বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কয়েক হাজার কৃষক পরিবারে নীরব কান্না

পানিবদ্ধতায় সহস্রাধিক একর জমিতে আমন হয়নি

আবদুল হালিম দুলাল, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মঠবাড়িয়া উপজেলায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে সহস্রাধিক আবাদি জমিতে আমন আবাদ না হওয়ায় ভুক্তভোগী কয়েক হাজার কৃষক পরিবারে নীরব কান্না চলছে। সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধ জমি উপজেলার মিরুখালী ও ধানী সাফা ইউনিয়নে। ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য জলাবদ্ধ জমিতে জন্ম নেয়া কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কার করতে কৃষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। জানা যায়, বেড়িবাঁধ না থাকা এবং অপরিকল্পিতভাবে বেড়িবাঁধ, শাখা খালে বাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণের কারণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে প্রতিবছর সহস্রাধিক আবাদি জমি জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকরা আমন আবাদ করতে পারছে না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মিরুখালী ও ধানী সাফা ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম। গ্রামসমূহ হলো মিরুখালী ইউনিয়নের ছোট শৌলা, বড় শৌলা, উত্তর মিরুখালী, ওয়াহেদাবাদ, দেবীপুর, বাঁশবুনিয়া, পশ্চিম মিরুখালী, বাদুরা, ভগিরথপুর ও ঘোপখালী এবং ধানী সাফা ইউনিয়নের পূর্ব ধানী সাফা ও তেতুলবাড়িয়া। উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্র মতে, উপজেলায় মোট অনাবাদি জমির পরিমাণ এক হাজার একর। তবে কৃষকদের দাবি মিরুখালী ও ধানী সাফা ইউনিয়নেই অনাবাদি জমি আছে প্রায় এক হাজার একর। আমুয়া-মিরুখালী-ধানী সফা খালের উত্তর পারে বেড়িবাঁধ না থাকা এবং কয়েকটি শাখা খালে বাঁধ দেয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন না হতে পারা এই ২ ইউনিয়নের জলাবদ্ধাতার কারণ। সরেজমিন দেখা গেছে, আমন আবাদ না করতে পেরে ইরি-বোরো চাষের জন্য জলাবদ্ধ জমির আগাছা পরিষ্কার করতে মোটা অংকের টাকা ব্যয় হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় পেলে কৃষকরা তাদের নিকট ভিড় করে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বর্ণনা করছেন। ঘোপখালী গ্রামের মোবারক আলী তালুকদারের (৮৫) নাতী মো. বোরহান তালুকদার জানান, তাদের প্রায় ১৪ একর জমিতে আমন আবাদ হয়নি। একই গ্রামের বাবুল তালুকদার (৪৫) ও আনেচ তালুকদার (৫৫)-এর প্রায় ৬ একর জমি অনাবাদি আছে। বড় শৌলা গ্রামে জমির কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কার রত মো. ইউনুচ তালুকদার (৫০) জানান, আগাছা পরিষ্কার করতে একর প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। একই গ্রামের আঃ সোবাহান হাওলাদার জানান, ইরি-বোরো ধান আবাদের জন্য আগাছা সাফ এবং জমি চাষে একর প্রতি প্রায় ১৭/১৮ হাজার টাকা ব্যয় হবে। একরে ২০ হাজার টাকার ধান ঘরে আসবে না। তাই অধিকাংশ কৃষক ইরি-বোরো আবাদ করবে না বলে তিনি জানান। জলাবদ্ধতায় ভুক্তভোগী উত্তর মিরুখালী গ্রাম নিবাসী, খুলনা মেট্রপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. মো. জাকির হোসেন জলাবদ্ধতা নিরসনে মিরুখালী বাজার থেকে ধানী সাফা বাজার পর্যন্ত খালের উত্তর পারে (৮ কিলোমিটার) বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং মিরুখালী-ঘোপখালী খাল, ধোপার খাল, ডাক্তার বাড়ি খাল, তেুল বাড়িয়ার খাল, দেবীপুর খাল, ভগিরথপুর বাজার খাল ও তোফেল হাওলাদার বাড়ির সামনের খালে দ্রুত স্লুইচগেট নির্মাণের দাবি জানান। তিনি উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামান জানান, জলাবদ্ধতার সমস্যাটি কৃষি মন্ত্রণালয় অবগত আছে। ডিজি অফিসের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করে রিপোর্ট পেশ করেছি। এখন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় আছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন