শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

উপজেলায় ক্লিনিক বন্ধ হলেও নগরে তেমন প্রতিফলন নেই

ময়মনসিংহে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান

মো. শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

অনিবন্ধিত ক্লিনিক, ডায়াগনোষ্টিক ও হাসপাতালে অনিয়ম বন্ধে ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযানে জেলায় মোট ৬৭টি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার বন্ধ করা হলেও ময়মনসিংহ নগরীতে বন্ধ হয়েছে মাত্র ৯টি। অথচ বেসরকারি হিসেবে ময়মনসিংহ নগরীতে ক্লিনিক, ডায়াগনোষ্টিক ও হাসপাতাল রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক। এর মধ্যে বেশির ভাগই অনিবন্ধিত এবং নবায়ন নেই বলে জানান সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
তবে সরকারি তালিকায় এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ১৯২টি। এর মধ্যে ৪৩টির নিবন্ধন নেই বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জনসংশ্লিষ্ট সূত্র। ফলে ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের চলমান অভিযানের এই কার্যক্রমকে ‘বাতির নিচে অন্ধকার’ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
তাদের ভাষ্য, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার বন্ধ করা হলেও নগরীতে এর প্রতিফলন নেই।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত জেলায় ১৪১টি ক্লিনিক, ডায়াগনোষ্টিক ও হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে নবায়ন ও নিবন্ধন না থাকাসহ নানা অনিয়ম-অভিযোগে বন্ধ করা হয়েছে মোট ৬৭টি। এছাড়াও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড করা হয়েছে মোট এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অভিযানের এই পরিসংখ্যানের মধ্যে শুধু নগরীতে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে বলে দাবি করলেও অর্থদণ্ড হয়েছে মাত্র ৬টির এবং বন্ধ হয়েছে ৯টি।
তবে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে শুধুমাত্র রেঁনেসা হাসপাতাল ব্যতিত বন্ধ করে দেওয়া সবক’টি প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, নগরীর তিন শতাধিক ক্লিনিক, ডায়াগনোষ্টিক ও হাসপাতালের মধ্যে বেশির ভাগের নেই নবায়ন। অনেকের নেই নিবন্ধনও। নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার ও টেকনোলজিষ্ট। অথচ দাপটের সাথেই প্রভাব বিস্তার করে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ উঠেছে, নবায়ন হয়নি নগরীর চরপাড়া এলাকার সিরাম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনোষ্টিক সেন্টারের। একই অবস্থা ল্যাবএইড হাসপাতাল, আইডিয়াল ও রেজিয়া ক্লিনিকের। অভিন্ন অবস্থা নগরীর কফিক্ষেত এলাকার সীমান্ত হাসপাতালের। দুর্গন্ধময় নোংরা অবস্থায় চিকিৎসা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় লিবার্টি হাসপাতাল শত শত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসলেও তাদের অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা অনুযায়ী দশ শয্যার ক্লিনিক ও হাসপাতালের বাৎসরিক নবায়ন ফি পঞ্চাশ হাজার টাকা। কিন্তু বেশ কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান অধিক সংখ্যাক শয্যা নিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও তারা মানছে না এই নীতিমালা। এতে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রেণী বিন্যাস কাঠামোতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলেও দাবি একাধিক মালিক পক্ষের।
এছাড়াও ময়মনসিংহের আলোচিত-সমালেচিত শিলাঙ্গন হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, রোগীর জরায়ু কেটে ফেলাসহ নানা অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতিরও অভিযোগ উঠেছে।
এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযানে তদবির-সুপারিশ প্রতিবন্ধকতা আছে, তারপরও স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে যেতে চাই। তিনি বলেন, এ জেলার ১৩টি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান। ইচ্ছে থাকলেও সব কাজ করা সম্ভব হয় না। আমাদের জনবল কম, তবুও উপজেলা থেকে একজন ডাক্তার এনে মোট ৫ সদস্যের একটি টিম এই অভিযানে কাজ করছে। এছাড়াও অধিদপ্তর থেকে ৩ সদস্যের একটি কমিটিও এই অভিযানে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা.শাহ আলম বলেন, সিলাগালা বা বন্ধ করে দেওয়া কোন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ময়মনসিংহে বিভাগে ৩২৭ টি ক্লিনিক, ডায়াগনোষ্টিক ও হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ১৯৭টি এবং ৪৭টি প্রতিষ্ঠানে নানা অসঙ্গতির কারণে জরিমানা করা হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। সেই সাথে ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে নানা অসঙ্গতির কারণে নোটিশ প্রদান করে সর্তক করা হয়েছে বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা। তবে এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হবে বলেও জানিয়েছেন ডা. শাহ আলম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন