বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই’ কথাটি চিরতরে বিলুপ্ত করা হবে

জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রস্তাব সংসদে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতায় আগ্রহী ফিনল্যান্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটসহ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৯২ হাজার কোটি টাকা (১ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাজেট সাপোর্ট সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নির্মাণ ও দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামোর উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতীয় সংসদ।জাতীয় সংসদের কার্যসূচি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ১৪৭ বিধির এ সাধারণ প্রস্তাব সংসদে তুলেন। ওই প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা সংসদ গ্রহণ করে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরো জানান, কোভিড-১৯ জনিত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী অর্থ বছরে (২০২২-২৩) ৫’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪৬ হাজার কোটি টাকা) বাজেট সাপোর্ট হিসেবে গ্রহনের কাযর্ক্রম চলছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকার দলীয় সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী এক হাজার মর্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট ব্যয়ের খাত উল্লেখ করে বলেন, এ বাজেট সাপোর্ট শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রদান এবং সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় হবে। তিনি আরো জানান, সরকার জনগণের সুপরিকল্পিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনাসহ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাথা গোঁজার ঠাই নাই’ এ কথাটি দেশ থেকে চিরতরে বিলুপ্ত করার জন্য আমরা বদ্ধ পরিকর। পুনর্বাসিত পরিবার ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সামগ্রিকভাবে আরো সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারিতে নাজুক বিশ^ অর্থনীতিকে গুরুতর চাপে ফেলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আমি প্রথমেই এই যুদ্ধকে যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করার জন্য সকলকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। এ যুদ্ধ যত দ্রুত বন্ধ করা সম্ভব হবে বিশ^ খাদ্য নিরাপত্তা ও জ¦ালানি সংকটের হুমকিকে কাটিয়ে উঠা সম্ভবপর হবে। তিনি আরো জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের আকাশছোঁয়া দামের কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলোতে সৃষ্ট খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে এই গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব আমাকে আমন্ত্রণ জানান

সাড়ে ৩৫ লাখ গৃহহীন পুনর্বাসিত : সরকার দলীয় আরেক সদস্য শহীদুজ্জমান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত সারা দেশের ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ জন গৃহহীন পুনর্বাসিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কোথাও উপযুক্ত খাস জমি পাওয়া না গেলে জমি কিনে হলেও ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমুল মানুষকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের মানুষের ‘মাথা গোঁজার ঠাই নাই’ এ কথাটি চিরতরে বিলুপ্ত করার জন্য আমরা বদ্ধ পরিকর উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, পুনর্বাসিত পরিবার ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সামগ্রিকভাবে আরো সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাতের পর সেন্টমার্টিন পরিদর্শনে গিয়ে গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের নির্দেশনা প্রদান করি। আমার নির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার দানকৃত জমিতে ঘূর্ণিঝড় কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে পরিচালিত হচ্ছে।

খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে সোয়া কোটি টন : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে সোয়া কোটি টন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি দলের এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ২০০৯ সালে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিলো তিন কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে উৎপাদন বেড়ে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে ৭ম, চা উৎপাদনে ৪র্থ স্থানের পাশাপাশি ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।

দেশের ৪৩টি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় : আওয়ামী লীগের মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, বর্তমানে দেশের ৪৩টি জেলায় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। রেলওয়ের যেসব প্রকল্প চলমান আছে তা বাস্তবায়িত হলে আরো ১৯টি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। আর ৩০ বছর ব্যাপী মাস্টার প্লান সম্পন্ন হয়ে বাকি চারটি জেলাও রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিমানবন্দরসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রকল্প গ্রহণ : আওয়ামী লীগের নাজিম উদ্দিন আহম্মেদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বের ৫ বৎসরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭৩৭ কোটি টাকা। পুরানো উড়োাজাহাজ দিয়ে বিমানের ফ্লাইট পরিচালিত হওয়ায় পরিচালনা ব্যয় অত্যধিক হওয়ার কারণে প্রায় প্রতি বৎসর বিশাল অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল। এছাড়া বিমানবহরে উপযুক্ত ছোট আকারের উড়োজাহাজের অভাবে সিলেট ও চট্টগ্রাম ব্যতীত সকল অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ২০০৬ থেকে ২০১৫ এর প্রথমার্ধ পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল। এছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান বহরে অতি পুরাতন ডিসি ১০-৩০ এবং এয়ারবাস এ ৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ বিদ্যমান ছিল, যা দিয়ে নির্বিঘ্নে ও সাশ্রয়ীভাবে ফ্লাইট পরিচালনা মোটেই সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আকাশপথের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বিবেচনায় অত্যাধুনিক ও টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরসমূহের সক্ষমতা ও যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ফিনল্যান্ড। বাংলাদেশে ফিনল্যান্ডের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত রিতভা কাউক্কু-রন্ডে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তার দেশের এ আগ্রহের কথা জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তখ্য জানান।

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পত্র : নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত রাষ্ট্রদূত ফিনল্যান্ড-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সান্না মিরেল্লা মারিন-এর শুভেচ্ছা পত্র হস্তান্তর করেন। একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ফিনিশ প্রতিপক্ষকেও শুভেচ্ছা জানান।

রিতভা কাউক্কু-রন্ডে বলেন, বাংলাদেশ এবং ফিনল্যান্ডের বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ কোম্পানি নকিয়ার মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করা যেতে পারে। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিনল্যান্ডের অনারারি কনসাল জেনারেল মুহাম্মদ আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন