ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি হঠাৎ করে রেজিম চেঞ্জের তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলের এই নেতা গত ১৯ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনায় বলেছেন, ‘রেজিম চেঞ্জের’ খেলা শুরু হয়েছে। মার্কিনীদের বন্ধুরা এমনভাবে কথা বলছেন যে খোদ স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের পিছনে রয়েছে। সাত দিনের মধ্যে সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ষড়যন্ত্রের খেলা বন্ধ করুন। এটা পঁচাত্তর বা ২০০১ নয়। ‘রেজিম চেঞ্জ’ বাংলা অর্থ হলো কোনো দেশে একটি সরকারের পরিবর্তে আরেকটি সরকার প্রতিস্থাপন। হঠাৎ করে সংসদে রেজিম চেঞ্জের তত্ত্ব তুলে ধরে প্রখ্যাত এই বাম নেতা যেন নিজের রেজিম চেঞ্জের ইংগিত দিলেন। কারণ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলে দলের জেলা সম্মেলনে ‘আমি স্বাক্ষী দিচ্ছি জনগণ ভোট দিতে পারেনি’ শীর্ষক বক্তব্য দিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়ায় তাকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়। ওই বক্তব্যের ২ বছর ৮ মাস পর তিনি জাতীয় সংসদে ‘রেজিম চেঞ্জ’ তত্ত্ব দিলেন।
ওয়াকার্স পার্টির বরিশাল জেলা সম্মেলনে রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আমি সাক্ষী, ৩০ ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাক্ষী দিয়ে বলছি, আমি জনগণ, সেই জনগণ, তারা ভোট দিতে পারে নাই। ইউনিয়ন পরিষদে পারে না, উপজেলা পরিষদে পারে না। তাহলে (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা, আপনি-আমি মিলে যে ভোটের জন্য লড়াই করেছি, ঘেরাও করেছি, আজিজ কমিশনের সেই ১ কোটি ১০ লাখ ভোটারের তালিকা ছিঁড়ে ফেলার জন্য নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, নমিনেশন সাবমিট করার পরে, আজকে কেন আমার দেশের মানুষ, আমার ইউনিয়ন পরিষদের মানুষ, আমার উপজেলার মানুষ, আমার জেলার মানুষ আমার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে আসবে না?’ তিনি আরো বলেছেন, ‘উন্নয়ন মানেই গণতন্ত্র হরণ নয়, উন্নয়ন মানেই ভিন্নমতের সংকোচন নয়। উন্নয়ন মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ নয়। উন্নয়ন মানে গণতন্ত্রের স্পেস কমিয়ে দেওয়া নয়। সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে লুণ্ঠন-দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। একদিকে সরকার উন্নয়ন করছে, অন্যদিকে সরকারের আশপাশের লোকজন দুর্নীতির মাধ্যমে হাজারো কোটি টাকা লুফে নিচ্ছে। এতে করে সরকারের উন্নয়ন ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না দেশের মানুষ।’
১৮ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, বাজেট আলোচনায় সংসদের ভূমিকা কার্যত ‘শোনাউল্লাহ’ আর ‘বকাউল্লাহ’র। আর শেষে ‘হ্যাঁ’ বলার। বাজেটের সাথে সংসদের, সংসদের কমিটিগুলোর সংশ্লিষ্টতা নেই।
রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশে ‘রেজিম চেঞ্জের’ খেলা শুরু হয়েছে। মার্কিনী যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরা (বিএনপিসহ অন্যান্য দল) এমনভাবে কথা বলছেন যে খোদ স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের পিছনে রয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ফেলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। আমি বলি ষড়যন্ত্রের খেলা বন্ধ করুন। এটা ১৯৭৫ সাল বা ২০০১ সাল নয়। নিজের অর্থায়নে বাংলাদেশ পদ্মা সেতু করেছে। এটা শেখ হাসিনার গৌরব, বাংলাদেশের গৌরব। তাকে হেয় করে খাটো করে, তার দাবিদার সেজে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, দেশের সংস্কৃতির জায়গা নিচ্ছে কর্পোরেট কালচার; বিপরীত দিকে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ধারণা। দেশে যাত্রাপালা, গাজীর গীত, বাউল গান নিষিদ্ধ। মাইজ ভাণ্ডারী গান গাওয়ার জন্য ওসি সাহেব তার ঠ্যাং ভেঙ্গে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে ইসলাম এসেছিল সুফি-সাধকদের মাধ্যমে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সউদী সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ওহাবীবাদ ছড়িয়েছে। বাংলাদেশ মওদুদীবাদী জামাতি-সালাফিরা তার তল্পিবাহক। তাদের পছন্দ নয় এমন সবকিছু, মিলাদ, কিয়াম, শবেবরাত সব কিছুই বেদাত। এই সংসদে আপনারা ছাড়া রাস্তায় বেরোলে বাঙালি ললনা দেখি না। মনে হয় আফগানিস্তানের রাস্তা দিয়ে চলছি।
সংসদে রাশেদ খান মেননের এই ‘রেজিম চেঞ্জ’ বক্তব্য প্রকাশের পর ফেসবুক, টুইটার, ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ পড়ে গেছে। কেউ লিখেছেন, মেনন কি বুঝিয়েছেন যে মার্কিনীরা বিগত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে; এখন রেজিম চেঞ্জে করার চেস্টা করছেন? কেউ লিখেছেন, দুই বছর ৮ মাস আগে বরিশালে মেনন যা বলেছিলেন, সংসদে তার বিপরীত কথা বলে নিজেই ‘রেজিম চেঞ্জ’ করার ইংগিত দিচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন