বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যিলকদ মাসে করণীয়

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

যখন কোনো সময়কে অন্য সময়ের তুলনায় কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়, এর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, সময়টিতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা। খুব সতর্কতার সাথে গোনাহ থেকে দূরে থাকা। এসব যদিও সবসময়েরই কাজ, তবু ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনীতে আরো বেশি যত্ন নেওয়া উচিত।
আশহুরে হুরুম তথা যিলকদসহ চারটি সম্মানিত মাস সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন : বার মাসের মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সহজ-সরল দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। (সূরা তাওবা : ৩৬)। আয়াতে আশহুরে হুরুমে নিজের প্রতি জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে। জুলুমের মানে কী? আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম রাহ. বলেন : জুলুম হল, আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়া এবং তাঁর হুকুম না মানা। (তাফসীরে তবারী ১১/৪৪৩)।

এই জুলুম তথা আল্লাহর আনুগত্য বর্জন করা এবং তাঁর অবাধ্যতায় জড়িত হওয়া তো সবসময়ই নিষিদ্ধ। আশহুরে হুরুমে জুলুম নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো, এইসব মাসে জুলুম করা বেশি ভয়াবহ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, সারা বছরের কোনো মাসেই জুলুম করবে না। তবে, বার মাস থেকে চার মাসকে বিশেষভাবে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন, এগুলোর সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই এই মাসসমূহের গোনাহ বেশি ভয়ানক এবং এর নেক আমল ও নেক আমলের সওয়াবও অধিক। (তাফসীরে ইবনে জারীর ১১/৪৪৪)।

অতএব যিলকদ মাস ও অন্যান্য সম্মানিত মাসের আমল হলো, কোনো অন্যায়-অবিচার ও গোনাহ না করা এবং ফরয আমলসহ অন্যান্য নফল ইবাদতের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া।
যিলকদ মাসের বিশেষ একটি আমল হলো, রোজা রাখা। মুজীবা আলবাহেলীয়্যা তার পিতা বা চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট আসেন। (কিছুদিন থাকেন।) এরপর চলে যান। এক বছর পর আবার আসেন। এতদিনে অধিক রোজা রাখার দরুন তার স্বাস্থ্য ও চেহারা-সূরত পাল্টে গেছে।

তিনি বললেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কি চেনেননি? নবী (সা.) বললেন, তুমি কে? আরয করলাম, আমি হলাম বাহেলী, গত বছর এসেছিলাম। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার এ অবস্থা হলো কী করে? তোমার চেহারা-সূরত তো আরো ভালো ছিল! জবাব দিলাম, আপনার নিকট থেকে যাওয়ার পর রাতে ছাড়া কোনো খাবার খাইনি। (অর্থাৎ পুরো বছর রোজা রেখেছি।)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, নিজেকে এত শাস্তি দিলে কেন? এরপর নবীজী বললেন, তুমি ছবরের মাসে (রমজানে) রোজা রাখো। এরপর প্রতি মাসে একটি করে রোজা রাখো। আরয করলাম, আমাকে আরো বেশি রোজা রাখার অনুমতি দিন। আমার আরো রোজা রাখার সামর্থ্য আছে। তিনি বললেন, তাহলে প্রতি মাসে দুইটি করে রোজা রাখ। বললাম, আরো বাড়িয়ে দিন।

তিনি বললেন, তাহলে প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখ। আমি বললাম, আরো বাড়িয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, আশহুরে হুরুমে রোজা রাখ এবং বিরতি দাও, আশহুরে হুরুমে রোজা রাখ এবং বিরতি দাও, আশহুরে হুরুমে রোজা রাখ এবং বিরতি দাও। একথা বলার সময় হাতের তিন অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেছেন। আঙ্গুলতিনটিকে বন্ধ করেছেন, এরপর ছেড়েছেন। (সুনানে আবু দাউদ : ২৪২৮)।

‘আশহুরে হুরুম’ হল উপরে উল্লিখিত সম্মানিত চার মাস। আর তিন আঙ্গুল খুলে ও বন্ধ করে নবীজী বুঝিয়েছেন, তিন দিন রোজা রাখ, তিন দিন রোজা ছাড়। এভাবে তিন দিন পরপর তিনটি করে রোজা রাখ। হাদীসটি থেকে বুঝে আসে আশহুরে হুরুমে রোজা রাখা একটি উত্তম আমল। হাফেয ইবনে হাজার রাহ. হাদীসটি দিয়ে রজব মাসের কিছুদিন রোজা রাখা মুস্তাহাব হওয়ার দলিল দিয়েছেন। কেননা, আশহুরে হুরুমের মধ্যে রজব মাসও রয়েছে।

তদ্রƒপ যিলকদ মাসও যেহেতু আশহুরে হুরুমের একটি; বরং সম্মাতিন চার মাসের প্রথম মাস। সুতরাং এ মাসেও কিছু কিছু রোজা রাখা ভালো। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন