কয়েক মাস ধরে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের বিনিময় হার কমছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ঘটনায় অস্থিতিশীল রয়েছে জ্বালানির বাজারও। উচ্চমূল্যের কারণে আমদানিতে আরো বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে জাপানকে। সবমিলিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ নিয়ে টানা দশম মাসের মতো দেশটির পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। খবর কিয়োডো নিউজ। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মে মাসে জাপানের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ইয়েনে (১ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার) পৌঁছেছে। প্রধানত পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে রফতানি ও আমদানির মধ্যকার ব্যবধান প্রসারিত হয়েছে। মে মাসের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি আগের মাসের ৮৩ হাজার ৯২০ কোটি ইয়েনের প্রায় তিন গুণ। তাছাড়া বাণিজ্য ঘাটতির এ পরিমাণ দেশটির মাসভিত্তিক হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চও। এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি ইয়েনের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছিল জাপান। ইয়েনের দরপতন এবং জ্বালানি ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশটি যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে ক্রমবর্ধমান এ বাণিজ্য ঘাটতি। গত মাসে ৯ লাখ ৬৪ হাজার কোটি ইয়েনের পণ্য আমদানি করেছে জাপান। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এ নিয়ে টানা তৃতীয় মাসের মতো আমদানি রেকর্ড সর্বোচ্চ পরিসংখ্যানকে ভেঙে দিয়েছে। যেখানে রফতানি ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৭ লাখ ২৫ হাজার কোটি ইয়েনে পৌঁছেছে। টানা ১৫তম মাসের মতো দেশটির রফতানিও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে পেট্রোলিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা এবং মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মতো জ্বালানি আমদানিতে উচ্চমূল্যের কারণে অর্থের হিসাবে ব্যয় অনেক বেড়ে গিয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে জ্বালানির দাম বাড়ায় পেট্রোলিয়াম আমদানি ব্যয় টানা ১৪তম মাসের মতো ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গত মাসে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি ইয়েন মূল্যের জ্বালানি পণ্য আমদানি করেছে জাপান। পরিমাণের দিক থেকে এ আমদানি সপ্তম মাসের মতো বেড়ে ১ কোটি ২২ লাখ কিলোলিটারে উন্নীত হয়েছে। আমদানি ব্যয় বাড়ার আরেকটি বড় কারণ ডলারের বিপরীতে ইয়েনের অবমূল্যায়ন। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ হারুমি ভাগুচি বলেন, দুর্বল ইয়েন জাপানের আমদানি ব্যয় বাড়াতে বড় অবদান রেখেছে। যদিও দেশটির রফতানি দুর্বল ইয়েনের সুযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ইতোচু ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতি আতুশি তাকেদা বলেন, দুর্বল ইয়েন কিছু সুবিধা তৈরি করলেও রফতানিতে বৃদ্ধি আশা করা কঠিন। এজন্য এটি বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে খুব বেশি বড় অবদান রাখেনি। যন্ত্রাংশ সরবরাহের সংকট এবং চীনে কঠোর লকডাউনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনগামী চালান ব্যাহত হয়েছে। অঞ্চলভেদে জাপানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীনে রফতানি মে মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ ও পরিবহন সরঞ্জামের দুর্বল চালান অবদান রেখেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের রফতানি ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। গাড়ি রফতানি কমে গেলেও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে যন্ত্রাংশ ও খনিজ জ্বালানি বেড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো জাপানও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিয়োডো নিউজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন