প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে কেন ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হবে না -এই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পৃথক আরেকটি রুলে ভুক্তভোগী নারীর চিকিৎসায় অবহেলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না -জানতে চাওয়া হয়েছে।
১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি শেষে গতকাল বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল দেন। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীকে যথোপযুক্ত হাসপাতালে স্থানান্তর করে উন্নত চিকিৎসা দিতে বরিশাল সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে (ডিজি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন, জনস্বার্থে রিট দায়েরকারী অ্যাডভোকেট জীবন নেতা মুক্তা। স্বাস্থ্য সচিব, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল মেডিক্যালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদেরকে রিটের জবাব দিতে হবে।
রিটে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছর ১৬ এপ্রির রাতে সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা জিয়াউল হাসানের স্ত্রী শারমিন আক্তার শিলা। অস্ত্রোপচারের পর থেকে পেটে ব্যাথা অনুভব করেন তিনি। এ জন্য সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছু দিন পর পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করেন। পেট অস্বাভাবিক রকম ফুলে যায়। ২১ মে পেট ফেটে হয়ে রক্ত-পুঁজ বের হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ২২ মে পুনরায় তার অস্ত্রোপচার করা হয়। ইতিপূর্বে অস্ত্রোপচারের সময় পেটে গজ রেখে দেয়ায় এ পরিস্থিতি হয় শারমিনের। এ সময় শারমিনের বাবা আব্দুর রব সিকদার বলেন, সরকারি হাসপাতালে মেয়ে এনে ভর্তি করিয়েছি সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানে ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ে মরতে বসেছে। এভাবে হলে মানুষ যাবে কোথায়? আমি বিচার চাই এই অপচিকিৎসা দেয়া ডাক্তারের। তিনি বলেন, অপারেশনের পর যখন আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই মেয়েকে দেখাই। সেখানে বলে নাড়ি প্যাঁচ পড়েছে। ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। তারা নতুন করে ওষুধ দেন। কিন্তু মেয়ে সুস্থ হয় না। এক পর্যায়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করালে সেখানের চিকিৎসক জানান পেটের ভেতর গজ রয়ে গেছে। সেটি জরুরিভিত্তিতে অপসারণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি করালে ২২ মে সকালে অপারেশন করা হয়। পুনরায় অস্ত্রোপচার করে গজ বের করা শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজিমুল হক। তখন বলেন, দীর্ঘদিন গজ থাকায় পেটের ভেতরে পচন ধরে নাড়ি ফুটো হয়ে গেছে। অপারেশন করা হয়েছে। তার সার্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন