রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন, শ্যামপুর থানার এসআই উৎপল কুমার অপু, কনস্টেবল মো. সিরাজুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আইনজীবী নিশান ও তার স্বামী রনি মোটরসাইকেলে করে জুরাইন রেলগেটের রাস্তার উল্টো পথে যাচ্ছিলেন। এ সময় কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন ও ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজ তাদের গতি রোধ করেন। এ সময় নিশান নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে সার্জেন্ট আলী হোসেনের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে রনি মোটরসাইকেল থেকে নেমে সার্জেন্ট আলী হোসেনকে ধাক্কা দেন। এ সময় আইনজীবী নিশান চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় কয়েকজন সার্জেন্ট আলী হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে। তখন শ্যামপুর থানার পুলিশের এসআই উৎপলসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনা শান্ত করতে এলে দুর্বৃত্তরা তাকেও ছুরিকাঘাত করে এবং ট্রাফিক বক্সে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় টিআই বিপ্লব ভৌমিকসহ অন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বক্সের ভেতরে দরজা বন্ধ করে আত্মরক্ষা করেন। পরে শ্যামপুর ও কদমতলী থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত পুলিশ সার্জেন্ট আলী হোসেনসহ তিন পুলিশ সদস্যকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রনিকে আটক করেছে শ্যামপুর থানার পুলিশ। ওয়ারী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। এ ঘটনায় ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, উল্টো পথে যাওয়ায় ট্রাফিক পুলিশ তাকে বাধা দেওয়ায় যে হামলা করা হয়েছে, তা ন্যক্কারজনক। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখারুল আলম জানান, মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টোপথে আসছিল একটি মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলে এক নারীসহ দুজন আরোহী ছিলেন। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন কাগজপত্র দেখতে চাইলে মোটরসাইকেল চালক দুর্ব্যবহার শুরু করেন এবং পোশাক পরা অবস্থায় অন ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরে দুজনকে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে সঙ্গে থাকা নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আশপাশে থাকা লোকজন নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে সার্জেন্টকে মারধর করে এবং পুলিশ বক্স গুঁড়িয়ে দেয়। অভিযুক্ত মোটরসাইকেল চালক সার্জেন্টের বুকের উপর পা তুলে চেপে বসে। এ সময় ঘটনাস্থলে আসা উৎসুক জনতার মধ্য থেকে একজন সার্জেন্টের হাতে ছুরিকাঘাত করে। সার্জেন্টকে উদ্ধারে আসা পুলিশ সদস্যদের মারধর ও ধাওয়া করা হয়। পরে শ্যামপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়ে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে।
তিনি আরো জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যের মধ্যে সার্জেন্ট আলী হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাতে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন