শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র কেবল সঙ্ঘাতই বাড়াবে

অস্ত্রের চাহিদা মেটাতে আজ ইউক্রেন যাচ্ছেন ইইউ নেতারা :: ‘ইউক্রেনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’ করছেন ম্যাখোঁ :: পুতিন রুশ-বিরোধী নিষেধাজ্ঞার প্রভাব জানাবেন এসপিআইইএফ-কে :: ইউক্রেনে সঙ্ঘাত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বোরিসভ গত সোমবার আরবিসি টিভির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জ্যাভলিন মিসাইল সিস্টেম, ম্যানপ্যাডস এবং ইউক্রেনকে পশ্চিমের সরবরাহ করা আর্টিলারি সিস্টেমগুলো সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে একটি সিদ্ধান্তমূলক অবদান রাখবে না এবং কেবলমাত্র সংঘর্ষকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

বোরিসভ বলেছেন, ‘এসব অস্ত্র খুব কমই একটি নিষ্পত্তিমূলক অবদান রাখতে পারে, কোনো না কোনভাবে এ সামরিক সঙ্ঘাতকে প্রভাবিত করে। এটি কেবল পরিস্থিতিকে বাড়িয়ে তুলবে, সঙ্ঘাতকে দীর্ঘায়িত করবে। আমি মনে করি যে, ইউক্রেনীয়রা কেবল এটি থেকে হেরে যাবে। এটি কোন সিদ্ধান্তমূলক অবদান আনবে না’।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, জ্যাভলিন সিস্টেম, ম্যানপ্যাডস এবং ১৫৫-মিলিমিটার আর্টিলারি সিস্টেম রাশিয়ান অস্ত্রের সাথে তাদের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। বোরিসভ যোগ করেছেন যে, আজ রাশিয়ান সৈন্যরা ইতোমধ্যে সরবরাহকৃত অনেক অস্ত্রের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

অস্ত্রের চাহিদা মেটাতে আজ ইউক্রেন যাচ্ছেন ইইউ নেতারা : রাশিয়ার অভিযানের প্রথম দিন থেকে যুদ্ধের সবচেয়ে সঙ্কটময় সময়ে ন্যাটো এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা এ সপ্তাহে ব্রাসেলসে কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আলোচনা করবেন।
রাশিয়া রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভ এখনো দখলে নিতে না পারলেও ইউক্রেনের হৃদকম্প যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ইউক্রেন বাহিনীর এখন গোলাবারুদ ফুরিয়ে এসেছে। নিজেদের দাবি অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু রাশিয়ার অভিযানের দিন থেকে প্রতিদিন ১০০ করে সৈন্য মারা গেছে এবং আহত হয়েছে আরো ৩০০ জন।

রাশিয়ানরাও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে, তবে তারা লাভও করছে। ধীরে ধীরে, কিন্তু কৌশলগতভাবে। পূর্বে তারা সিভিয়ারোডোনেটস্ক শহরের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে এবং লিসিচানস্কের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। দুটি স্থান দখলের ফলে রাশিয়ান বাহিনীর পুরো লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এবং ডনবাসের বাকি অংশে যাওয়ার পথ সুগম হবে।

ইউক্রেন সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে, পশ্চিমা অস্ত্র ও গোলাবারুদের পর্যাপ্ত সরবরাহ তার ক্ষতির বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিয়েভকে সমর্থন করার রামস্টেইন প্রক্রিয়ার অংশ কর্মকর্তারা আজ ব্রাসেলসে যাবেন রাশিয়ান বাহিনীকে মোকাবেলায় কী কী প্রয়োজন তার একটি তালিকা নিয়ে। ব্রিটেন ইউক্রেনের জন্য মিত্রদের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের সমন্বয় সাধনে একটি প্রধান সহায়ক হয়ে উঠেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভের সাথে দেখা করতে সপ্তাহান্তে কিয়েভ ভ্রমণ করেছিলেন।

গ্যাস আমদানি করে ‘ইউক্রেনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’ করছেন ম্যাখোঁ :
ইউক্রেনে অভিযানের পর রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনা হয়েছে। ফিনল্যান্ড ভিত্তিক একটি স্বাধীন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়া যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি রফতানিতে ৯৩ বিলিয়ন ইউরো বা ৮০ বিলিয়ন পাউন্ড আয় করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মোট রাশিয়ার মোট জীবাশ্ম জ্বালানি রফতানির ৬১ শতাংশের জন্য দায়ী, যার মূল্য প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ইউরো বা ৪৯ বিলিয়ন পাউন্ড, যদিও ব্লকটি রাশিয়ান জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে চলেছে।

সিআরইএ বলেছে, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডস ক্রেমলিনের জীবাশ্ম জ্বালানির চালান ছাড়ের দামে বন্ধ করে দিয়েছে যখন অন্য ক্রেতারা সংঘর্ষের সময় তাদের কেনাকাটা বন্ধ করে দিয়েছে।
রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, এপ্রিল এবং মে মাসে যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা বৃষ্টি হচ্ছিল, ফ্রান্স প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ইউরো বা ৭৭৩ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি পণ্যের ১২টি চালান পেয়েছে।

সিআরইএ’র বিশ্লেষক লরি মাইলিভার্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন: ‘ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম স্পট মার্কেটে রাশিয়ান এলএনজির ক্রেতা হিসাবে আলাদা। যেহেতু ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে, ফ্রান্স বিশ্বের এলএনজির বৃহত্তম ক্রেতা হওয়ার জন্য তার আমদানি বাড়িয়েছে। ‘আমরা ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি অনুমান করি, ঋতু অনুসারে সামঞ্জস্য।”
যেহেতু এগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির পরিবর্তে স্পট ক্রয়, মি. মিলিভার্তা বলেন, প্যারিস সচেতনভাবে মস্কোর আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ান জ্বালানি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে ফ্রান্সের জ্বালানি মন্ত্রণালয় মন্তব্যের জন্য টেলিগ্রাফের অনুরোধের সাথে সাথে সাড়া দেয়নি।

ইউক্রেনের পার্লামেন্টের অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান দিমিত্রো নাতালুখা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন: ‘সরল উত্তর অবশ্যই, এটি এমন একটি উপায় নয় যা আমরা বিবেচনা করি যে, আমাদের মিত্রদের কীভাবে আচরণ করা উচিত।
‘এগুলো এমন ক্রিয়া যা শব্দের বিরোধী এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট [ইমানুয়েল ম্যাখোঁ] এর কলে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ সরবরাহ করে। এ পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে এটি ইউক্রেনের সর্বোত্তম স্বার্থে এ সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে তার আসল ইচ্ছার বিষয়ে আপনাকে কিছুটা সন্দেহ দেয়’।

পুতিন রুশ-বিরোধী নিষেধাজ্ঞার প্রভাব জানাবেন এসপিআইইএফ-কে : রাশিয়ার প্রেসিডেন্টর মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ তাস-এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এ সপ্তাহের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের (এসপিআইইএফ) পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কটের ওপর রাশিয়াবিরোধী নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে কথা বলবেন।
পেসকভ বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যে, [রাশিয়ার বিরুদ্ধে] আরোপিত এসব বিধিনিষেধ এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো কীভাবে জ্বালানি, খাদ্য এবং অন্যান্য খাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক দেশের ভুল ক্রমবর্ধমান খাদ্য সঙ্কটের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করতে শুরু করেছে’।

পেসকভ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন যে, প্রেসিডেন্ট ফোরামে সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলবেন এবং তার বক্তৃতা ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে’, তিনি জোর দিয়ে বলেন।
‘রাজনীতির দ্বারা অর্থনীতিকে জিম্মি করা হয়েছিল এবং অনেক দেশের রাজনীতিবিদরা করোনাভাইরাসটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভুল করেছিলেন’ ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেছেন, তিনি পরিস্থিতিটিকে ‘একটি আদর্শ পদ্ধতিগত ঝড়’ বলেছেন।

সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরাম (এসপিআইইএফ)-এর ২৫তম সংস্করণ আজ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। পুতিনের সাথে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ১৭ জুনের জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
ইউক্রেনে সঙ্ঘাত উসকে দেওয়া হতে পারে -পোপ ফ্রান্সিস : মঙ্গলবার লা স্ট্যাম্পায় প্রকাশিত সোসাইটি অফ জেসুস-এর ইউরোপীয় জার্নালের সম্পাদকদের সাথে কথোপকথনে পোপ ফ্রান্সিস বলেন যে, ইউক্রেনের সঙ্ঘাত হয়তো উস্কে দেওয়া হয়েছে এবং এর ব্যাখ্যাটি ‘খারাপ এবং ভাল’-এর মধ্যে পার্থক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।

পোপ বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ সমস্যা হল যে, আমরা ইউক্রেনের সঙ্ঘাতের পেছনে সামগ্রিক ট্র্যাজেডি দেখতে পাচ্ছি না, যা ‘কিছু পরিমাণে একটি উস্কানি ছিল বা প্রতিরোধ করা হয়নি’। তিনি প্রশ্নে অস্ত্র বিক্রির দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ‘এটি দুঃখজনক কিন্তু চূড়ান্ত গণনায়, এটাই পয়েন্ট’।

‘কেউ কেউ আমাকে বলবেন যে, আমি [রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির] পুতিনকে সমর্থন করি, এটা নয়। এটা বলাটা একটা অতি সরলীকরণ এবং ভুল হবে। আমি কেবল ভালো এবং খারাপকে বিভক্ত করার জন্য ক্রমাগত ধ্বংসের জটিলতা কমানোর বিপক্ষে। খুব জটিল শিকড় এবং আগ্রহ সম্পর্কে। সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করার জন্য আমি অবশ্যই ভুলে যাব না’।

এর আগে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান স্বীকার করেছেন যে, ইউক্রেনের সঙ্ঘাতে ন্যাটো ‘রাশিয়ার দরজায় ঘেউ ঘেউ করে’ ভূমিকা পালন করেছে। পোপ এ ধারণাটির পুনরাবৃত্তি করেন, কিন্তু এটিকে ‘অত্যন্ত জ্ঞানী রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসাবে দায়ী করেন, যার সাথে তিনি ‘সঙ্ঘাতের দুই মাস আগে’ সাক্ষাৎ করেছিলেন।

তিনি বলেন যে, ন্যাটো যা করছে তা নিয়ে তিনি খুব উদ্বিগ্ন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন এবং তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তারা রাশিয়ার দরজায় ঘেউ ঘেউ করছে যখন রাশিয়া কোনো বিদেশী শক্তিকে কাছে আসতে দেবে না তা সম্পূর্ণরূপে অজান্তেই’। তিনি উপসংহারে এসেছিলেন: ‘এসব যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ‘রাষ্ট্রপ্রধান যে সঙ্কেত দেওয়া হয়েছিল তা বুঝতে পেরেছিলেন’ -পোপ বলেন।

কিয়েভকে আঞ্চলিক ছাড়ে রাজি করাতে চাপ দেবে ইইউ : ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ১২ জুন ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিসটোর সাথে এক বৈঠকে বলেছিলেন যে, ইউক্রেনকে অনিবার্যভাবে আঞ্চলিক ছাড় দিতে হবে। ভেদোমোস্তি জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে, জার্মানি ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী ওলাফ শুলজ এবং মারিও দ্রাঘি এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর ১৫ জুন নির্ধারিত ইউক্রেন সফরের সময় কিয়েভ কর্তৃপক্ষকে একই বার্তা জানাবেন (যদিও শুলজের সফর এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি)।

ইনস্টিটিউটের ইউরোপীয় রাজনৈতিক গবেষণার প্রধান বলেন, ‘পশ্চিম এবং ইউরোপ সর্বপ্রথম দেখতে পাচ্ছে যে, অস্ত্র সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্ঘাতে কিয়েভকে সমর্থন করার প্রচেষ্টা বসন্তে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে’ -গ্লোবাল ইকোনমি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন। বিশ্লেষক যোগ করেছেন যে, এটি স্পষ্ট নয় যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কতক্ষণ ইউক্রেনে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং আর্থিক ইনজেকশনের চাপের গ্যারান্টি দিতে সক্ষম হবে, যা খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যা যুক্ত করে।

মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের একজন গবেষক আর্টেম সোকোলভ বলেছেন, ‘এটা সম্ভব যে, ইউরোপীয়রা তাদের নিজস্ব সঙ্কট পরিকল্পনা নিয়ে আসবে যে অনুসারে কিয়েভকে আরো আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে তার কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে’। তিনি বলেন, আলোচনা অনেকাংশে নির্ভর করবে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতির ওপর।

মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির ইউএস স্টাডিজের জন্য ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন পরিচালক ইউরি রোগোলেভ জোর দিয়ে বলেন যে, আমেরিকানরা ইউরোপীয় শান্তি উদ্যোগ সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন যে, যদি কিছু ভুল হয়ে যায়, তবে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালিকে ইউক্রেনের ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ জন্য দায়ী করা হবে, যখন ওয়াশিংটন এবং লন্ডন তাদের হাত ধুয়ে ফেলতে সক্ষম হবে।

ইউক্রেনে ম্যাখোঁর সম্ভাব্য সফর একটি ‘বিকল্প’ : ফ্রান্স
সরকারের মুখপাত্র অলিভিয়া গ্রেগোয়ার বলেছেন, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সম্ভাব্য সফর ‘বেশ কয়েকটি বিকল্প’ যা বর্তমানে টেবিলে রয়েছে, যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

জার্মান পত্রিকা বিল্ড অ্যাম সোনট্যাগ এ মাসের শুরুতে রিপোর্ট করেছে যে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বৃহস্পতিবার ম্যাখোঁ এবং ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মারিও ড্রাঘির সাথে কিয়েভ ভ্রমণ করবেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ম্যাখোঁ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে সংলাপ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ইউরোপের কিছু পূর্বাঞ্চলীয় এবং বাল্টিক অংশীদারদের দ্বারা সেই অবস্থানের সমালোচনা করা হয়েছে কারণ তারা এটিকে পুতিনকে আলোচনার টেবিলে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে দুর্বল হিসাবে দেখে।

’জার্মান হাউইটজার শিগগিরই ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হবে’
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট বলেছেন, জার্মান হাউইটজারগুলোতে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ শিগগিরই শেষ হবে, যা ইউক্রেনের যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করবে। ‘পাঞ্জারহাউবিটজ ২০০০ এর প্রশিক্ষণ শিগগিরই শেষ হবে যাতে এটি ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহার করা যায়,’তিনি পশ্চিম জার্মান শহর রেইনবাকের একটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের বলেন।

গোলাবারুদ পর্যাপ্ত আছে, প্রয়োজন দূরপাল্লার অস্ত্র -জেলেনস্কি
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর কাছে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ এবং অস্ত্র রয়েছে, তবে আরো দূরপাল্লার অস্ত্রের প্রয়োজন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে ডেনিশ সাংবাদিকদের একথা বলেছেন। লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, লিসিচানস্ক এবং এর আশেপাশের বসতি থেকে আরো ৭০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হাইদাই টেলিগ্রাম পোস্টে এ অঞ্চলের পরিস্থিতিকে ‘প্রকৃত নরক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, বাসিন্দারা গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং রাত হলেই ভ্রমণ করতে হচ্ছে।

তিনি লিখেছেন, ‘শেলিং এত শক্তিশালী যে লোকেরা আর আশ্রয়কেন্দ্রে দাঁড়াতে পারে না’। ‘তবে আমরা হারাতে পারি না যতক্ষণ না অন্তত একটি জীবন বাঁচানো সম্ভব - আমরা বাঁচাব’। রুশ সমর্থিত স্বাধীনতাকামীরা এরই মধ্যে লুহানস্ক অঞ্চলের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, সিভিয়ারোদোনেটস্কের জন্য তীব্র যুদ্ধ ইউক্রেনের জন্য একটি ‘ভয়ঙ্কর’ টোল নিচ্ছে। তিনি সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন ‘এ যুদ্ধের মানবিক মূল্য আমাদের জন্য অনেক বেশি। এটা শুধু ভয়ঙ্কর. ডনবাসের জন্য যুদ্ধ নিঃসন্দেহে ইউরোপের অন্যতম সহিংস যুদ্ধ হিসাবে সামরিক ইতিহাসে স্মরণ করা হবে’।

লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই জানিয়েছেন, বিপর্যস্ত পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিভিয়েরোডোনেটস্কের তিনটি সেতুই ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি ভিডিও আপডেটে, হাইদাই বলেছেন যে, রাশিয়া শহরটিকে ‘সম্পূর্ণভাবে দখল’ করেনি এবং ‘শহরের একটি অংশ’ ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাশিয়ান আর্টিলারি একটি শিল্প অঞ্চলে আঘাত করছিল যেখানে পূর্ব ইউক্রেনীয় শহরে ৫০০ বেসামরিক লোক আশ্রয় নিচ্ছিল, হাইদাই যোগ করেছেন। ডনেটস্কের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রের একজন রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সতর্ক করেছেন, শহরে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের অবশ্যই ‘আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা মরতে হবে’।

ইউক্রেনে রাশিয়ার বিপক্ষে লড়ছে ‘৩ হাজার ব্রিটিশ’ : প্রায় ৩ হাজার ব্রিটিশ সৈন্য ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, একজন জর্জিয়ান কমান্ডার বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে জড়িত অপারেশনের তদারকি করেন। জর্জিয়ান সৈন্যদলের কমান্ডার মামুকা মামুলাশভিলি বলেছেন, প্রায় ২০ হাজার বিদেশি যোদ্ধা ইউক্রেনের সেনাদের সহায়তা করছে এবং তাদের প্রায় সপ্তমাংশ যুক্তরাজ্যের।

ইউক্রেনের কমান্ডের অধীনে সামরিক ইউনিট জর্জিয়ান লিজিয়ন ইউক্রেনে বিদেশী যোদ্ধাদের বৃহত্তম অনুপাত তৈরি করে। ব্রিটিশ সৈন্যরা দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এবং মার্কিন যোদ্ধারা তৃতীয়। মি. মামুয়াশভিলি, যিনি ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনে শত্রুতা শুরু হলে ইউনিটটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি স্কাই নিউজকে বলেছেন, প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বিদেশি স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধা প্রাথমিকভাবে তার ইউনিটের মধ্য দিয়ে যায়। তবে বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক বাহিনীতে চলে যায় কারণ সে আরো বেশি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা চায়।

কমান্ডারের দাবি সত্ত্বেও ইউক্রেনে ব্রিটিশদের সঠিক সংখ্যা অনিশ্চিত। ইউকে সরকার ইউক্রেনে যুদ্ধরত ব্রিটিশ সৈন্যদের সংখ্যা ট্র্যাক করে না এবং ইউক্রেনে বিদেশি নিয়োগপ্রাপ্তদের জাতীয়তা চিহ্নিত করা হচ্ছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

একজন প্রাক্তন ব্রিটিশ সৈনিক গত সপ্তাহে ইউক্রেনে যুদ্ধে নিহত হওয়া দ্বিতীয় যুক্তরাজ্যের নাগরিক। জর্ডান গ্যাটলি (২৪)কে রাশিয়ার পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রসর হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর সিভিয়ারোডোনেটস্কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
মারিউপোলে রাশিয়ান বাহিনীর হাতে আটক দুই ব্রিটিশ যোদ্ধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সাথে যুদ্ধের পর সৈন্যদের ‘ভাড়াটে’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

এইডেন আসলিন এবং শন পিনার উভয়ই মারিউপোলে যুদ্ধরত নিয়মিত ইউক্রেনীয় সামরিক ইউনিটের সদস্য ছিলেন। স্বঘোষিত ডোনেস্ক পিপলস রিপাবলিকের একটি আদালতে সহিংসভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য সরকার এ বিচারকে ‘লজ্জাষ্কর’ বলে নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে, এই জুটি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর বৈধ সদস্য এবং তাদের যুদ্ধবন্দী হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন