টেনিস বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হলেও বাংলাদেশে কিন্তু অবহেলিত। মূলত বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন কর্মকর্তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার প্রভাব কোর্টে পড়ার কারণেই খেলাটি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এদেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। কর্মকর্তাদের কলহ মামলার পর্যায়ে গড়ানোসহ নানা কারণে ১৩ বছর ধরে টেনিস ফেডারেশন চলছে আহ্বায়ক কমিটির অধীনে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক পেয়েছে মাত্র একবার। ২০০৪ সালে হওয়া একমাত্র নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ছানাউল হক বকুল। ২০০৯ সালে তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পর গত এক যুগে পাঁচবার কমিটি বদল হলেও অ্যাডহকের যাতাকল থেকে মুক্ত হতে পারেনি টেনিস। যদিও ২০১৬ সালে টেনিস ফেডারেশনে নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর আবু সালেহ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বির করা এক মামলায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। অবশ্য গত প্রায় সাত মাস আগে তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ায় নির্বাচনমূখী হতে আর কোন বাধা থাকেনি টেনিস ফেডারেশনের। ফলে গত মাস থেকে শুরু হয় টেনিসের নির্বাচনী তোরজোড়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হবে এই ফেডারেশনের বহুল কাঙ্খিত নির্বাচন। যে নির্বাচনে ৯৪ জন কাউন্সিলর নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আগামী চার বছরের জন্য টেনিস ফেডারেশনের নেতৃত্ব বেছে নেবেন। তবে তার আগেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর কে হচ্ছেন টেনিসের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। যে পদকে কেন্দ্র করে টেনিস ফেডারেশনের নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল সেই সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন আবু সাঈদ মোহাম্মদ হায়দার। সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে কিশোরগঞ্জ ক্লাবের অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান গতকাল নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ায় হায়দার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ফলে ছানাউল হক বকুলের পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে টেনিস পেতে যাচ্ছে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। কাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি যুগ্ম-সম্পাদক পদেও দু’জন নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রুহুল আমিন বাবু ও লায়লা নূর যুগ্ম-সম্পাদক পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় এই পদেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন সাইফুল ইসলাম ও শেখ মঈনউদ্দিন ওয়ালিউল্লাহ। এদিন অন্য পদগুলো থেকে আর কেউ সরে না দাঁড়ানোর ফলে এখন সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও সদস্য পদে ভোটযুদ্ধ হবে।
সাধারণ সম্পাদক পদে শুরু থেকে আলোচনায় থাকা মোহাম্মদ আলী দ্বীন ও হায়দারের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পর টেনিসের নির্বাচনে ভোট না হওয়ারই কথা ছিল। দ্বীন সহ-সভাপতি পদে হায়দারের প্যানেলে যুক্ত হলে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে অ্যাডভোকেট শাহজাহান ভোটের আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান। তবে হঠাৎ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাবেক সচিব ও টেনিস ফেডারশেনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ করিম সহ-সভাপতি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন অঙ্ক বদলে দেন। টেনিস ফেডারেশনে সহ-সভাপতি পদ পাঁচটি। হায়দারের প্যানেলে পাঁচ সহ-সভাপতির বাইরে থেকে নির্বাচন করছেন মাসুদ করিম ও সাবেক জাতীয় তারকা সাঁতারু লায়লা নূর। টেনিসের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একজন নারী কার্যনির্বাহী সদস্য রয়েছে। সেই পদে শিরিন আক্তার চৌধুরী একাই থাকায় তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। বাকি ১৫ সদস্যের জন্য লড়বেন ১৯ প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক জাতীয় তারকা ফুটবলার ও টেনিস ফেডারেশনের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. আসলাম। টেনিসের নির্বাহী কমিটি ২৫ সদস্য বিশিষ্ট। হায়দার-দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ২৫ জনের প্যানেলই দিয়েছেন। এর বাইরে প্রার্থী রয়েছেন ৭ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন