বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নিহত অগ্নিযোদ্ধাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

সীতাকুন্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অতীতে তাজরিয়ান ফ্যাশন ও রানাপ্লাজা দুর্ঘটনায় অনেক বেশি মানুষ হতাহত হলেও বিএম ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মুজদ থাকায় এখানকার দুর্ঘটনা ও বিস্ফোরণের প্রকৃতি এবং পারিপার্শ্বিক প্রভাব অনেক বেশি। সোমবার পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। চারশতাধিক আহত ব্যক্তির মধ্যে দুই শতাধিক আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। অনেকের কোনো হদিস পাচ্ছে না আত্মীয় পরিজনরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু আর হতাহতদের উদ্ধার এবং আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিযোদ্ধাদের এমন মৃত্যু আর কখনো দেখা যায়নি। বলা যায়, তারা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। তাদের এই মৃত্যু হয়েছে, মূলত ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মত দাহ্য পদার্থের মজুদ থাকার কারণে। ডিপো কর্তৃপক্ষ আগুন লাগার পরও তাতে যে এ ধরনের ভয়াবহ দাহ্য পদার্থ রয়েছে, তা অগ্নিনির্বাপণকারীদের জানায়নি। এ এক অমার্জনীয় এবং নিষ্ঠুর ঘটনা। বলা যায়, স্বেচ্ছায় তাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে ‘হত্যাকান্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর শিকার হয়েছে, রানা মিয়া, শাকিল তরফদার, আলাউদ্দিন, এমরান, মিঠু দেওয়ান, মনিরুজ্জামান, নিপন, রমজানুল ও সালাউদ্দিন। এছাড়া আরো অন্তত ৩ জন অগ্নিনির্বাপন কর্মীর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এমন তাজা প্রাণ মুহূর্তে ঝরে পড়ে দেশের এক করুণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের এমন করুণ মৃত্যু হলেও তারা জাতীর বীরযোদ্ধা হিসেবে মানুষের মনে থেকে যাবে।

বিএম ডিপোতে অননুমোদিতভাবে কেমিক্যাল মজুদ রাখা এবং তার যথাযথ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার বিষয়টি ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা এই ডিপোর মালিক বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। দেশের বন্দরগুলোতে এবং আশপাশে থাকা কন্টেইনার ডিপোগুলোতে আমদানি-রফতানি পণ্যের নামে-বেনামে হয়তো এমন অনেক কিছুই পাওয়া যাবে, যেখানে বিশেষ ব্যবস্থা ও চিহ্নিতকরণ ছাড়াই কন্টেইনার ভর্তি দাহ্য পদার্থ এমনকি বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ থাকতে পারে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন নামে এসব পণ্য আমদানি করা যেনতেন প্রকারে খোলা আকাশের নিচে অন্যান্য সাধারণ পণ্যের সাথে এসব পণ্য ডাম্পিং করার মধ্য দিয়ে তারা পুরো ডিপো এবং আশপাশের এলাকা ও জনপদকে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সাড়ে ৬শ’ মিটার লম্বা তেইশ একর জমিতে গড়ে তোলা ডিপোতে পণ্য বোঝাই হাজার হাজার কন্টেইনারের মধ্যে ঠিক কি ধরনের কত সংখ্যক পণ্য রয়েছে, তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। সেনা, নৌ ও র‌্যাব-পুলিশের ৫০০ সদস্যের বিশেষ টিম উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে আরো ৪টি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভর্তি কন্টেইনার চিহ্নিত করেছেন। ডিপোর অভ্যন্তরে দাহ্য কেমিক্যালের কন্টেইনারের সঠিক সংখ্যা এবং অবস্থান নিশ্চিত হতে না পারার কারণেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বেশি বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। বিএম ডিপোতে আগুন নিভাতে গিয়ে নিহত এবং নিখোঁজ অগ্নিযোদ্ধারা জাতির সূর্য সন্তান। দেশের মানুষের জানমাল রক্ষার শপথ নিয়ে মহৎ পেশায় জড়িত এইসব কর্মীরা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা নিউ ইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে বিমান হামলার পর আমেরিকান ফায়ারফাইটারদের দু:সাহসিক ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেই ঘটনায় ৩৪৩ জন ফায়ারফাইটার জীবন দিয়েছিল। গত ২০ বছর ধরে নাইন-ইলেভেন স্মরণসভায় নিহত ফায়ারফাইটারদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে মার্কিনীরা। সেখানে অনেক মুসলমান ফায়ারফাইটার ও উদ্ধারকর্মীও মৃত্যুবরণ করেছে। ইসলামি শরিয়া মোতাবেক তারা শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা লাভ করেছে।

সীতাকুÐের ঘটনায় যেসব অগ্নিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছে তারা দেশের বীরসন্তান। তবে যথাসময়ে তাদেরকে সঠিক তথ্য না দিয়ে যারা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদের কোনোভাবেই রেহাই দেয়া যাবে না। নিজেদের অপরাধ ও অন্যায় ঢাকার জন্য কেউ কেউ এখন নাশকতা বা ষড়যন্ত্র তত্ত¡ খুঁজছে। এ ধরনের অজুহাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর সাথে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেসব বীর অগ্নিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের পরিবার ও সন্তানদের প্রতি শুধু সহানুভূতি ও সমবেদনা দেখালে হবে না, তাদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন দিতে হবে। চোখের সামনে যে যোদ্ধারা নিজের জীবন তুচ্ছ করে, সন্তান ও পরিবারের কথা না ভেবে মানুষকে বাঁচাতে ঝাপিয়ে পড়েছে, তাদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাদেরকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সম্মান দিতে হবে। আহত দমকল কর্মী এবং সাধারণ শ্রমিকদের উন্নত চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের আর কোনো ডিপো বা কন্টেইনার ইয়ার্ডে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। একদল অগ্নিযোদ্ধা এবং অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, শত শত কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি, পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ শুধুমাত্র টাকার অংকে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে এখন থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
আলি ৮ জুন, ২০২২, ১:২০ এএম says : 0
সরকারের উচত হবে নিহত ও আহতদরে পরিবারের দেখভাল করা
Total Reply(0)
আলম ৮ জুন, ২০২২, ১:২২ এএম says : 0
নিহত ও আহতদরে পরিবার যাতে কোনো সময় কষ্ট না থাকতে হয় সে ব্যবস্থা করে দেওয়া
Total Reply(0)
আলম ৮ জুন, ২০২২, ১:২৩ এএম says : 0
সাথে সাথে দোষীদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন