শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জিডিপি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিমত

প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চলতি এবং আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৭ ভাগ ও ৮ ভাগ জিডিপি অর্জন করবে বলে সরকার মনে করলেও বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে একমত নয়। সংস্থাটির মতে, জিডিপি ৭ ভাগের নিচে থাকবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন বিশ্বব্যাংকের ধারণা বাস্তবভিত্তিক। ৮ ভাগ জিডিপি অর্জন অসম্ভব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল হকও মনে করেন, বিশ্বব্যাংকের ধারণাই যুক্তিসম্মত। জিডিপি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ তিনি দেখছেন না। তার মতে, প্রায় এক যুগ ধরে ৬ প্লাসে আটকে রয়েছে। তিনি আরো মনে করেন, জিডিপিসংক্রান্ত সরকারি ডাটা প্রশ্নবোধক। এটি গত বছরের তুলনায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ ভাগ জিডিপি অর্জন করতে হলে জিডিপিতে বিনিয়োগ অবশ্যই ৩৫ থেকে ৩৬ ভাগ হতে হবে। উচ্চ জিডিপি হারের জন্য প্রাইভেট সেক্টরের উন্নয়ন এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টির যে সম্পর্ক রয়েছে সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান খুব ভালো নয়। যদিও অর্থমন্ত্রী মনে করেন, বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ সব সময়ই বাংলাদেশের জিডিপি কম হওয়ার কথা বলে আসছে। আমরা লক্ষ্য অর্জন করব বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সকালের সূর্য দিনের পূর্বাভাস দেয় বলে যে কথা চালু রয়েছে তার সূত্র ধরেই বলা যায়, বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা হলে ভালো হতো। তবে তা সম্ভব কিনা সে প্রশ্ন এখন উঠছে। প্রথমত, বলা যায় সরকার যে পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে জিডিপির কথা বলছে, তা যে প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলক নয় সে কথা অনেক আগেই বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে। সে বিবেচনায় হয়ত কাগজে-কলমে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে, বাস্তবে নয়। এটা এক ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকির মতো। বলাবাহুল্য, পরিসংখ্যানে সব সময় সঠিক চিত্র প্রতিফলিত হয় না। এর বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল কথা বলছে তা হলো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আস্থা অর্জন করতে পারছেন না। এর আগে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞারা সুস্পষ্ট অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, বিনিয়োগ বসে থাকে না। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ায় মিয়ানমারে বিনিয়োগকারীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। এর আগে পোশাক শিল্পের মালিকদের বাংলাদেশের বাইরে কারখানা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। দেশে কর্ম-সংস্থান পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে সেকথাও নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির প্রধান দুটি খাত জনশক্তি রফতানি ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবস্থাও নাজুক। এই দুই খাতের প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। জনশক্তি রফতানি তেমন একটা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে ইতোমধ্যেই রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থা আরো নাজুক হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তেলের দাম সমন্বয় করে বিনিয়োগের সম্ভাবনার যে আলোচনা করে আসছিলেন কার্যত সেদিকেও সরকারের কোনো নজর নেই। দেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অঙ্কের হিসাবে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। এ খাতকে এখন পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই শঙ্কামুক্ত করা যায়নি। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও কমে গেছে। গত ৬ মাসে ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে যে অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। পদ্মাসেতু, চার লেন বা এ ধরনের যেসব উন্নয়নকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে তার প্রভাব ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা পড়বে বলে আশা করা হলেও সার্বিক পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত মাত্রায় নেই।
উন্নয়ন দৃশ্যমান হতে হয়। কথা দিয়ে উন্নয়ন হয় না। এজন্য বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জিডিপি নিয়ে রাখঢাক করার কিছু নেই। বরং এ ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করা ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আন্তরিক হওয়াই বাস্তবসম্মত। বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভানার কথা নতুন করে আলোচনা করার কিছু নেই। একে কাজে লাগাতে কী করতে হবে তা নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক যেসব কথা বলছে, তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে না দিয়ে এসব আলোচনার মধ্যে যে সারবস্তু রয়েছে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া এবং প্রকৃত সমস্যার সমাধানে আন্তরিক হওয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন