পূর্ব প্রকাশিতের পর
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামে বেরলভিদের সাথে এক সংঘর্ষে তিনি আহত হয়েছিলেন। আব্দুল কাইয়ুম তার সম্মানে আরবি কবিতা আবৃত্তি ও শাহ আহমদ শফী তার ত্যাগের মূল্যায়ন করে নিজ হাতে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
১৯৯০-এর দশকে তিনি বিয়ানীবাজারে ইসমতে আম্বিয়া ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এসময় তার তত্ত্বাবধানে ইযহারে হকের উদ্যোগে বিয়ানীবাজারে খতমে নবুয়ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তসলিমা বিরোধী আন্দোলন, শাবিপ্রবির নামকরণের আন্দোলন, ফতোয়া বিরোধী রায়ের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দোলনে তিনি সিলেটে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন।
২০০৫ সালে ভারত সরকারের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি কর্তৃক আহুত টিপাইমুখ লংমার্চে তিনি সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর জমিয়তের ডাকা টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে রোডমার্চের আহবায়ক ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরুদ্ধে সিলেটে ‘কুরআনি আইন সংরক্ষণ কমিটি’র আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। ২০১৩ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধে শাহজালাল ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে সর্বদলীয় আন্দোলনে অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সিলেট জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। হেফাজতের উদ্যোগে শানে রেসালাত সম্মেলন নামে সিলেটে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে তিনি মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতের লংমার্চে তিনি অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দেন। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৫ মে’র ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়।
২০১২ সালের ৯, ১০, ১১ ফেব্রুয়ারি আযাদ দ্বীনী এদারার তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক দস্তারবন্দী সম্মেলনে তিনি কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সম্মাননা: ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট আশ শিহাব পরিষদের উদ্যোগে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘মুফাক্কিরে ইসলাম’ নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
২০১৭ সালের ১৬ মে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে তাকে নাগরিক সংর্বধনা দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
২০১৬ সালে শিক্ষকতায় কৃতিত্বের স্বীকৃত স্বরূপ তাকে এক অনলাইন সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
তাসাউফ: তিনি শায়খে ফুলবাড়ী খ্যাত আব্দুল মতিন চৌধুরীর কাছে আধ্যাত্মিক দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং মসজিদে নববীতে ইতিকাফ অবস্থায় আব্দুল মতিন স্বীয় খলীফা আব্দুস সবুরের মাধ্যমে তাকে খেলাফত প্রদান করেন।
পরিবার: পারিবারিক জীবনে তিনি ১ ছেলে ও ৬ মেয়ের জনক।
জিয়া উদ্দিন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা, জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মহাপরিচালক ও আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে তিনি ‘নাজিম সাহেব হুজুর’ নামে পরিচিত। হেফাজত আন্দোলন, খতমে নবুয়ত আন্দোলন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন সহ প্রভৃতি আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াাও তিনি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মাদরাসার পরিচালক এবং কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক সংস্থার নেতৃস্থানীয় পদে রয়েছেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে ‘মুফাক্কিরে ইসলাম’ উপাধি দেওয়া হয়।
শায়খ জিয়া উদ্দিন (নাজিম সাব হুজুর) বয়োজৈষ্ঠ্য হয়েও দ্বীনে ইসলামের তরে জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত ব্যয় করে চলেছেন। প্রিয় শায়খের নেক হায়াত কামনা করে লেখার ইতি টানলাম।
লেখক: আলেম, সাংবাদিক, চিন্তাবিদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন