মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন ঃ উত্তম চরিত্র গঠনের উপায় কি?

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২২, ১২:০৪ এএম

উত্তর : পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সুন্দর করে গড়ে তুলতে উত্তম চরিত্রের বিকল্প নেই। একজন উত্তম চরিত্রবান লোক চাইলে পুরো সমাজকে বদলে দিতে পারে অল্প সময়েই; কারণ উত্তম চরিত্র মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। এ উত্তম চারিত্রিক গুণ দিয়েই মহানবি (সা.)একটি বর্বর সমাজকে বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ সমাজে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.)এর চরিত্রের প্রশংসায় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’। (সূরা কলাম:৪) হাদিস শরিফে উত্তম চরিত্রকে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ( সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’। (সহিহ বুখারি:৬০৩৫) ইসলাম এমন কিছু আমল বাতলে দিয়েছে,যা উত্তম চরিত্র গঠনে খুবই সহায়ক। সত্যবাদিতা: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) আমাদেরকে যেসব উত্তম চরিত্র অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন,সত্যবাদিতা তার অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সূরা তাওবা: ১১৯)

প্রিয়নবি (সা.)এক হাদিসে ইরশাদ করেন, ‹তোমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে; কারণ সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়।› (জামে আত তিরমিজি:১৯৭১)

আমানতদারিতা : উত্তম চরিত্রের আরেকটি দিক-আমানতদারিতা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন,আমানতসমূহ তার হকদারদের নিকট পৌঁছে দিতে।’(সূরা নিসা: ৫৮)

আর এ গুণের কারণেই মহানবি (সা.) তাঁর সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আল-আমিন উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার : পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা উত্তম চরিত্রের অন্যতম দিক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,›আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। ’ (সূরা নিসা: ৩৬)

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মাতা-পিতার প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে অন্য আয়াতে তিনি তাদের প্রতি দয়া ও বিনয়পূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। আর তা ছিন্ন করা অভিশপ্ত হওয়ার কারণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারা তো ওইসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেছেন।অতপর করেছেন তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন›(সূরা মুহাম্মদ: ২২-২৩)
রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে ইরশাদ করেছেন,›আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।›( সহিহ বুখারি: ৫৮৮৪)

অঙ্গীকার পূরণ করা : অঙ্গকার পূরণের প্রতি ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো;কেননা অঙ্গীকার সম্পর্কে (তোমরা)জিজ্ঞাসিত হবে। ’ (সূরা বনি ইসরাঈল : ৩৪)
তা ছাড়া হাদিস শরিফে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাকে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। (সুনানে নাসায়ি :৫০২০) প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার : প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকটতম প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর প্রতিও। ’ (সূরা নিসা:৩৬)

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জিবরাঈল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে ওসিয়ত করেছিলেন, এমন কি আমি ধারণা করে নিলাম যে, প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন । ’( সুনানে ইবনে মাজাহ:৩৬৭৪)

লজ্জা : লজ্জা আল্লাহ প্রদত্ত বড় নেয়ামত। লজ্জা মানুষকে অনেক পাপাচার থেকে রক্ষা করে।লজ্জা কল্যাণের বাহক। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনে না।’ ( সহিহ বুখারি:৬১১৭)
দয়া ও করুণা : এ মহৎ গুণটি অনেক মানুষের অন্তরেই নেই। অথচ প্রকৃত মুমিন হচ্ছে,দয়াময়, পরোপকারী ও কল্যাণকামী। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সম্প্রীতি ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনদের দৃষ্টান্ত একটি দেহের মতো। যার একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে পুরো দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়।’ (সহিহ বুখারি-৬০১১)
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন!

উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আবুল কাসেম। মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন