বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যার্তদের সাহায্য করা মহান ইবাদত

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

বন্যাদুর্গত এলাকার লাখো মানুষ ক্ষুধা পিপাসা অভাব-অনটনে আজ জর্জরিত। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা সকল পর্যায়ের নাগরিকের ঈমানি এবং নৈতিক দায়িত্ব। বন্যার্তদের সাহায্য করা এক মহান ইবাদত। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর অধিকাংশ মসজিদগুলোতে জুমার বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে তাদের সহায়তায় সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। নগরীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন। গতকাল জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে খুৎবা-পূর্ব বয়ানে তিনি এ আহ্বান জানান। আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, বলা মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। বন্যাও তেমনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য পরীক্ষা। এ সময় অধৈর্য না হয়ে বেশি বেশি আল্লাহ কাছে তওবা করতে হবে। আল্লাহ কোরআনে ইরশাদ করেছেন, পানিতে এবং স্থলে যে ক্ষতি ছড়িয়ে পড়েছে এগুলো তোমাদের হাতের কামাই। অর্থাৎ বন্যাসহ যা কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহ আমাদের দেন এগুলো সব আমাদের কৃতকর্মের ফল। খতিব বলেন, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লাবিত হয়ে মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয় সঙ্কট, আবাসন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়াসহ নানা সঙ্কটে পানিবন্দি মানুষগুলো। এমতাবস্থায় আমাদের দায়িত্ব যার যে পরিমাণ সামর্থ আছে তা নিয়ে পানিবন্দি মানুষগুলোর সহযোগিতা করা। আল্লাহ ঘোষণা করছেন, তোমরা যা কিছু দান করো তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কর; আর যা কিছু দান করো তার পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। এ জন্য আমরা সকলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার দেয়া মাল থেকে পানিবন্দি মানুষের সহযোগিতা করব। ইনশাআল্লাহ।

ঢাকার শেওড়াপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি বলেন, সিলেট সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা বন্যার পানিতে মারাত্মকভাবে প্লাবিত, তাদের বসত ঘরবাড়ি, জমিজামা, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখো মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ ক্ষুধা পিপাসা অভাব অনটনে আজ জর্জরিত। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা সকল পর্যায়ের নাগরিকের ঈমানী এবং নৈতিক দায়িত্ব। বন্যার্তদের সাহায্য করা মহান ইবাদত।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে অসহায় মানুষের সাহায্য করার অনেক ফযিলত এবং সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে “সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা মায়েদা,০২)। আল্লাহ আমাদের সকলকে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার তৌফিক দান করুন। আমীন।

ঢাকা গাউসিয়া মার্কেট জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া বলেন, আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা আলে ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে যারা কা’বা ঘরে যাওয়ার সামর্থ আছে তার জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা অবশ্য কর্তব্য বা ফরয। এবং যদি কেউ অস্বীকার করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসী হতে প্রত্যাশামুক্ত।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী বলেন, অভাবী, দুর্দশা ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্যে করা সওয়াবের কাজ। নফল ইবাদাত থেকেও উত্তম আমল। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম উপায়। খতিব বলেন, ভয়াবহ বন্যায় বৃহত্তর সিলেটের মানুষ চরম বিপর্যস্থ ও বিপদগ্রস্ত। দুঃখ দুর্দশায় নিপতিত। ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল সব কিছু হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। অনাহারে, অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন তারা। জীবন বাঁচাতে এক মুঠো ত্রাণের জন্য যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তা চোখে দেখার মতো নয়। এইসব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক, মানাবিক ও ঈমানি দায়িত্ব। তাই আসুন আমরা সকলে এই বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের সহযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে আসি। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করেন। আমিন।

ঢাকার লালমাটিয়া মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা বলেন, বানভাসি বন্যার্তদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, আল্লাহ তোমাদের ঈমানী পরীক্ষা নেন বিভিন্ন ধরনের মুসিবত দিয়ে আর এসব মুসিবতে তারাই কামিয়াব হন যারা ধৈর্য ধারণ করেন ও ঈমানের ওপর অবিচল থাকেন। অপরদিকে যাদের ওপর মুসিবত আসেনি তারা বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান কিনা তাদেরও ঈমানি পরীক্ষা নেন। আজ লাখো মানুষ বন্যার কবলে পড়ে সহায় সম্পদহারা হয়ে না খেয়ে কাতরাচ্ছে। তারা পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন আমাদের ঈমানি দায়িত্ব হলো যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। আসুন আমরা সকলেই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেন, বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে বিপুল সংখ্যক অসহায় মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন; আল্লাহ খুশি হবেন। শুধু নামাজ, রোজাসহ অন্যান্য বিধিবদ্ধ ইবাদত পরকালে নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়। যারা সমাজের অসহায় বন্যাদুর্গত গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ায় না; তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) কাছে কখনোই প্রিয়ভাজন হতে পারবে না। বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা অনেক সওয়াবের কাজ। নগদ টাকা পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা ঈমানি দায়িত্ব ও নববী আদর্শ। খতিব আরও বলেন, খেদমাতে খালক্ব বা সৃষ্টির সেবা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান ও ইবাদত। এ ব্যাপারে ত্রুটি হলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। তাই যে যেখানেই আছেন; সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেন। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ‘সূরা কসাস’ এর ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ কর (সাদক্বাহ বা যে কোনো উপায়ে) যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন