‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন’ শিরোনামে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এটি দেশের ৫১তম এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঙ্কের এ বাজেট নিয়ে সারাদেশে এখন সরগরম আলোচনা। সরকারি দলের নেতারা সংসদে ও সংসদের বাইরে প্রস্তাবিত বাজেটের পক্ষে বিরামহীন কথা বলছেন। অন্যদিকে বিরোধী দল অনুচ্চকণ্ঠে হলেও বাজেটের কড়া সমালোচনা করছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বাজেট নিয়ে আলোচনা করছেন। কথা বলছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষও। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন গোলটেবিল আলোচনার মাধ্যমেও তাদের বক্তব্য তুলে ধরছে। সবাই নিজের লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন। জনমনে প্রত্যাশা ছিল প্রস্তাবিত বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়ার দলিল। বাস্তবে তা হয়নি। অতীতের মতো সদ্য ঘোষিত বাজেটেও ধনী ও উচ্চবিত্তদের প্রতি পক্ষপাত যথারীতি বহাল থাকল এবং কিছুক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের মাত্রা বরং আগের চেয়েও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন করপোরেট কর কমানো হল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বিত্তবানদের বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশায় প্রত্যক্ষ করের চাপ আগের মতোই চাপিয়ে দেওয়া হলো সাধারণ জনগণের ওপর। দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের ধনীরা তাদের সম্পদের তুলনায় কর দিয়ে থাকেন খুবই সামান্য। দেশে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ মোট আদায়কৃত করের এক-তৃতীয়াংশের কম। এর মধ্যেও আবার বেশিরভাগ আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান থেকে। ব্যক্তিপর্যায়ের ধনীরা এখানে আয়কর দেন না বললেই চলে। সবচেয়ে বড় কথা, এবারের বাজেটে টাকা পাচারকে স্বীকার করে নিয়ে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে। বস্তুত এই ধরনের সুযোগ অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বিদ্যমান আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়া অর্থনীতিবিদরাও এটিকে অগ্রহণযোগ্য ও অপকর্মের স্বরূপ বলে মনে করছেন। অন্যদিকে বাজেটে বাড়ানো হয়নি করমুক্ত আয়ের সীমা। বাজেট দেখে জনমনে প্রশ্ন ঊঁকি দেয়, দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জীবনে এ বাজেট কি তাহলে নতুন আঘাত হিসেবে বিবেচিত হবে?
কাজী আশফিক রাসেল
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন