে চায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একজন গবেষণা সহযোগী পল নান্টুল্যা বলেন, পিপলস লিবারেশন আর্মি নৌবাহিনী এডেন উপসাগরে জলদস্যুতা বিরোধী অভিযানে যোগ দেওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে আফ্রিকায় ৪০টি নৌ টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করেছে।
আফ্রিকায় চীনের সামরিক স্বার্থের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে নান্টুল্যা দেখেছেন, জাতিসংঘ-সমর্থিত অভিযানে যোগ দেওয়ার পর এই অঞ্চলে চীনা নৌবাহিনীর ৭ হাজার জাহাজ এবং অন্য বিদেশি জাহাজ যুক্ত হয়েছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে লিবিয়ায় এবং ২০১৫ সালে ইয়েমেনে আটকা পড়া চীনা নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার অপারেশনে ছিল চীনের কিছু নতুন ধরনের মিসাইল সংযুক্ত জাহাজ। এর মধ্যে লিবিয়ায় উদ্ধার অভিযানে ছিল জুঝো এবং ইয়েমেনে ছিল লিনি এবং ওয়েইফাং।
নান্টুল্যা বলেন, “সোজা কথায়, আফ্রিকা হলো চীনের দূরবর্তী সমুদ্র অভিযানের জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র। পাশাপাশি পিএলএ বন্দরে জাহাজের নোঙর পরিচালনা, যৌথ সামরিক মহড়া এবং সমুদ্র তীরবর্তী সামরিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর ফলে তুলনামূলক কম খরচে পিএলএর আন্তঃকার্যক্ষমতা, বিদেশি বাহিনীর জ্ঞান, নজরদারি এবং বুদ্ধিমত্তা উন্নত হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, “আফ্রিকান জলসীমায় পিএলএর যে অভিজ্ঞতা সঞ্চার হচ্ছে তাতে যুক্তিযুক্তভাবে ভবিষ্যতের আরও জটিল কাজের জন্য এর অবস্থান পোক্ত করছে।”
নান্টুল্যা বলেন, বেইজিং মিশনে তার সবচেয়ে দক্ষ কমান্ডারদের মোতায়েন করেছে। প্রতিটি নৌবহরের নেতৃত্বে কমপক্ষে একজন রিয়ার অ্যাডমিরাল রয়েছেন। ২০১৪ সালে আফ্রিকার জলসীমায় পিএলএর ১৮ তম মিশনে প্রথমবারের মতো একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত আক্রমণকারী সাবমেরিন যুক্ত করা হয়েছিল। এটি উদ্বেগ বাড়িয়েছে, কারণ সাবমেরিনগুলো সাধারণত জলদস্যুতাবিরোধী অভিযানের জন্য উপযুক্ত নয়।
আফ্রিকার জলসীমায় অনেক আধুনিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে পিএলএ। এর মধ্যে রয়েছে টাইপ ০৫৪ মিসাইল ফ্রিগেট, টাইপ ০৫২ডি, অ্যান্টি-সাবমেরিন জেড-৯সি হেলিকপ্টার, টাইপ০৭১ উভচর জাহাজ ঘাট এবং পুনঃসংস্কার করা টাইপ ৯০৩ জাহাজ।
নান্টুল্যা আরও বলেন, চীনের রণতরীর একটি গ্রুপ এখনও আফ্রিকায় যাত্রা করেনি। তবে বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, জিবুতির হালনাগাদ করা জেটি ঘাট ভবিষ্যতে বিমানবাহী রণতরীগুলোর জায়গা সংকুলানের যথেষ্ট বড়।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এলিয়ট স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক ডেভিড শিনও একই মত পোষণ করেছেন গবেষক নান্টুল্যার সঙ্গে।
তিনি মনে করেন, জিবুতিতে তার সামরিক ঘাঁটির সঙ্গে চীনের দূর সমুদ্রের পরীক্ষামূলক অপারেশনের ঘাটি হলো আফ্রিকা। সোমালিয়ার জলদস্যুতা বেশ কয়েক বছর ধরে একটি গুরুতর সমস্যা ছিল না, তবুও চীন নিয়মিতভাবে এডেন উপসাগরে তার সবচেয়ে আধুনিক ভাসমান জাহাজ এবং মাঝে মাঝে একটি সাবমেরিনসহ মিশন পাঠিয়েছে। জলদস্যুতা মোকাবিলায় সাবমেরিনের প্রয়োজন নেই।
শিন বলেন, “চীন দূর সমুদ্রে তার নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য জিবুতিকে ব্যবহার করে এবং জটিল পরিস্থিতিতে জাহাজ এবং সামরিক সরঞ্জামের পরীক্ষা চালায়। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের আগে ব্যাপকভাবে পিএলএ নৌবাহিনী আফ্রিকার চারপাশে জাহাজ ঘাট বৃদ্ধি করেছে।
গত সপ্তাহে গিনি উপসাগরের আশেপাশের ১৯টি দেশের নৌ ও কোস্টগার্ড নেতা এবং প্রতিনিধিদের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চীনের নৌবাহিনী সতর্ক করেছে, বৈশ্বিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। গিনি উপসাগরে জলদস্যুতা কার্যক্রমও বাড়ছে।
পিএলএ নৌবাহিনীর কমান্ডার অ্যাডমিরাল ডং জুন বলেন, বেইজিং কর্মীদের প্রশিক্ষণ, অন্যান্য ক্ষেত্রে সহায়তা বৃদ্ধি, তথ্য আদান-প্রদান, সামুদ্রিক উদ্ধার অভিযানে সহায়তা, নিয়মিত জাহাজ পরিদর্শন এবং প্রাসঙ্গিক দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন বিনিময় করতে ইচ্ছুক।
তার ভাষ্য, চীন সামরিক একাডেমি, চিকিৎসা সেবা এবং হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষার মধ্যে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতা সম্প্রসারণেও ইচ্ছুক।
নটিংহাম ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের সহকারী অধ্যাপক বেঞ্জামিন বার্টন বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক, তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মতো আফ্রিকা চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে নেই। ওইসব অঞ্চলে পিআরসি’র কর্মকাণ্ডগুলো আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণ অস্থিতিশীলতার কারণে কিংবা সোমালি জলদস্যুতার কারণে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলা করতে দেশগুলোর ক্ষমতার অভাবের কারণে, দুঃখজনকভাবে চীনকে এই সুযোগ দিয়েছে আফ্রিকা।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন