শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দুই স্বামীকে খুন, মাফিয়া-সম্রাজ্ঞী ব্লাঙ্কোকে নিয়ে সিনেমাও হয়

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২২, ৩:৫১ পিএম

বিশ্বের মাদক সম্রাট বলতে যার নাম প্রথম মাথায় আসে, তিনি হলেন পাবলো এস্কোবার। এ ছাড়াও এই তালিকায় আছে জোকুইন গাজম্যান, ফ্রাঙ্ক লুকাস, দারিয়ো আন্তনিওদের মতো কুখ্যাতদের নাম।

কুখ্যাত মাদক মাফিয়া বলতে আমাদের চোখের সামনে মূলত পুরুষের চেহারাই ভেসে আসে। তবে এই মাদক ‘সম্রাট’দের ভিড়ে একাধিক ‘সম্রাজ্ঞী’ও ছিলেন। যাদের দৌরাত্ম্যে নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল তাবড় তাবড় পুলিশ এবং গোয়েন্দাকর্তাকে। এদের মধ্যে যিনি সব থেকে বিখ্যাত, (বলা ভাল, কুখ্যাত) তিনি গ্রিসেলডা ব্লাঙ্কো। তবে পরিবারসূত্রে পাওয়া নামের থেকেও তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন ‘লা মাদ্রিনা’ বা ‘গডমাদার’ নামে।

মূলত কোকেন এবং গাঁজা ব্যবসায় প্রতিপত্তি লাভ করলেও হেন মাদক ছিল না যা নিয়ে ব্ল্যাঙ্কো ব্যবসা করেননি। ব্ল্যাঙ্কো ছিলেন মেডেলিন মাদকচক্রের অন্যতম প্রধান। মেডেলিন মাদকচক্র ছিল কলম্বিয়ার ক্ষমতাশালী এবং অত্যন্ত সংগঠিত মাদকচক্র। মনে করা হয়, এস্কোবার এই মাদকচক্র চালু করেছিলেন। এস্কোবারের এক জন প্রধান পরামর্শদাতাও ছিলেন ব্ল্যাঙ্কো। তবে পরে মতপার্থক্যের জন্য এস্কোবারের অন্যতম প্রধান শত্রু হয়ে ওঠেন তিনি।

১৯৪৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার বলিভারে জন্মগ্রহণ করেন ব্ল্যাঙ্কো। বয়সে এস্কোবারের থেকে প্রায় ছ’বছরের বড় ছিলেন ব্ল্যাঙ্কো। কোকেন পাচার করার জন্য বিশেষ অন্তর্বাসের নকশা করে প্রথম নজরে আসেন ব্ল্যাঙ্কো। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে কলম্বিয়া ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ব্ল্যাঙ্কো। ঘাঁটি গাড়েন নিউ ইয়র্কের কুইন্সে। কুইন্সে এসে মাদকচক্রের জাল বিস্তার করতে শুরু করেন ব্ল্যাঙ্কো। ১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্কের প্রশাসন কোকেনের বিপুল পরিমাণ চোরাচালান আটকায়। তদন্তে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসে ব্ল্যাঙ্কোর নাম। এর পরই আবার ব্ল্যাঙ্কো কলম্বিয়ায় ফিরে যান।

তবে কলম্বিয়ায় বেশি দিন মন টেকাতে পারেননি ব্ল্যাঙ্কো। আবার কলম্বিয়া ছাড়েন। নতুন আস্তানা হয় মায়ামি। বলা হয়, আশির দশকে ব্ল্যাঙ্কো সমগ্র মায়ামিকে সাদা এবং লাল রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন। সাদা ছিল কোকেনের রং এবং লাল ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক ব্যবসায়ীদের রক্তের রং। মোটরবাইকে বসে থাকা পোষা আততায়ীদের দিয়ে গুলি চালিয়ে শত্রুপক্ষকে সাফ করাতেন ব্ল্যাঙ্কো।

ব্ল্যাঙ্কোর একাধিক অপরাধের সাক্ষী হয়েছিল মায়ামি। যার মধ্যে অন্যতম ছিল মায়ামির একটি মলে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক দিয়ে হামলা চালানো। ব্ল্যাঙ্কো তিন বার বিয়ে করেছিলেন। তবে কারও সঙ্গেই বিয়ে টেকেনি। তিন বিয়ে থেকে মোট ৪ সন্তান ছিল তার। তবে সবচেয়ে প্রিয় সন্তান ছিল ছোট ছেলে মাইকেল কোরলিওনে। নিজের ‘গডমাদার’ নাম সার্থক করার জন্য ‘দ্য গডফাদার’ সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছোট ছেলের নাম দেন মাইকেল (মাইকেল কোরলিওনে ছিলেন ‘দ্য গডফাদার’ সিরিজের তিন সিনেমার মুখ্য চরিত্র এবং ডন ভিটো কোরলিওনের ছোট ছেলে)।

মনে করা হয়, ব্ল্যাঙ্কো প্রায় ২০০-র বেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। এমনকি, ছেলে কার দায়িত্বে থাকবে, তা নিয়ে হওয়া গন্ডগোলের জেরে তৃতীয় স্বামীকেও খুন করান ব্ল্যাঙ্কো। এমনও শোনা যায়, মাদকচক্র নিয়ে মতবিরোধের জেরে নিজের দ্বিতীয় স্বামীকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করেন। এত অপরাধের পর ১৯৮৫ সালে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ব্ল্যাঙ্কো। কিন্তু জেলের গারদও তাকে আটকাতে পারেনি। সমস্ত অপরাধমূলক কাজকর্ম জেল থেকেই সামালাতেন তিনি।

জেলে বসেই জন এফ কেনেডি জুনিয়রকে অপহরণ করার ছক কষেছিলেন ব্ল্যাঙ্কো। তবে জেল থেকে এই খবর কেউ পুলিশের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ২০০৪ সালে জেলে থাকাকালীন ব্ল্যাঙ্কো হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। ছাড়া পাওয়ার তাকে মেডেলিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পর মৃত্যুর আগে ২০০৭ সালে বোগোটা বিমানবন্দরে শেষ বার দেখা গিয়েছিল তাকে।

‘দ্য গডফাদার’-এর সিরিজের প্রথম সিনেমায় প্রধান চরিত্র ভিটো কোরলিওনেকে কয়েকটি দোকানের সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে খুন করার চেষ্টা করা হয়। তবে অবশেষে বেঁচে যান ভিটো। ঘটনাচক্রে, একই ভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি দোকানের কাছে মাংস কেনার সময় গুলি চালানো হয় ‘গডমাদার’ ব্ল্যাঙ্কোর উপরে। তবে তার ভাগ্য সহায় হয়নি। মারা যান ব্ল্যাঙ্কো। ব্ল্যাঙ্কো যে ভাবে একের পর এক খুন করিয়েছেন, ঠিক সেই পদ্ধতিতেই খুন করা হয়েছিল তাকে। মোটরবাইকে এসে ব্ল্যাঙ্কোর উপর গুলি চালায় আততায়ীরা। ২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছরে প্রয়াত হন ব্ল্যাঙ্কো।

তাকে নিয়ে একাধিক ফিল্ম, তথ্যচিত্র এবং ওয়েবসিরিজ হয়েছে। তথ্যচিত্র ‘কোকেন কাউবয়েজ’-এ তার চরিত্র স্পষ্ট ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ২০২০ সালে ‘দ্য গডমাদার’ নামে একটি ছবির পরিকল্পনা করা হয়। সেখানে জেনিফার লোপেজকে ভাবা হয়েছিল ব্ল্যাঙ্কোর ভূমিকায়। তার জীবন নিয়ে একটি ওয়েব সিরিজও করেছে নেটফ্লিক্স। সূত্র: টাইমস নাউ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন