মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মৃত্যুফাঁদ মোটরসাইকেল মহাসড়কে নিষিদ্ধের সুপারিশ

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহন। নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এই দুই ধরনের যান। এরমধ্যে মোটরসাইকেলে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে মৃত্যুবরণ করছে বেশি আরোহী। মোটরসাইকেলে মৃত্যুবরণকারী বেশিরভাগই কিশোর শিক্ষার্থী। অনিয়ন্ত্রিত মোটরসাইকেল চালানোর কারণে অকালে ঝরে পড়ছে তরুনদের প্রাণ।
আগে থেকেই মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের দাবি উঠে এসেছে। এরই প্রেক্ষিতে এবার জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গত রোববার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে এক কর্মশালায় এ সুপারিশ করা হয়। গত ঈদুল ফিতরের সময় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেশি হওয়ার জন্য মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয় কর্মশালায়। যেসব জাতীয় মহাসড়কের পাশে সার্ভিস রোড রয়েছে, সেসব মহাসড়কের সার্ভিস রোডে মোটরসাইকেল চলতে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে সংস্থাটি।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, গত ঈদুল ফিতরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণ মোটরসাইকেল। সে সময়ে ঈদযাত্রা তুলনামূলক নির্বিঘ্ন ছিল। যানজটের ভোগান্তি ছিল না। কিন্তু দুর্ঘটনা বেড়েছে। সাধারণ সময়েও মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরের সময় সারাদেশে ৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৫৮ জন। প্রতিদিন গড়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়। আর সর্বশেষ চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে সারাদেশে ১০৬টি দুর্ঘটনায় ১০৬ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা ১৫৬। গড়ে প্রতিদিন ১৩ জন নিহত হয়েছেন। মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছে বিআরটিএ। এগুলো হলো- মহাসড়কে অসতর্ক, দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকের অননুমোদিত বা ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, পথচারীর অসাবধানতা, যত্রতত্র পারাপার ও পথচারীরা রাস্তা চলাচলে ডানপাশ ব্যবহার না করা, মহাসড়কে ধীর গতির যানবাহন ও নিবন্ধনবিহীন যানবাহন চলাচল, মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত আরোহী বহন, হেলমেট ব্যবহার না করা, চালকের অসচেতনতা ও ট্রাফিক আইন না মানা, সাইড রোড থেকে মূল সড়কে প্রবেশের ক্ষেত্রে মূল সড়কের গাড়িকে অগ্রাধিকার না দেয়া ও মহাসড়কে ট্রাফিক সাইন, রোড মার্কিং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী না থাকা।
দুর্ঘটনা রোধে জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা, দ্রুত ও বেপরোয় গতিতে চলা মোটরযান এবং অননুমোদিত ওভারটেকিং করা মোটরযানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া, জাতীয় মহাসড়কে হিউম্যান হলার, থ্রি-হুইলারসহ নছিমন ও করিমনের মতো বাহন চলাচল বন্ধ করা, রাস্তা পারাপারে পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, চালকদের প্রশিক্ষণ, খেলাপি ও কাজগপত্রবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোড়ালো করা এবং জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সুপারিশ করেছে বিআরটিএ।
জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল ব্যাপক মোটরসাইকেলের ব্যবহার। গণপরিবহন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী না হওয়া এবং যানজট এড়াতে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা করেছে। কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। জাতীয় মহাসড়কে ঈদযাত্রার বহরে মোটরসাইকেলের ব্যাপক ব্যবহারকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণে হিসেবে ধরা হয়।
গত ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৭২টি দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ও ৮৪৪ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি তথ্য এটি। ঈদের আগে-পরে ১৪ দিনে দেশে ২৮৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫০০ জন। ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৬ জন। দুর্ঘটনায় ৫৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য দিয়েছে। সেভ দ্য রোড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদুল ফিতরের আগে-পরের ১২ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৮১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ২ হাজার ৭৭ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় সড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের সুপারিশকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে কে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। মোটরসাইকেলকে দূরপাল্লার যান হিসেবে ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে। মোটরসাইকেলের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুপারিশ করা হলেই হবে না। এটা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার। সেই কাজটা করতে জনবল লাগবে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, মোটরসাইকেল কখনো গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। গণপরিবহন বা বাসের উপর থেকে মানুষের মন উঠে গেছে। গণপরিবহণের সেচ্ছাচারিতা ও ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে মানুষ এখন গণপরিবহন ব্যবহার করতে চাননা। সেজন্য গণপরিবহনে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। আর দূরপাল্লার বহরে যাতে মোটরসাইকেল যুক্ত হতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভোগান্তি ও যানজট থেকে বাঁচতে মানুষ বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, প্রতিবছর পাঁচ লাখ মোটরসাইকেল বিপণন করে কোম্পানিগুলোর পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বেশি সিসির মোটরসাইকেল অনুমোদন দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন