শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

যুদ্ধাস্ত্রের বিস্তার ঘটছে মহাকাশে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র হচ্ছে, পরমাণু বোমা। এটি ব্যাপক ধ্বংসাত্মকও। তাই এই বোমার মালিক যারা যত বেশি, তারা তত শক্তিশালী। সিপ্রি’র তথ্য মতে, এ পর্যন্ত পরমাণু বোমার অধিকারী দেশ ও সংখ্যা হচ্ছে: রাশিয়ার-৬৩৭৫টি, আমেরিকার-৫৮০০টি, চীনের-৩২০টি, ফ্রান্সের-২৯০টি, যুক্তরাজ্যের-২১৫টি, পাকিস্তানের-১৬০টি, ভারতের-১৫০টি, ইসরাইলের-৯০টি, উত্তর কোরিয়ার-৩০-৪০টি। এছাড়া আরো কিছু দেশ পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে এই মারণাস্ত্র বহনে সক্ষম দ্রুতগামী বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিরও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা চলছে। এর সর্বশেষ ও সর্বাধিক গতির ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে, রুশ হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র আরএস-২৪ ইয়ারস। এর গতি শব্দের গতির চেয়ে ৫-৭ গুণ বেশি। ওজন ৪৯.৬ টন ও গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪.৫ হাজার কিমি। এটা একসঙ্গে ১০টি পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম। এর প্রায় কাছাকাছি হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে চীন ও আমেরিকার। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে মাঝারি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে প্রায়ই। ফলে সম্মুখযুদ্ধের দিন শেষ হয়ে আসছে। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু যুদ্ধ। সুইচ টিপলেই পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যস্থলে আঘাত হেনে সব কিছু ধ্বংস করে দেবে। এটা স্থলের ন্যায় পানিতেও হচ্ছে। তাই সর্বাধুনিক সাবমেরিন তৈরিরও প্রতিযোগিতা চলছে। আবার সেই সাবমেরিন ধ্বংস করার যন্ত্রও আবিষ্কার হচ্ছে। সম্প্রতি রাশিয়া এ ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। গত ৬ মে প্রশান্ত মহাসাগরে মোতায়েন রুশ ‘ওটভেট’ সাবমেরিন বিধ্বংসী ব্যবস্থা থেকে জাপান সাগরে সাবমেরিন বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ওটভেটে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে রয়েছে বিশেষ টর্পেডো। প্রথমে পানির ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি উড়তে থাকে। লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি পৌঁছার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র থেকে প্যারাসুটসহ বেরিয়ে আসে টর্পেডো। এরপর পানির নিচে লক্ষ্যবস্তুকে বের করে তাতে আঘাত হেনে ধ্বংস করে দেয়। এতে ‘ওনিক্স’ ও ‘কেলিবর’ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা যায়। চীনের ‘ফনতৌচ্য’ ডুবো-গবেষণা জাহাজ মারিয়ানা ট্রেঞ্চে এখন পর্যন্ত ২১ বার সমুদ্রের গভীরে ড্রাইভ দিয়েছে। এর মধ্যে একবার ১০ হাজার মিটার গভীরে। এসব সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি বৃদ্ধির কারণে সামরিক ব্যয়ও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিস নিউক্লিয়ার উইপনস এর বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২ মতে, বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ ২০২১ সালে তাদের অস্ত্র পরিমার্জন করতে ৮২.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮% বেশি। অপরদিকে, গত ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদন মতে, ‘২০২১ সালে টানা সপ্তম বছরের মতো বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় বেড়ে ২.১০ লাখ কোটি ডলার হয়েছে। এর আগে কোনো এক বছরে দেশগুলোর যৌথ ব্যয় এত বেশি হতে দেখা যায়নি।

পৃথিবী যে ছায়াপথের সদস্য তার নাম আকাশগঙ্গা। তাতে অসংখ্য গ্রহ ও নক্ষত্রের অবস্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সূর্য, চাঁদ, বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, ইউরেনাস, নেপচুন প্রভৃতি। এছাড়া, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক বিরাট ছায়াপথের সন্ধান পেয়েছেন। তার নামকরণ করা হয়েছে ‘অ্যালসিওনিয়াস’। এর ব্যাস আকাশগঙ্গার চেয়ে ১৬০ গুণ বেশি এবং প্রস্থের পরিমাপ ১.৬৩ কোটি আলোকবর্ষ! এর আগে বৃহত্তম ছায়াপথ-আইসি ১১০১ এর সন্ধান মিলেছিল, যার বিস্তার ছিল ৩৯ লাখ আলোকবর্ষ। পৃথিবী থেকে ‘অ্যালসিওনিয়াস’-এর দূরত্ব প্রায় ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ। এর থেকেও ‘অ্যালসিওনিয়াস চারগুণ বড়। অপরদিকে, মহাকাশে পরীক্ষার চালানোর জন্য আবিষ্কার করা হয়েছে অনেক মহাকাশ যান। তাতে কখনো মানুষ যাচ্ছে। কখনো মনুষ্যবিহীন চলাচল করছে। তাতে থাকছে অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ, যার মাধ্যমে ছবি তুলে পৃথিবীতে আসছে এবং তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। তদ্রুপ মহাকাশযান ভয়েজার ১ এখন পৃথিবী থেকে ২,৩৩০ কোটি কিমি দূরে অবস্থান করছে। ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এটি পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরুর পর ২০১৮ সালে সৌরজগতের প্রান্তসীমা ছাড়িয়ে যায়। বিশাল এই পথ পাড়ি দেওয়ার পরও এটি এখনও সঠিকভাবে কাজ করছে। নাসা থেকে বিজ্ঞানীরা যে কমান্ড দিচ্ছেন ভয়েজার ১ তা গ্রহণ করছে ও সে অনুযায়ী কাজ করছে। এরপর তথ্য সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতেও পাঠাচ্ছে। অপরদিকে, সূর্যের সবচেয়ে নিকটে যেতে পেরেছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মহাকাশযান- সোলার অরবিটার। সেখান থেকে ছবি তুলে পাঠিয়েছে গত ২৬ মে। তাতে সূর্যের মেরুপ্রদেশে এক রহস্যময় বিষয় আবিষ্কার হয়েছে। এই মুহূর্তে সূর্যের নিকটতম গ্রহ- বুধের কক্ষপথের মধ্যে রয়েছে সোলার অরবিটার। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের এক-তৃতীয়াংশ দূরে সেটি। যানটির বাইরের অংশে লাগানো রয়েছে তাপ প্রতিরোধকারী শিল্ড। তাতে ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। যদিও প্রযুক্তির কল্যাণে ভিতরের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলো ছিল একেবারে ঠাণ্ডা। সূর্যের ‘স্বরূপ’ বুঝতে বহুদূর পাড়ি দিয়েছে এটি। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘হেজহগ’। এক্সট্রিম আল্ট্রা-ভায়োলেট ইমেজিং যন্ত্রের সাহায্যে তোলা হয়েছে হেজহগের ছবি। সূর্য থেকে অন্তত ২৫ হাজার কিমি পর্যন্ত প্রসারিত হেজহগের লেলিহান শিখা। সূর্যের ব্যাস প্রায় ১৩.৯২ লাখ কিমি, যা পৃথিবীর ব্যাসের ১০৯ গুণ ও এর ভর পৃথিবীর ভরের ৩.৩০ লাখ গুণ বেশি। সূর্যের প্রধান গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন। আসলে মোট ভরের তিন- চতুর্থাংশই হাইড্রোজেন। এর পরেই সবচেয়ে প্রাচুর্যময় মৌল হিলিয়াম। সূর্যে আরও কত রহস্য লুকিয়ে আছে তা জানতেই মহাশূন্যে পাড়ি দিয়েছে সোলার অরবিটার। অপরদিকে, গত ১০ বছরে চীনের মহাকাশ ও রকেট প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে। মহাকাশ স্টেশন ছোট ঘর থেকে বিশাল, আরামদায়ক ও কার্যকর হয়েছে। উপরন্তু চীন মহাকাশ স্টেশনে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেছে। সেখান থেকে শেনচৌ ১৩ মহাকাশযানের নভোচারীরা ক্লাস নিচ্ছেন, যাতে মহাকাশের জীবনযাত্রার বর্ণনা করা হচ্ছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে চীনের শিক্ষার্থীরা সে পাঠ গ্রহণ করছে। স্পেসএক্স ২০৫০ সালের মধ্যে ১ মিলিয়ন মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছে। অপরদিকে, যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নক্ষত্র থেকে এনার্জি সংগ্রহ করে জ্বালানির ব্যবস্থা করার পরীক্ষায় তারা সফল হয়েছে, যার নামকরণ করা হয়েছে নিউক্লিয়ার ফিউশন এনার্জি। এটি কার্বনমুক্ত জ্বালানি। এই নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়াতেই সূর্য তার তাপমাত্রা বজায় রাখে। অর্থাৎ এনার্জি তৈরি করে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছেএবং তা পৃথিবীর বাইরে গ্রহ-নক্ষত্রের দিকে প্রসারিত হচ্ছে। মহাকাশবিজ্ঞানীদের ঠিকানা হলো -আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা ও ইইউ’র মহাকাশ সংস্থার যৌথ প্রকল্প)। এটি ১৯৯৮ সাল থেকে এখনো জায়গামতো বহাল আছে এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত থাকবে। এরপর ২০৩১ সালের জানুয়ারিতে ভেঙে পড়বে পৃথিবীতে। এছাড়া,অনেক দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রয়েছে। তন্মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাসা, রাশিয়ার রসকসমস, চীনের এনএসএ, ইইউয়ের ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি অন্যতম। এ সংস্থাগুলো চাঁদে, মঙ্গলে, সূর্যে যাওয়ার ও সেখানে আবাস গড়ে তোলার প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এছাড়া, অনেক দেশের মহাকাশযানও রয়েছে। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েজার ১ ও ২ এবং ড্রাগন, রাশিয়ার সয়ুজ, চীনের ল্যান্ডার ও অ্যাসেন্ডার ইত্যাদি। মহাকাশ টেলিস্কোপের অন্যতম হচ্ছে হাবল, কেপলার, অরবিটার, জেমস ওয়েব ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানও পিছিয়ে নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান চাঁদে ও মঙ্গলে যাওয়ার দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করে টিকেট বিক্রি শুরু করেছে।এমনকি চাঁদে ও মঙ্গলে জমি কেনা-বেচাও শুরু হয়েছে। গ্রহ-নক্ষত্রে মানুষ বাস করলে সেখানে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য শস্য উৎপাদন করা যাবে কি-না তারও সফল পরীক্ষা হয়েছে। এ ব্যাপারে গত ২৬ এপ্রিল চীন বেতারে প্রকাশ, চীনের শেনচৌ-১৩ মহাকাশযান সম্প্রতি পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। এ যান মহাকাশচারীদের পাশাপাশি একদল ‘ছোট’ সদস্যকেও ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ’ ভ্রমণ করিয়ে ফিরিয়ে এনেছে পৃথিবীতে। এরা হচ্ছে বিভিন্ন উদ্ভিদের ১২ হাজার বীজ। মহাকাশে অবস্থানকালে মহাজাগতিক রশ্মির বিকিরণের কারণে বীজগুলোর জিনের ক্রম পরিবর্তন হবে। রং, ফলের আকার, আকৃতি, স্বাদ, ফলন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কিছুটা ভিন্নতা পাবে। ১৯৮৭ সালে চীন প্রথমবারের মতো মহাকাশে উদ্ভিদের বীজ পাঠায়। প্রায় ৩০ বার মহাকাশে বীজ পাঠানোর পর চীনের মহাকাশ প্রজনন ব্যবসা নতুন উপকরণের এক হাজারেরও বেশি কপি স্ক্রিন করেছে এবং ২৬০টিরও বেশি নতুন জাতের ধান, গম, সয়াবিন, শাকসবজী চাষ করা হয়েছে। এলাকাটি ২৪ লাখ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি নিয়ে গঠিত। বর্তমানে মহাকাশ প্রজননের অনেক পরিপক্ক জাত সাধারণ মানুষের টেবিলে আসছে।চীন এসব বীজকে স্বর্গীয় বীজ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে, অ্যাপোলো ১১, ১২ ও ১৭ অভিযানে চাঁদ থেকে আনা মাটিতে গাছ অঙ্কুরিত ও বেড়ে উঠেছে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায়। এটি কমিউনিকেশন বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাচা মরিচ রোপন করা হয়েছে। সেখানে মরিচ ধরে বড় হয়েছে এবং নভোচারীরা খেয়েছেন।

মহাকাশে পরিষেবা খাতও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর অন্যতম হচ্ছে-স্যাটেলাইট। বর্তমানে মহাকাশে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট রয়েছে। এছাড়া, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ও জ্বালানি কার্যক্রমও রয়েছে। সিটি গ্রুপ গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, পৃথিবীর কক্ষপথে সম্প্রসারণ হচ্ছে প্রযুক্তি। সুযোগ তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভাবনের। কমছে উৎক্ষেপণের খরচ। আশা দেখাচ্ছে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ও উৎপাদনের মতো কার্যক্রমেরও। ফলে বাড়ছে মহাকাশ শিল্পের বাজার। ২০৪০ সালের মধ্যে মহাকাশ শিল্পের বার্ষিক আয় ১ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছবে। এর আগে মরগান স্ট্যানলি, ব্যাংক অব আমেরিকার প্রতিবেদনেও এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে, সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, সিটি গ্রুপের আশাবাদী পূর্বাভাস সত্ত্বেও এ শিল্পের অনেক কিছুই এখনো অনুমান নির্ভর রয়েছে। যেমন: মহাকাশ ভিত্তিক সৌরশক্তি, চাঁদ বা গ্রহাণুতে খনি, মহাকাশে সরবরাহ চেইন বা কার্গো পরিবহন, মহাকাশ পর্যটন, আন্তঃনগর রকেট ভ্রমণ, মাইক্রোগ্র্যাভিটি ও নির্মাণ খাত। অবশ্য, মহাকাশে উৎক্ষেপণ ব্যয় ১৯৮০ দশকের চেয়ে বর্তমানে প্রায় ৪০ গুণ কমেছে। ফলে ১ লাখ কোটি ডলারের মহাকাশ অর্থনীতি তৈরি হবে। যার একটি খাত স্যাটেলাইট ছবি। বর্তমানে যার অবদান প্রায় ২% বা ২৬০ কোটি ডলার। ২০৪০ সাল নাগাদ এ থেকে বার্ষিক ১,৭০০ কোটি ডলার আয় আসবে। এছাড়া, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের বাজারও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইলোন মাস্কের স্টার লিংকের সেবা পাবে বাংলাদেশ ২০২৩ সালে। ৯৯ ডলারে প্রি-অর্ডারে এ সুযোগ পাবে গ্রাহক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনের কিছু অংশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশে স্টার লিংকের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু রয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে চালু হবে ব্রাজিল, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে। সমুদ্রে ভাসমান বিলাসবহুল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ শিপেও স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যুক্ত হবে। বর্তমানে এই শিপে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, যার ডাউন লোড স্পিড ৩-৫ মেগাবিটস পার সেকেন্ড। স্পেসএক্সের ইন্টারনেট নিলে তাদের ডাউন লোড স্পিড দাঁড়াবে ২৫০ মেগাবিটস পার সেকেন্ড। চলন্ত যানবাহনে ইন্টারনেট সেবা পেতে হলে প্রতি মাসে গ্রাহকদের খরচ হবে ১৩৫ ডলার- গ্যাজেটস নাউ। স্টার লিংক এ পর্যন্ত ২,৩৮৮টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। ২০২৭ সালের মধ্যে আরো ৪২ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে। তখন প্রত্যন্ত এলাকায় ফাইভজি ও ফাইবারের বিকল্প হয়ে উঠবে স্টার লিংক। সংস্থাটির সাবস্ক্রিপশন নিলে গ্রাহককে একটি স্যাটেলাইট ডিশ ও রাউটার দেওয়া হবে। এরপর সেগুলো গ্রাহকের বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। স্টারলিঙ্ক মঙ্গল গ্রহেও ইন্টারনেট সরবরাহ করতে চাইছে।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এই উন্নতির প্রেক্ষিতে গরিব ও উন্নয়নশীল দেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন: বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে সারা বিশ্বেই। দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশে সিঙ্গাপুর থেকে দু’বার সাবমেরিন ক্যাবল নিতে এবং সারাদেশে ইন্টারনেটের সংযোগ স্থাপন করতে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু স্টার লিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সংযোগের কারণে সেসব ব্যয় জলাঞ্জলি যাবে।তবুও নিতে হবে। কারণ, স্টার লিংকের স্যাটেলাইটের ইন্টারনেটের সংযোগ, আকাশে, সমুদ্রে, গহীন অরণ্যে, পাহাড়ে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথা দেশের সর্বত্রই পাওয়া যাবে বিনা তারে। উপরন্তু গতিও সর্বোচ্চ। এরূপ উপকারিতা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সব ক্ষেত্রেই। তাই যে দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহার যত বেশি হবে, সে দেশের উন্নতি তত হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Ripon Ahmed ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৫৮ এএম says : 0
মানুষ নিজেই পৃথিবীকে বসবাস অযোগ্য করে তুলছে।
Total Reply(0)
Antara Afrin ৩০ জুন, ২০২২, ৫:৫৮ এএম says : 0
মানুষের হাতেই সভ্যতা ধ্বংস হবে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন