শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভোগান্তি কমাবে পদ্মা সেতু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২২, ১২:০৯ এএম

শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে যতায়াতের নানা দুর্ভোগের মুক্তি মিলবে সারা দেশের মানুষের। ফেরি ঘাটের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রাত-দিন কাটানো থেকেও ঘটবে অবসান। এখর অপেক্ষা আর মাত্র ক’টা দিন। যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও সহজ হবে সেতু পথে। সবজিসহ পচনশীল পণ্য দ্রুত পৌঁছাবে রাজধানীতে। পদ্মা সেতু সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের। আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে বিশাল কর্মকাণ্ড। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দুই প্রান্তে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর আদলেই তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। মঞ্চের ঠিক সামনে পানিতে ভাসতে থাকবে বিশাল আকৃতির নৌকা। তার পাশে ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। দেখে মনে হবে সেতুর পাশ দিয়ে বড় একটি নৌকা চলছে। ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের পর ব্যতিক্রমী এ মঞ্চে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

এদিকে, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সড়কপথে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে। পথে কোনো ফেরি না থাকায় বাসে অল্প সময়ের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন যাত্রীরা। বিষয়টি মাথায় রেখে সেবার মান বাড়াতে বাস মালিকরাও প্রস্তুত হচ্ছেন। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে জোর দিচ্ছেন দক্ষিণবঙ্গের বাস মালিকরা। আধুনিক ও বিলাসবহুল নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে অনেক কোম্পানির। এসব কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রী চাহিদা মাথায় রেখে সেতু চালু হওয়ার পরপরই তারা সেবায় আনতে চান নতুনত্ব।

মাদারীপুরের একাধিক পরিবহন মালিক জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে ঢাকা যেতে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে। পথে কোনো ফেরি না থাকায় বাসে অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন যাত্রীরা। বিষয়টি মাথায় রেখে সেবার মান বাড়াতে বাস মালিকেরাও প্রস্তুত হচ্ছেন।
পদ্মাসেতুর কারণে রাজধানী থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাস ভাড়া কমবে। দূরত্ব কমায় কমবে জ্বালানি খরচ, বাঁচবে সময়। আর সময় বাঁচলে যানবাহনের ট্রিপও বাড়বে। তাই ফেরির চেয়ে সেতুর টোল দেড় গুণ হলেও ভাড়া কমবে। যানবাহন পরিবর্তন আর ঝুঁকি নিয়ে নৌকা-লঞ্চে পার হওয়ার ঝক্কিও দূর হবে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরি হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বরিশালের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। ৪০ আসনের নন-এসি বাসে ফেরির টোলসহ ভাড়া ৬২৬ টাকা। ফেরির জন্য অপেক্ষাসহ এ পথে সময় লাগে ৬/৭ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে সায়েদাবাদ থেকে বরিশালের দূরত্ব কমে হবে ১৫৬ কিলোমিটার।

সায়েদাবাদ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বরিশালের ভাড়া ৪২১ টাকা নির্ধারন করেছে বিআরটিএ। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টোল কমানো গেলে ভাড়া কমতো আরো। একইভাবে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে খুলনার দূরত্ব ২৭৩ কিলোমিটার। নন-এসি বাসে এই পথ যেতে ৭/৮ ঘণ্টা সময় লাগায়, ভাড়া ৭৩৭ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে দুরত্ব কমবে ৭০ কিলোমিটার, সময় তো বাঁচবেই। মাওয়া-জাজিরা পথে বাস থেকে নেমে যাত্রীরা এখন পার হন লঞ্চ বা নৌকায়। এতে করে নদী পার হতেই সময় লাগে ঘণ্টা দেড়েক। খরচও অনেক। দুর্যোগে প্রায়ই বন্ধ থাকে এই পথ। সব প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটবে পদ্মা সেতু চালু হলে।

২০২৭ সালে জিডিপির ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ অবদান থাকবে পদ্মা সেতুর। এমন তথ্য জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত। তিনি বলেছেন, ২০২৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার হবে ৬৩ লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৬ লাখ কোটি টাকা হবে দক্ষিণাঞ্চলের কারণে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের বিষয়। এটি শুধু সেতুই নয়, পদ্মা সেতু হবে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এই সেতুর ফলে আমাদের জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে, এই স্থাপনার কারণে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে তিন গুণ অর্থ যোগ হবে বলে হিসাব দেখিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির একজন বিশেষ ফেলো।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনে খুশি বাংলাবাজার ঘাট এলাকার বাসিন্দারা। তারা দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন। তরা জানান, পদ্মা সেতু না থাকায় ঘাটে ফেরি পারাপারে আসা অ্যাম্বুলেন্সে বহু মানুষকে যথা সময়ে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করতে না পারায় চোখের সামনে মরতে দেখেছেন। অনেক কষ্টে ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ। এখানে আর সেই কষ্ট থাকব না। দেশে উন্নয়ন হবে। এটা মহা আনন্দের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন